ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

কর্মস্থলে না থাকলে, সেবা না দিলে চিকিৎসক-নার্সদের ওএসডি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৯
কর্মস্থলে না থাকলে, সেবা না দিলে চিকিৎসক-নার্সদের ওএসডি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: কর্মস্থলে না থাকলে এবং সেবা না দিলে চিকিৎসক ও নার্সদের ওএসডি করে রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রয়োজনে তাদের চূড়ান্তভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ারও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। 

রোববার (২৭ জানুয়ারি) সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সব জেলায় সার্ভে করে দেখবেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এটা করতে হবে- কতো রোগী সেখানে যাচ্ছেন, ডাক্তাররা সেখানে থাকছেন না কেন? যেসব ডাক্তারকে সেখানে বদলি করা হয়, তারা যদি কাজ না করেন ওএসডি করে রেখে দিতে হবে, তাদের দরকার নেই। নতুন ডাক্তার দিতে হবে।
সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, নার্সদের ব্যাপারে, তাদের সম্মান দিয়েছি, রোগীর সেবাটা তাদের করতে হবে, এটা বাধ্যতামূলক। না করলে সে চাকরিতে থাকবে না, সে চলে যাবে। অনেক প্রাইভেট জায়গা আছে, কাজের অসুবিধা হবে না। আমরা আবার নতুনদের ট্রেনিং করিয়ে নিয়ে আসবো। লোকেরও অসুবিধা নেই আমাদের।
 
সব সরকারি হাসপাতালে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করে চিকিৎসকদের হাসপাতালে উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

নার্সদের সর্তক করে শেখ হাসিনা বলেন, এই মাত্র আমি যে কথাটা শুনলাম সেটি সত্যি অত্যন্ত দুঃখজনক যে তারা দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে চাকরি পেলো বলে রোগীদের সেবা দেবে না। এটা তো তাদের কাজ না। যারা এই ধরনের মানসিকতা নিয়ে আসবে তাদের তো চাকরিতে থাকারই প্রয়োজন নেই।
 
শুধু ওষুধ খাওয়ানোর জন্য তো নার্স না। নার্সদের রোগীর সেবা করতে হবে, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
 
এসময় প্রধানমন্ত্রী দ্রুত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নার্সদের কর্মপরিধি আরো সুনির্দিষ্ট করার তাগিদ দেন।

চিকিৎসকদের দুই বছরের ইন্টার্নশিপ চালু করার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসকদের দুই বছর ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করতে হবে। এর মধ্যে এক বছর থাকতে হবে উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে।  
 
চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ডাক্তাররা সব সময় প্রাইভেট চিকিৎসা দিতে পছন্দ করেন। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে ডাক্তাররা যতদিন সরকারি চাকরি করেন ততদিন প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারেন না।  

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ তৈরি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা সিঙ্গাপুরে যাবেন, সেখানে ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সে ধরনের একটি সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।

জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ তৈরির চিন্তার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা অন্যান্য জেলা হাসপাতালগুলোতেও এটা করে দিতে পারি। আলাদা একটা উইং করে সন্ধ্যার পর ওখানে প্রাইভেট প্রাকটিসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অথবা যারা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করবেন না তাদের জন্য প্রণোদনারও ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
 
সরকারি হাসপাতালের ডিউটির বাইরে চিকিৎসকদের রাত জেগে প্রাইভেট প্র্যাকটিস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালে রোগী দেখার পর প্রাইভেট হাসপাতালে রাত ১২টা/১টা/২টা পর্যন্ত নাকি কেউ কেউ অপারেশন করেন। যে ডাক্তার রাতভর অপারেশন করবেন সে সকাল ৮টার সময় এসে রোগী দেখবেন কী করে। তার মেজাজ তো এমনিতেই খিটখিটে থাকবে। কাজেই এটা যাতে না হয় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া দরকার। আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী একটু রেস্ট নেওয়া দরকার, পরিবারকে সময় দেওয়া দরকার। আবার রোগীকেও সেবা দিতে হবে। তাই ডাক্তারদের এ বিষয়ে নজর দিতে বলবো।
 
যত্রতত্র অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনে আগ্রহের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মেডিকেল কলেজ অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। আমরা বাঙালিরা হুজুগে মাতি, যে জায়গায় যাই, সেখানেই একটি মেডিকেল কলেজ দরকার। আমি বলি, আমি করে দেবো। আপনি শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের একটি তালিকা দেন। সেটা হয় না।
 
মেডিকেল কলেজগুলো নিয়ে সার্ভে করতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সব জেলায় করা মেডিকেল কলেজ কী অবস্থায় আছে সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের একটি সার্ভে করা উচিত। কতজন শিক্ষার্থী, কতজন শিক্ষক, শিক্ষার কী কী সুযোগ আছে তা দেখা দরকার।

বৈঠকে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ছবি: পিআইডিতিনি বলেন, অনেকগুলো বড় জেলা আছে ১০টা/১২টা উপজেলা, ১৪টাও আছে। সেসব জায়গার যেখানে বড় মেডিকেল কলেজ নেই, সেখানে আমরা মেডিকেল কলেজ করতে পারি, হাসপাতাল করতে পারি।
 
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তারা যেন সঠিক শিক্ষা নিয়ে চিকিৎসক হন, সেজন্য মনিটরিং বাড়াতে হবে।
 
নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
 
রোগী ও তার স্বজনদের মানসিকতা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুমূর্ষু রোগী নিয়ে এলো আর রোগী মারা গেলে দোষ হলো ডাক্তারের। ডাক্তারের ওপর চড়াও হলো, পেটালো, এ ধরনের মানসিকতা যেন জনগণ পরিহার করে। যার কাছে চিকিৎসা নেবেন তার গায়ে যদি হাত দেন তাহলে…।

চিকিৎসক-নার্সদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তার গুরুত্বটা বুঝে বা তার আত্মীয়-স্বজনদের মানসিক উদ্বেগটা বুঝে সঙ্গে সঙ্গে যেন চিকিৎসার ব্যবস্থাটা নেয়, ফেলে না রাখে।

চিকিৎসকদের বিদেশে ট্রেনিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
 
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৯
এমআইএইচ/এমইউএম/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।