ঢাকা: করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আসন্ন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞরা আতংকিত বা আত্মতুষ্টিতে না ভুগে সবাইকে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলছেন।
করোনার ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- শনাক্তের হার যদি ৫ শতাংশের কম থেকে প্রতি সপ্তাহে দেড়গুণ করে বাড়তে থাকে এবং সেই হার যদি ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে তাহলে সেটাকে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে বলা যায়।
বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্তের হার তিন শতাংশের নিচে নেমে ছিল। বর্তমানে সংক্রমণের হার বাড়ছে। গত ৮ মার্চ শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ। গত ৯ মার্চ থেকে করোনা ভাইরাসের শনাক্তের হার ৫ শতাংশের উপরে উঠেছে। ১০ মার্চ শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ১১ তারিখ ছিল ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। ১২ তারিখে ছিল ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং ১৩ তারিখ ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।
শনাক্তের হার বিবেচনায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন প্রতি সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করে আমাদের মোট ৪ সপ্তাহ দেখতে হবে। চার সপ্তাহে যদি শনাক্তের হার দেড়গুণ করে বাড়তে থাকে তাহলে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে বলা যাবে।
করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্বন্ধে জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) অন্যতম উপদেষ্টা এবং একই প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সংক্রমণ বাড়া বা কমা আমাদের দেশের মানুষের আচার-আচরণ ও সরকারের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল।
তিনি বলেন, বর্তমানে করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলে তাদের আইসোলেশনের বিষয়ে আমাদের মনোযোগ কম। বিদেশফেরতদের মধ্যে শুধু ব্রিটেন থেকে আগতদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করছি। দেশের ভিতরে যারা শনাক্ত হচ্ছেন তারা আইসোলেশনে আছে কিনা, তাদের সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে কিনা, বিষয়টি আমাদের জানা নেই।
‘এটা পরিপূর্ণভাবে মেনে চলা উচিত ছিল। এছাড়াও করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়েও শিথিলতা ছিল। আবার অনেকে যারা টিকা নিচ্ছেন, তারা ভাবছেন এখন স্বাস্থ্যবিধি না মানলেও চলবে। বদ্ধ ঘরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আগে থেকেই চলছিল, এখন সেটা আরও বেড়ে গেছে। ফলে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে আমাদের ধারণা। ’
করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে এ বিজ্ঞানী বলেন, মানুষের আচরণের কারণে ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ে বা কমে। ফলে আমাদের অবশ্যই ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা গ্রহণ করা জরুরি। প্রতিটি করোনা রোগী ও তাদের সঙ্গের লোকদের চিকিৎসা এবং কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে। এগুলো হচ্ছে সংক্রমণ কমানোর মৌলিক করণীয় বিষয়। পাশাপাশি আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং করোনার টিকা নিতে হবে।
দেশের মানুষ ও সরকার করোনা প্রতিরোধে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বর্তমানে যে ঊর্ধ্বগতি তা কমাতে পারবো, অন্যথায় ভবিষ্যতে কঠিন দিন আসতে পারে বলেও তিনি আশংকা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২১
আরকেআর/এএ