পাবনা: জেলা শহর পাবনাতে হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে গেছে। চলতি মাসে করোনা পরীক্ষায় পজিটিভের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে মাঠে কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। জেলায় করোনা সংক্রমণের প্রথমদিকে যে ব্যবস্থাপনা প্রস্তুত ছিলো দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় নেই তেমন কোনো ব্যবস্থা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রথমবার শহরতলীতে পাবনা কমিউনিটি হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ করে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করে। এক মাস পরে সেটি তুলে আবারো পাবনা সদর হাসপাতালে আলাদা করোনা ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়। তবে সেটিও বেশিদিন আলাদা করে রাখা হয়নি। কোনো রকমে দায়সারা ব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে চলছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
এদিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডের প্রবেশ মুখে আবর্জনা ও টয়লেটের নোংরা দেখা যায় বলে অভিযোগ করেন রোগীরা। বর্তমানে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের করোনার নমুনা সংগ্রহের পাশে মেডিসিন ওয়ার্ড আর তার পাশেই করোনা রোগীদের জন্য ৪০ শয্যার একটি কক্ষ প্রস্তুত করেছে পাবনা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এই সন্দেহভাজন করোনা রোগীর কক্ষের প্রবেশ মুখের যে অবস্থা সেটি দেখে কেউ সেখানে থাকতে চাইবে না। ময়লা-আবর্জনা, বিভিন্ন ওযুধের স্তুপসহ বাথরুম ও টয়লেটের নোংরা রয়েছে সেখানে। কতটা অস্বাস্থ্যকর অসচেতন অবস্থাপনা হলে এ অবস্থা হয়। আবার মেডিসিন ওয়ার্ডের সঙ্গে করোনার ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়েছে। করোনা সন্দেহভাজন রোগীর সঙ্গে স্বজনরা এসে দেখাও করছেন। কোনো রকম সাবধানতা নেই বল্লেই চলে।
এদিকে হাসপাতালে ৬টি স্থানে নিয়মিত করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন ৭শ থেকে ৮শ’ জনকে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য এই জেলাতে এখনো করোনার (পরীক্ষা) পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়নি। জেলার প্রতিদিনের নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী, নাটোর, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ পিসিআর ল্যাব থেকে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। ফলে রেজাল্ট পেতে ৫ থেকে ৭ দিন সময় লাগছে। অনেক ক্ষেত্রে সঠিক রেজাল্টও পাওয়া যাচ্ছে না এই দেরিতে পরীক্ষা হওয়ার কারণে।
এদিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়ুব হোসেন বলেন, আমাদের হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই কার্যক্রম দ্রুত চালু করা জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। মাঝখানে এই কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিলো গণপূর্ত বিভাগের লোকজন। তাই এখনো কাজ চলছে। আর করোনা সংক্রমণ রোগীদের জন্য যে সব স্বাস্থ্য উপকরণ আমাদের কাছে রয়েছে সেটি খুব বেশি তা নয়। তবে সেটি সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু না হলে উপকরণগুলি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি এই উপকরণ ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরও অভাব রয়েছে।
করোনা রোগীদের জন্য ভেন্টিলেটর সেন্ট্রাল অক্সিজেনের সরঞ্জামাদি সরবরাহ থাকলে সঠিক লোকবলের অভাবে এখনো ব্যবহার করা হয়নি।
হাসপাতালে করোনা নমুনা দিতে আসা ও করোনা রোগী নিয়ে আসা স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, কোনো ধরনের ব্যবস্থাপনা নেই এই হাসপাতালে। করোনার টিকা দেওয়া থেকে শুরু করে নমুনা সংগ্রহ সব কিছুর একটি সমন্বয় দরকার। কিন্তু কোনো কিছুই আমাদের চোখে পরেনি।
পাবনায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১৮ জন। গত এক সপ্তাহে ১৯৩ জন পজিটিভ ফলাফল এসেছে। মোট আক্রান্ত ২০৯৭ জন আর সুস্থ হয়েছেন ১৭৬৬ জন।
চলতি বছরের চিত্রে দেখা যায়- জানয়ারি মাসে ৭৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৫২, মার্চে ৭৫ জন আর এপ্রিলে এখন পর্যন্ত ২৯১ জন পজিটিভ হয়েছে। এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে মারা গেছে ১৩ জন। কিন্তু প্রকৃত মৃত্যু এর তিনগুণ। পাবনায় পিসিআর ল্যাব না থাকায় পরীক্ষা খুব কম হচ্ছে। পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ৫০ শয্যার দুটি কক্ষ প্রস্তুত করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। হজবরল অবস্থা পাবনা জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের। কারো সঙ্গে কারো সমন্বয় নেই বল্লেই চলে।
বর্তমানে হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছে ১৩ জন। এর মধ্যে পজিটিভ ৩ জনকে রেড জোনে রাখা রয়েছে। আজ সকালে তিন জনকে রেফার করা হয়েছে রজশাহী ও ঢাকায়। আর অন্যদের পরীক্ষার রেজাল্ট এখনো আসেনি তারা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। প্রতিদিনি ৪/৫ জন করে নতুন রোগী উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২১
আরএ