দেশে এখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের চতুর্থ স্তরে। এ ভাইরাস একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে অতি দ্রুত ছড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন>>>করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪১৬ জন
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, ঢাকা বিভাগের ১২টি জেলা, চট্টগ্রাম বিভাগে পাঁচটি, সিলেটের তিনটি, রংপুর বিভাগের তিনটি, খুলনা বিভাগের একটি, ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি, বরিশালের দুই জেলায় আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে।
ঢাকা বিভাগে ১২টি জেলার মধ্যে ঢাকা জেলায় ১৯জন, গাজীপুরে ১২ জন, কিশোরগঞ্জে ১০ জন, মাদারীপুরে ১৩ জন, মানিকগঞ্জে পাঁচজন, নারায়ণগঞ্জে ৮৩ জন, ১১ জন, নরসিংদীতে চারজন, রাজবাড়ীতে ছয়জন, টাঙ্গাইলে দুইজন, শরীয়তপুরে একজন, গোপালগঞ্জে দুইজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচটি জেলার মধ্যে চট্টগ্রামে আট জন, কক্সবাজারে একজন, কুমিল্লায় আটজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চারজন, চাঁদপুরে চারজন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলায় একজন করে শনাক্ত রোগী পাওয়া গেছে। রংপুর বিভাগের রংপুর জেলায় দুইজন, গাইবান্ধায় পাঁচজন, নীলফামারীতে দুইজন আক্রান্ত হয়েছেন। খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা একজন। এছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ জেলায় পাঁচজন, জামালপুরে তিনজন, নেত্রকোনায় একজন, শেরপুরে দুইজন রোগী পাওয়া গেছে। এছাড়া বরিশাল বিভাগের বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলাতে একজন করে সনাক্ত হয়েছেন।
বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, চট্টগ্রাম, নীলফামারী, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ, ঠাকুরগাঁও, জামালপুর, কিশোরগঞ্জসহ আর বেশ কয়েকটি জেলায় শনাক্ত হওয়া রোগীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আক্রান্ত রোগীর বেশিরভাগই এসেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিদিনের স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলায়। দেশের অন্যান্য জেলায়ও এ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেকেই দেশের অন্যান্য জেলায় গেছে। তাদের মাধ্যমে এ সংক্রামণ ছড়িয়ে পড়ছে। এ বিষয়টি আমাদের আরও কঠিনভাবে দেখতে হবে। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা যাওয়া একেবারে বন্ধ করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের নির্দেশনাগুলো পুরোপুরি মেনে চলতে হবে। লকডাউন মানতে হবে। সাধারণ মানুষ লকডাউন না মানলে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী, পুলিশ মোতায়েন করে কার্যকরভাবে পালন করতে হবে। এতে সংক্রমণ ছড়াবে কম।
আরও পড়ুন>>দেশে হোম কোয়ারেন্টিন শেষ করলো ৬০৪১১
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দাবি, কঠোরভাবে লকডাউন পালন না করলে দেশের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। দেশের প্রত্যেক জেলায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে। সংক্রামণ রোধে কার্যকারী পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা জানতে চাই, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিটা কী। জানতে চাই প্রতিটি ইউনিয়নের অবস্থা। গ্রামগুলোর অবস্থা কী। উপজেলা শহরগুলোতে কী অবস্থা। তাই আগামী কয়েকদিনের মধ্যে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হবে।
তিনি বলেন, যদি কোনো ইউনিয়ন বা উপজেলায় একজনও করোনা আক্রান্ত রোগী না পায়। সেই উপজেলায় যেন সংক্রমণ না ছড়ায়। আবার যদি কোনো উপজেলা বা ইউনিয়নে একটি রোগী শনাক্ত করা হয় তাহলে ওই এলাকায় থেকে অন্য এলাকায় যেন না ছড়ায় সেই ব্যবস্থাও আমরা করবো। সারাদেশে যদি এই পরিস্থিতি তৈরি করতে পারি তাহলে বাংলাদেশের করোনা মোকাবিলা করতে আমাদের সহজ হবে।
জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৯৫৪টি। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৮ হাজার ৩১৩টি। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ জনে। আর নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ জন। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮২ জন। নতুন করে আরও তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সর্বমোট সুস্থ হয়েছেন ৩৬জন এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ৩৫ জন। সারাদেশে বর্তমানে আইসোলেশন আছেন ১৭৯ জন। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৪১৬ জন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২০
পিএস/এএটি