ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মশা আতঙ্ক: শিশু হাসপাতালে রোগীর জন্য মশারি

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৯
মশা আতঙ্ক: শিশু হাসপাতালে রোগীর জন্য মশারি

ঢাকা: ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে শ্যামলীর ঢাকা শিশু হাসপাতালে। এই হাসপাতালে ৬৫০টি শয্যা থাকলেও ফাঁকা নেই একটিও। বরং শয্যা ভর্তি হয়ে যাওয়ায় রোগীদের রাখা হয়েছে মেঝেতে। যেসব রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে, তাদের মধ্যে ৮৩ জনই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত শিশু। গত আড়াই মাসে ২৮৩ শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলেও মারা গেছে দুই শিশু। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকায় মশার কামড় থেকে রক্ষার্থে সব রোগীকেই তাই রাখা হয়েছে মশারির ভেতরে। আতঙ্কে অনেক স্বজনও মশারির ভেতরে থাকছেন।

শনিবার (২৭ জুলাই) ঢাকা শিশু হাসপাতালে ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। শিশুদের জ্বর নিয়ে আতঙ্কিত মা-বাবার।

অনেক অভিভাবক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর তাদের পরীক্ষা করে দেখছেন ডেঙ্গু হয়েছে, সেজন্য আতঙ্ক কাজ করছে বেশি। যেমন শুক্রবার (২৬ জুলাই) জ্বরাক্রান্ত ৬৮ জন শিশুর সিবিসি (রক্তে সংক্রমণ আছে কি-না এবং হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ জানতে পরীক্ষা) ও এনএস১ অ্যান্টিজেন্ট টেস্ট (প্রথম ধাপের ডেঙ্গু শনাক্ত করার পরীক্ষা) করে দেখা যায়, ১৩ রোগীরই এনএস১ পজিটিভ।

গত সাত দিন জ্বরাক্রান্ত মোহাম্মদপুরের শিশু আবু সুফিয়ান (৪)। ২৫ জুলাই শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারও এনএস১ টেস্টে পজিটিভ ধরা পড়ে। তাকে নিয়ে চিন্তিত মা শারমিন আক্তার। চিকিৎসকরা সেবা দিলেও আতঙ্ক কাটছে না। সেজন্য মশার কামড়ের ভয়ে জরুরি কোনো কাজ না থাকলে সবসময় শিশুকে নিয়ে থাকছেন মশারির মধ্যেই। সিবিসি ও এনএস১ অ্যান্টিজেন্ট টেস্টের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষায় শিশুর অভিভাবকরা।  ছবি: বাংলানিউজকেশারমিন আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাত দিন ধরে বাচ্চার জ্বর। ২৫ তারিখে রক্ত পরীক্ষা করায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। ওর শরীর পুড়ে যাচ্ছে, আবার ব্যথাও, কিছু খেতে চায় না। আল্লাহ যেন কোনো বাচ্চার ডেঙ্গু রোগ না দেয়। আবারও যেন মশা না কামড়ায়, তাই মশারির মধ্যেই আছি। ’

হাসপাতালের প্রবেশদ্বারেই দেখা যায় জ্বরাক্রান্ত শিশুদের মা-বাবার ছোটাছুটি। ভবনের সামনে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। এ লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই সিবিসি ও এনএস১ অ্যান্টিজেন্ট টেস্টের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন। সিবিসির জন্য ৩০০ ও এনএস১ টেস্টের জন্য ৮৫০ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এই সময়ে জ্বর হলেই এই দু’টো পরীক্ষা করানো হচ্ছে ডেঙ্গু শনাক্ত করার জন্য।  

সাত দিন ধরে জ্বরাক্রান্ত দেড় বছরের শিশু সুশান্ত কুমার। হাসপাতালের প্রবেশদ্বারে সন্তানের সিবিসি ও এনএস১ টেস্টের রিপোর্টের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন তার বাবা সুমন কুমার ঘোষ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি আদাবরে থাকি পরিবার নিয়ে। আমার এলাকায় জীবনে মাত্র দুইবার মশার ওষুধ দিতে দেখেছি, তাও দায়সারাভাবে মশার ওষুধ দেয় সিটি কর্পোরেশন। তারা দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করলে আমরা মশা থেকে রক্ষা পেতাম।  

সন্তানের স্বাস্থ্যের পরীক্ষার ব্যাপারে তিনি বলেন, হাতে এখনো রিপোর্ট পাইনি। তবে ডেঙ্গুর জন্য সাড়ে ১১শ’ টাকা ফি নেওয়া হচ্ছে। ফি কমালে আমাদের জন্য ভালো হতো।

ঢাকা শিশু হাসপাতাল সূত্র জানায়, ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি কমিয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। যাদের সামর্থ্য নেই তাদের কাছ থেকে কোনো ফি নেওয়া হচ্ছে না।  জ্বরাক্রান্ত রোগীর সঙ্গে মশারির মধ্যে স্বজনরাও।  ছবি: বাংলানিউজতবে বিগত আড়াই মাসে ২৮৩ ডেঙ্গু জ্বরাক্রান্ত শিশু এখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে গেলেও মারা গেছে দু’জন। ২৮ মে মারা  গেছে তামিম হোসেন (১২) নামে এক শিশু। পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থেকে এই হাসপাতালে শিশুটিকে ভর্তি করানো হয়েছিল শেষ পর্যায়ে। ১৭ জুলাই মারা যায় লামিয়া (১২) নামে আরেক শিশু।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরপি) ডা. রিজওয়ানুল আহসান বিপুল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা খুব যত্নসহকারে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দিচ্ছি। ডেঙ্গু জ্বরে কোনো রোগী যেন দ্বিতীয়বার আক্রান্ত না হয় সেজন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড মাস্টারের তত্ত্বাবধানে মশারি দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যা ও ভোরের মশার কামড়ে শিশুরা ডেঙ্গু জ্বরাক্রান্ত হচ্ছে। তাই সবসময় মশারি ব্যবহার করতে হবে। বাচ্চাদের স্কুলে দেওয়ার সময় ফুল প্যান্ট ও ফুলহাতা শার্ট পরাতে হবে, পায়ে অবশ্যই মোজাসহ জুতা থাকবে। প্রতিটা বাসার জানালা ও দরজায় মশার নেট ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপরও শিশুরা ডেঙ্গু জ্বরাক্রান্ত হলে বেশি বেশি পানি, ডাব, তরল খাবার, স্যালাইন খাওয়াতে হবে। জ্বর দুই দিন পার হলেই যতো দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে।  

তবে জ্বরে আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শও দেন ডা. রিজওয়ানুল আহসান বিপুল।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৯
এমআইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।