ঢাকা, রবিবার, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ওষুধেও সারছে না ম্যালেরিয়া, ছড়াচ্ছে দ্রুত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৯
ওষুধেও সারছে না ম্যালেরিয়া, ছড়াচ্ছে দ্রুত ম্যালেরিয়া ছড়ায় অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দেশগুলোতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ম্যালেরিয়ার জীবাণু। এতদিন যেসব ওষুধ দিয়ে এর চিকিৎসা করা হতো, তাতে আর কাজ হচ্ছে না। ধীরে ধীরে তারা হয়ে উঠেছে ওষুধ-প্রতিরোধী। ভয়ঙ্কর এ জীবাণু শুধু এশিয়া নয়, আফ্রিকার দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ও থাইল্যান্ডের গবেষকদের বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, ওষুধ-প্রতিরোধী এসব ম্যালেরিয়ার জীবাণু এরই মধ্যে কম্বোডিয়া থেকে লাওস, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে ছড়িয়ে পড়েছে।  

ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় সাধারণত আর্টেমিসিনিন ও পিপেরাকুইন নামে দু’টি ওষুধের মিশ্রণ ব্যবহৃত হয়।

কম্বোডিয়ায় এর ব্যবহার শুরু হয় ২০০৮ সালে। তবে, ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো দেখা যায়, এ ওষুধে ম্যালেরিয়ার জীবাণু মরছে না। তারা ওষুধের কার্যকারিতা প্রতিরোধ করতে শুরু করেছে।

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন মেডিক্যাল জার্নাল বলে খ্যাত দ্য ল্যানসেট-এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রোগীদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ওষুধ-প্রতিরোধী ম্যালেরিয়ার জীবাণু গোটা কম্বোডিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া, লাওস, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামেও এ জীবাণুর অস্তিত্ব দেখা গেছে। ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে এসব জীবাণু আরও বড় সমস্যা তৈরি করছে। কিছু কিছু এলাকায় দেখা গেছে, সেখানকার ৮০ শতাংশের বেশি জীবাণুই ওষুধ-প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে।

তবে কি ম্যালেরিয়া অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে? না। আপাতত সে ভয় নেই।

ল্যানসেটে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিয়মিত চিকিৎসায় অর্ধেকের বেশি ম্যালেরিয়া রোগীর কোনো উপকার হয়নি। তবে, বিকল্প ওষুধ ব্যবহার করে তারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

ভিয়েতনামের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ক্লিনিক্যাল রিসার্চ ইউনিটের প্রফেসর ট্রান টিন হিন বলেন, দ্রুত বিস্তার ও প্রতিরোধের তীব্রতার প্রেক্ষিতে জরুরি বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে আমাদের গবেষণায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।  

এক্ষেত্রে, আর্টেমিসিনিনের পাশাপাশি ভিন্ন কোনো ওষুধ অথবা আগের দু’টির সঙ্গে তৃতীয় ওষুধের মিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী ম্যালেরিয়া নিধনে যথেষ্ট উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে, এর জীবাণু দিন দিন ওষুধ-প্রতিরোধী হয়ে ওঠায় এবার সে পদক্ষেপ হুমকির মুখে পড়েছে।

গবেষকদের ভয়, শক্তিশালী এসব জীবাণু এশিয়া ছাড়িয়ে আফ্রিকাতে পৌঁছালে পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়ে যাবে। কারণ, প্রতি বছর সারাবিশ্বে ম্যালেরিয়ায় মারা যাওয়া রোগীদের ৯০ শতাংশই সেখানকার।

ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইনস্টিটউটের প্রফেসর অলিভো মিয়োটো বলেন, অত্যন্ত শক্তিশালী এসব ওষুধ-প্রতিরোধী জীবাণু নিয়মিত জেনেটিক পরবর্তন ঘটাচ্ছে ও তারা নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম। আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, এটা আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে, যেখানে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। ১৯৮০ সালে তারা ক্লোরোকুইন প্রতিরোধী হয়ে ওঠায় লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

জীবাণুরা শক্তিশালী হয়ে উঠলেও, এদের মূল বাহক অ্যানোফিলিস মশা নিধনের পদ্ধতিতে আপাতত বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। শুধু, চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ পরিবর্তন করলেই হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রফেসর কলিন সাদারল্যান্ড বলেন, এসব জীবাণু খুবই ভয়ঙ্কর, তাতে সন্দেহ নেই। যদিও, তারা সম্ভবত খুব বেশি শক্তসমর্থ নয়, কারণ এদের মোট সংখ্যা নিম্মমুখী।

কম্বোডিয়ায় ২০০৮ সালে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৬২ হাজার। ২০১৮ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৯শ’ জনে।  

তাই, প্রফেসর সাদারল্যান্ডের মতে, ওষুধ-প্রতিরোধী জীবাণুর বিস্তার বাড়লেও, একে আপাতত বিশ্বব্যাপী হুমকি বলা যাবে না।

জানা যায়, বিশ্বে প্রতি বছর ২১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন, আর মারা যান অন্তত ৪ লাখ ৩৫ হাজার। ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু।

নির্দিষ্ট সময় পরপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা ম্যলেরিয়ার প্রধান লক্ষণ। জ্বর তিন-চার ঘণ্টা দীর্ঘ হয় ও এরপরই ঘাম দিয়ে কমে যায়। এছাড়া এ রোগের কারণে শীত শীত অনুভব, গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, মাথাব্যথা, অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, বমি-বমি ভাব, তলপেটে ব্যথাসহ রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। দ্রুত পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৯
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।