অপরদিকে, স্লিম মানুষদের শরীরে প্রয়োজনীয় পরিমাণ চর্বির উপস্থিতির কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সঠিকভাবে কাজ করে। ফলে তারা প্রাইমারি ডেঙ্গুজ্বরে বা একবার এডিস মশার বাহকের কামড়ের পর ওষুধ বা চিকিৎসাসেবা ছাড়াই সুস্থ হতে পারেন।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বাংলানিউজকে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সি।
ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সি জানান, ওষুধ ছাড়া জ্বর নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। এক্ষেত্রে গা মুছিয়ে (স্পঞ্জিং) দিয়ে জ্বর নিয়ন্ত্রণে আনা সবচেয়ে উত্তম। পাশাপাশি জ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। তবে তিনবেলা ৩টার বেশি না খাওয়া ভালো। মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুজ্বর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে একেবারে দূর্বল করে দেয়। এ জন্য অন্য যেকোনো রোগে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সুষম খাদ্য খেতে হবে।
এদিকে, মঙ্গলবার বিএসএমএমইউয়ের ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সি বলেন, আমরা ১ জনুয়ারি থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরের ওপরে গবেষণা চালিয়েছে। তাতে দেখা গেছে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী মানুষরা ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষরাই বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন এবং আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। দেখা যায়, পুরুষ ও নারীদের আক্রান্তের আনুপাতিক হার ২ দশমিক ৭ ও ১ শতাংশ।
গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীতে চার ধরনের ডেঙ্গুতেই (ডেন-১, ২, ৩ ও ৪) নারী, পুরুষ ও শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছেন। নারীদের তুলনায় পুরুষদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে কেউ কেউ আবার দ্বিতীয়বারের মতো ভিন্ন এক বা একাধিক ডেঙ্গু ষ্ট্রেইন দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন। এর আগে এমনটা দেখা গিয়েছিল ২০০০ সালে। এরপর গত বছর সেরোটাইপ ৩ এ সর্বোচ্চ আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা গেছে। এইবার এমনকি একজন ব্যক্তির তিন ধরনের সেরোটাইপেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার দেখা দিচ্ছে।
আমাদের এখানে সর্ব মোট ৬ হাজার ১২৯ জন রোগী ডেঙ্গু টেস্ট করিয়েছেন। এরমধ্যে ২১ শতাংশ বা ১ হাজার ২৭১ জনের ডেঙ্গু পজিটিভ ছিল। এক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ NS1 (প্রাথমিক) এ আক্রান্ত ২৬ শতাংশ, IGm (যারা আক্রান্তের ৫ দিন পর আসে) এ ৬ শতাংশ, IgM + IgG (চূড়ান্ত) এ ৫ শতাংশ লোক আক্রান্ত হয়েছে। যদিও বিএসএমএমইউতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, সোমবার (২৯ জুলাই) পর্যন্ত আউটডোরে ডেঙ্গুর চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন মোট ৩ হাজার ৭০০ জন। এরমধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ২ হাজার ২০০ জন ও শিশু ১ হাজার ৫০০ জন। মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৭৭ জন। এর মধ্যে ১৬ জন রােগী ভর্তি আছেন এবং ৮১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা শূন্য।
তিনি আরও বলেন, রিপোর্ট দেখার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি রোগীর (CBCe PBF+Anti dengue NSl/Anti Dengue Igm+lgG) রুটিন টেস্ট (১ হাজার ৯০০ টাকা) ফ্রি করা হচ্ছে। এছাড়া ভর্তি রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সব পরীক্ষা ফ্রি করা হচ্ছে। ভর্তি রোগীকে সব ধরনের মেডিসিন ফ্রি দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে বিএসএমএমইউয়ে ডেঙ্গু রোগীর বেড সংখ্যা ১৫০টি। এর বাইরেও মেডিসিন ও শিশু বিভাগ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে। নতুন বেড কেনা হয়েছে ৬০টি। আমাদের জরুরি বিভাগ খোলার প্রস্তুতি দিয়েই এ সেবা সম্পন্ন করা হচ্ছে। বর্তমানে দুইজন ডেঙ্গু রােগী আইসিইউ এবং এইচডিইউতে ভর্তি আছে। যাদের সব চিকিৎসা ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় বহন করছে বলেও জানান তিনি।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. শাহানা আক্তার রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুল আলম, কোষাধক্ষ্য অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুর রহমান, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. জিলন মিয়া সরকার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৯
এমএএম/ওএইচ/