মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) পরিবেশ বাচাও আন্দোলন (পবা) মিলনায়তনে ‘দেশব্যাপী ডেঙ্গুর বিস্তার: জাতীয় কর্মপরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ প্রস্তাবনা রাখেন বক্তারা। পবা, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, গ্রিন ফোর্স, বানিপা ও বিসিএইচআরডি’র যৌথ উদ্যোগে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী, পবার সম্পাদক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, গ্রিন ফোর্সের মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন, বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলনের মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, বিসিএইচআরডি’র মাহাবুবুল হক প্রমুখ।
সভায় আবু নাসের খান বলেন, ডেঙ্গু দিন দিন যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার জন্য একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা জরুরি। বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয় ২০০০ সালের দিকে। শুরুর সময় থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ডেঙ্গু প্রধানত ঢাকা শহরে সীমাবদ্ধ ছিল। সে সময় ঢাকায় এডিস মশার প্রজনন স্থল পুরোপুরি ধ্বংস করা গেলে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করে রোগটিকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো। এখন প্রশ্ন উঠেছে রাজধানী থেকে সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার দায় কার? কার বা কাদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে দেশ আজ একটি ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে? দায়ীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে কি?
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, দেশব্যাপী ডেঙ্গু জ্বরের বিস্তার ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা- মোট ২৬ জন মৃত্যুবরণ করেছেন এ রোগে। এর মধ্যে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা মারার জন্য যে ওষুধ ছিটিয়ে আসছিল, তা কার্যকর নয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের প্রধান দাবি। শুরুর দিকে এদেশের চিকিৎসকরা ডেঙ্গুর সঙ্গে লড়াইয়ে একেবারে অনভিজ্ঞ ছিলেন। ডেঙ্গু জ্বরের ধরন, তীব্র শরীর ব্যথা, রক্তক্ষরণ এবং মৃত্যু সবমিলে জনমনে তখন মহা আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সে অবস্থা এখন বদলে গেছে। চিকিৎসকরা বর্তমানে ডেঙ্গু চিকিৎসায় সামর্থ্যবান। ডেঙ্গু চিকিৎসায় একটি জাতীয় গাইড লাইন তৈরি করা হয়েছে। রোগটি প্রতিরোধে মানুষজন আগের চেয়ে অনেক সচেতন। তা সত্ত্বেও এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার ভয়াবহ বৃদ্ধি এবং রোগীর সংখ্যা অনুসারে মৃত্যুর হার বিপদের গভীরতাকে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করেছে।
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন অনুসারে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশার জন্মস্থান ধ্বংসে ব্যক্তির পাশাপাশি সংস্থাগুলোর দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা সম্ভব। সিটি করপোরেশন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচিত প্রথমে সব নাগরিকের এবং ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নিজ নিজ আওতাধীন এলাকায় ডেঙ্গু মশার স্থান পরিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া এবং একটি মনিটরিং সেল স্থাপন করা, যেখানে নাগরিক ডেঙ্গু মশার স্থান সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে। যেসব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এ নির্দেশনা পালনে ব্যর্থ হবে, তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা। সংক্রামক ব্যধি আইন অনুসারে অনূর্ধ্ব তিন মাস কারাদণ্ড, বা অনূর্ধ্ব ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা সম্ভব। কেননা, ডেঙ্গুর জন্মস্থান কার্যকরভাবে ধ্বংস করা হলে এ রোগের প্রকোপ কমে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৯
এমএএম/টিএ