ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

অযৌক্তিক আইন সংশোধনে প্রয়োজনে আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া হবে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৯
অযৌক্তিক আইন সংশোধনে প্রয়োজনে আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া হবে

ঢাকা: স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন ২০১৮’ খসড়াকে অযৌক্তিক হিসেবে উল্লেখ করেছে ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি অ্যান্ড রাইটস (এফডিএসআর)। এই আইন সংশোধনে প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে রিট বা আইনি প্রক্রিয়ায় যাবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এফডিএসআর আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন-২০১৮ নিরাপত্তা রোগের চিকিৎসক: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা জানান।  

গোলটেবিল বৈঠকে জানানো হয়, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আলাপ করেছে এফডিসআর।

মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ‘আইন প্রণয়ন করার সময় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনসহ (বিএমএ) স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে তখন তারা কোনো মন্তব্য করেননি। তাদের মতে এ আইন ঠিকঠাক মতোই প্রস্তুত করা হয়েছে। ’ কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ের চিকিৎসকদের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করা হয়নি। ফলে চিকিৎসকদের জন্য উপকারী কোনো আইন প্রণীত হয়নি।

বৈঠকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের উপদেষ্টা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষার। তিনি বলেন, ডাক্তারের নিরাপত্তা বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে, তিনি যেন কোনো ধরনের হামলার শিকার না হন। এছাড়া আর কিছু উল্লেখ নেই।  সাধারণত হামলার শিকার হলে ফৌজদারি মামলা করলে বিচার পাবে। এজন্য আলাদা কোনো আইনের দরকার ছিল না।  

‘এছাড়া যেকোনো বিচার চাইতে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) বাদে আদালত পর্যন্ত চিকিৎসক এবং রোগী কেউ পৌঁছাতে পারবে না, এমন অযৌক্তিক ধারাসহ আরও অনেক ধারা রয়েছে এ আইনে। চিকিৎসকদের জন্য কোনো ব্যবস্থার কথা বলেনি। আমাদের কাছে মনে হয়েছে এই আইন শুধুমাত্র বেসরকারি ক্লিনিকের চিকিৎসকদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে রোগীদেরকেও মূল্যায়ন করা হয়নি। ’

বিএমডিসি’র রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. লিয়াকত বলেন, স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিএমডিসি এখন পর্যন্ত কোনো মান-এ আসেনি বা তাদের এখানে রাখা হয়নি। অথচ এক্ষেত্রে বিএমডিসির অনেক বড় অবদান থাকার কথা ছিল। নিবন্ধন ছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানটির আরও অনেক কাজ রয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য একটি বিশেষ সেল গঠন করা আছে। প্রয়োজনে অনৈতিক আচরণের জন্য চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ইশতিয়াক রেজা বলেন, বিএমএ ও স্বাচিপ কেউ আইনের বিষয়ে কথা বলছে না। এফডিএসআর তরুণ চিকিৎসকদের একটি সংগঠন, শুধুমাত্র তারাই কথা বলছে। আসলে চিকিৎসকদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে তাদের কণ্ঠ অনেক ক্ষীণ। তাদের আরও বেশি সোচ্চার হতে হবে। কারণ তারা দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি জনগোষ্ঠী। এসময় তিনি বিএমএ ও স্বাচিপ’র বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব জানানোর আহ্বান জানান।

প্রস্তাবিত আইনে ডাক্তার ও রোগীদের সম্পর্কটি সঠিকভাবে বিবেচনা করা হয়নি উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাসনিম বলেন, চিকিৎসাসেবা নিতে এসে রোগীর প্রশ্ন হতে পারে যে, চিকিৎসা ঠিকমতো হচ্ছে কিনা। কিন্তু জানার পরেও কোনো জটিলতা সৃষ্টি হলে তখন তারা সবকিছু অস্বীকার করে ডাক্তারদের দোষারোপ করে। তারা বলে আমরা জানিনা বা বুঝিনা।

‘যেমন- রোগী বা রোগীর স্বজনদের অনুমতি না পেলে গর্ভাবস্থায় সিজার করা যায় না বা আমরা করতে পারি না। সিজারের পর কোনো জটিলতা সৃষ্টি হলে তখন রোগীর স্বজনরা আমাদেরকেই দোষারোপ করে। এরকম একটি জটিল বিষয় কিংবা চিকিৎসকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সেরকম কিছুই বলা হয়নি। চিকিৎসা ক্ষেত্রে কী তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবে, সেই ব্যাপারেও কিছু বলা হয়নি। ’

স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনটি ঘষামাজা করতে গেলে ৫৭ ধারার মতো একটি প্রহসনমূলক আইনে পরিণত হবে উল্লেখ করে সাংবাদিক গোলাম মর্তুজা বলেন, ডাক্তার ও সাধারণ মানুষ প্রতিপক্ষ হয়ে গেছে। এরকম আইন করার সময় রাজনৈতিক স্বার্থের দিকে নজর রেখে আমলারা কিংবা অ-ডাক্তাররা আইনটি করে ফেলে। আপনারা জোর দাবি তুলে ধরেন এ আইন বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়ন করার জন্য। যেখানে আপনাদের উপস্থিতি থাকবে। কেননা এটা করতে গেলে ৫৭ ধারার মতো সাংবাদিক দমন আইনের ন্যায় ডাক্তার দমনের একটি আইন প্রণীত হবে।

অনুষ্ঠানে বিএমএ’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, আমাদের দেশের জনগণের বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা একেবারেই কমেনি। সবকিছু ঠিকঠাক করতে হলে সাধারণ জনগণকে অনেক সচেতন হতে হবে। দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ডাক্তার থাকে না, সেখানে হেলথ প্রোভাইডার থাকেন। তারা বেআইনিভাবে প্রেসক্রিপশন করে। এসব বিষয় নজরে আনা দরকার ছিল।

গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারের চিকিৎসক ডা.  শামীম বলেন, দেশের মধ্যে খুলনা ও চট্টগ্রামে কীভাবে বিদেশি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়? ভারতের চিকিৎসকরা কীভাবে এখানে এসে চিকিৎসা প্রদান করে? আবার সরাসরি অ্যাম্বুলেন্সে করে দেশের বাইরে রোগী কোন নিয়ম অনুসারে যায়? এসব জনগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের কোন উত্তর নেই এই আইনে।

এসময় অভিনেতা আরেফিন শুভ নিজেকে ডাক্তার বলে দাবি করে বলেন, দেশে ৫৮ শতাংশ মানুষ যদি ভুয়া চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকে অথবা এত বেশিসংখ্যক যদি ভুয়া ডাক্তার থেকে থাকে, তাহলে আমিও নিজেকে ডাক্তার বলে দাবি করতে পারি। যেহেতু সেটার কোনো বিচার হবে না।

এফডিএসআরের মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনটির কোষাধ্যক্ষ ডা. ফরহাদ মঞ্জুর, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. জাহিদুর রহমান, আইন বিষয়ক সম্পাদক ডা. নোমান চৌধুরী, মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিকেশন্স বিষয়ক সম্পাদক ডা. শাহেদ ইমরান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৯
এমএএম/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।