ডা. মোস্তফা জালাল বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে। সিটি করপোরেশন যে মশা মারার ওষুধ ছিটাচ্ছে তা কোনোভাবেই কার্যকর নয়।
বুধবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিএমএ আয়োজিত এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে তিনি একথা বলেন। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরের যথোপযুক্ত চিকিৎসা, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ শীর্ষক সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
তবে ডেঙ্গুর প্রকোপকে মহামারি বলতে নারাজ বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ডেঙ্গু এখনও মহামারি আকার ধারণ করেনি। মহামারির পথে রয়েছে। বর্তমানে এর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে বলা যেতে পারে।
‘এবারের ডেঙ্গুর ধরন ভিন্ন। আর সিটি করপোরেশন যেভাবে মশা নিধনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সেভাবে কোনোদিনই মশা নিধন সম্ভব নয়। এক এলাকায় ওষুধ দিলে অন্য এলাকায় মশা চলে যাবে। এক্ষেত্রে সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার। আবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও প্রস্তুত ছিল না এমন কিছুর জন্য। তারা আগে থেকে সারভিল্যান্স চালু রাখলে এমনটা হতো না। সর্বোপরি জনগণকে সবার আগে সচেতন হতে হবে। এখন জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। ’
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের ক্ষেত্রে চিকিৎসদের করণীয় সম্পর্কে সেমিনারের প্রথম মূল বক্তার বক্তব্যে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্লাটিলেট দেওয়া একেবারেই জরুরি না। আমি হাজার হাজার ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করিয়েছি প্লাটিলেট দেওয়া ছাড়াই। তরল খাবার খাওয়ালে এমনিতেই প্লাটিলেট বাড়ে। প্যারাসিটামল ছাড়া রোগীদের অবশ্যই রোগ নিরাময়ে অন্য যে কোনো ওষুধ, ইনজেকশন দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। খুব প্রয়োজন হলে দেওয়া যাবে। কোনোভাবেই এন্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না।
‘যে কোনো সার্জারি করানোর আগে অবশ্যই ডেঙ্গু টেস্ট করিয়ে নিতে হবে। আর টাইপ-১ ধরনের ডেঙ্গু রোগীদের তাদের নিজ বাসায় রেখে পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে চিকিৎসা করানো সম্ভব। আর টাইপ-২ বা এর চেয়ে মারাত্মক ডেঙ্গু হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করাতে হবে। ’
সেমিনারে দ্বিতীয় বক্তার বক্তব্যে বিএসএমএমইউ’র রিউমাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক তার বক্তব্যে বলেন, ডেঙ্গু লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক, এমনকী হার্টকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে বমি, পেটে ব্যথা, আচরণগত পরিবর্তন, অস্থিরতা, নিদ্রাহীনতা, রক্তক্ষরণ বা নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়া, পানিশূন্যতা, অতিরিক্ত ঘাম, প্রস্রাব না হওয়া ইত্যাদি। গর্ভবতী, শিশু, বয়স্ক, হাই প্রেসার, হৃদরোগ, রক্তে সমস্যাজনিত রোগীদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এডিস মশার কামড় আমরা প্রতিদিনই খাচ্ছি। কিন্তু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে আমরা বেঁচে যাচ্ছি। প্রাইমারি ইনফেকশনে আমাদের কিছু না হলেও সেকেন্ডারি ইনফেকশনে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি।
বিএমএ’র সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএমএ’র সেমিনার সিম্পোজিয়াম ও সিএমই উপ-পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক রকেয়া সুলতানা, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, বিএমএ’র মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলামসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৯
এমএএম/এএ