ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্যবিধি ছাড়াই ২৩ বছর চললো কমিউনিটি ক্লিনিক!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯
স্বাস্থ্যবিধি ছাড়াই ২৩ বছর চললো কমিউনিটি ক্লিনিক! কমিউনিটি ক্লিনিকের নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশিকা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অতিথিরা, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: দেশজুড়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১৯৯৬ সালে। প্রতি ছয় হাজার জনগণের জন্য একটি করে বর্তমানে ১৩ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের সিদ্ধান্ত ও তা বাস্তবায়নের এতোদিন পর সবেমাত্র এসেছে কমিউনিটি ক্লিনিকের নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) নির্দেশিকা। তবে শুরু থেকেই এ কার্যক্রমের পুরোটাই হলো আওয়ামী লীগ সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এই স্বাস্থ্যবিধি চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি জরুরি। নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবার মান আরও উন্নত হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে কমিউনিটি ক্লিনিকের নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) নির্দেশিকা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্ট বক্তারা। কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক  ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সেবা শুরু হয়েছিল মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম নিয়ে। তাই সেখানে যদি ওয়াশের ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে নারীদের সম্মানহানী হয়। তাই এ নির্দেশিকাটি করা হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে স্বাস্থ্যসেবা ছাড়াও সমাজের নিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রমের কাজেও এই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠাগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এ কাজে আমাদের অধিক দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সহ সভাপতি ডা. মখদুমা নার্গিস বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো স্থাপনের সময় অবকাঠামোগত ক্ষেত্রে কিছু ঘাপলা ছিল। ভবনগুলো খুব একটা ভালো ছিল না। তবুও আমরা জনগণের সেবায় দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। যেটা আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল।

কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ডা. ইউনুস আলী প্রামাণিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা নির্দেশিকা সম্পর্কে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কমিউনিটি বেসড স্বাস্থ্য সেবা প্রোগ্রামের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. ফারজানা তাহের মুনমুন।

তিনি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ শুরু হয়। সেখানে টয়লেট কয়টা ও কি কি সুবিধা রয়েছে, পানি সাপ্লাইয়ের সুবিধা রয়েছে কি-না, পানিতে আর্সেনিক পরীক্ষা ও হ্যান্ডওয়াশের ব্যবস্থাপনাগুলোকে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা দেখেছি ২০০১ সালের পরে প্রতিষ্ঠিত ভবনগুলো, টয়লেটগুলো মেরামত করা যাবে। কিন্তু তার আগেরগুলো নতুনভাবে স্থাপন করতে হবে। মানি সাপ্লাইয়ের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থাপনা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। ভবনের রোড ও দেয়ালে টাইলস থাকতে হবে। হ্যান্ডওয়াশের জন্য সাবানের ব্যবস্থা খুবই জরুরি। পুরুষ এবং নারীদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা থাকবে। নারীদের জন্য মাসিককালীন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আলাদা ব্যবস্থা বা রেড ডাস্টবিন থাকবে। যেগুলোকে প্রতিনিয়ত পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলা হবে। তাছাড়া এ ধরনের আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থাও থাকতে হবে। মোট তিনটি তিন ধরনের টয়লেট একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে অবশ্যই থাকতে হবে। তাছাড়া অন্যান্য নারীর জন্য আলাদা গ্রিন ডাস্টবিন থাকবে। এতোদিন প্রতিটি ভবনে একটি করে টয়লেট ছিল। তাছাড়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সব সময় সরবরাহ করা থাকতে হবে ও নিয়মিত তা করতে হবে।

এ সময় তিনি এসব কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেওয়ার প্রস্তাবনা রাখেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সিনিয়র স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডা. বুশরা বিনতে আলম, ইউনিসেফের হাত ধোয়া বিষয়ক বিভাগের প্রধান ডারা জনসন, ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর খাইরুল ইসলাম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে এই ১৩ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ১৪ হাজারে রূপান্তরিত হবে। সে কাজ চলছে। তবে ওয়াশ কন্ডিশনকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কথা ছিল, সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ৭০ শতাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকে বেসিক সুবিধাগুলো রয়েছে, ২১ শতাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকে স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই এবং ১৬ শতাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া এ ধরনের কোন তথ্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা নেই। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে এখানে কোনো মনিটরিং নেই। সুবিধাগুলো থাকলে আমাদের রোগমুক্তির ক্ষেত্রে অনেক সহায়তা, এমনকি মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে। কেননা, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে মাইক্রোঅর্গানিজমের মাধ্যমে দূষণ যতো বেশি হবে, চিকিৎসা সেবা ততো বাধাগ্রস্ত হবে। আর স্যানিটেশনের ভালো ব্যবস্থা না থাকলে রোগমুক্তিও সম্ভব নয়। রোগমুক্তির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের পরিবেশটা খুবই জরুরি।

বক্তারা আরও বলেন, সহযোগিতা ছাড়া এদেশের সরকার কখনও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে পারবে না। সব মিলে দেশের বর্তমানে ১৫ শতাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা ভালো আছে। এসব বিষয়ে নিশ্চিত থাকা স্বাস্থ্যসেবার প্রথম ধাপ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯
এমএএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।