গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ডায়রিয়া রোগীদের।
মঙ্গলবার (১৮ মে) দুপুরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে খোলা আকাশের নিচে রোগীদের চিকিৎসা দিতে দেখা যায়।
প্রচণ্ড গরমে গোপালগঞ্জে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে আসছেন চিকিৎসা নিতে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৪৯ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ১৪ জন নতুন রোগী এসেছেন। গতকাল সোমবার ভর্তি ছিলেন ৩৫ জন। এর মধ্যে নতুন রোগী ছিলেন ২৮ জন। কিন্তু মাত্র ১৩ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রায় তিন গুণ বেশি রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। তাই বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের মেঝে, বারান্দা ও ওয়ার্ডের সামনে খোলা আকাশের নিচে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ওয়ার্ডের পাঁচটি রুমের মধ্যে মাত্র দু’টিতে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকি রুমগুলো স্টোররুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ওই দুই রুমের প্রত্যেকটি সিটে দু’জন করে রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ওয়ার্ডের মেঝে (ফ্লোর), বারান্দায় ও খোলা আকাশের নিচে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডটির সামনে ও পেছনে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। রয়েছে মশা-মাছির উপদ্রব। ময়লার ঝুড়ি থেকে ময়লা উপচে পড়ে দুর্গন্ধ ছাড়াচ্ছে। ওয়ার্ডের পেছনে রয়েছে বিশাল ময়লার ভাগাড়। এখান থেকে দুর্গন্ধ ও মশা-মাছি উড়ে যাচ্ছে ওয়ার্ড ও আশপাশে। আর এর মধ্যেই চলছে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্ণি গ্রামের লিপন শেখের স্ত্রী সুবর্ণা বেগম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বাচ্চার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে এসেছেন। তিনি জানালেন, ডায়রিয়া ওয়ার্ডের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা। প্রচণ্ড গরম। পুরো ওয়ার্ডের বারান্দায় একটি মাত্র ফ্যান। চিকিৎসা নিতে এসে বাচ্চা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ভালো হওয়া উচিত।
গোপালগঞ্জ শহরের মৌলভীপাড়া এলাকার নুর-এ-আলম জানান, তিনি স্ত্রীকে চিকিৎসা করাতে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে এসেছেন। ডায়রিয়ার সমস্যায় বার বার টয়লেটে যেতে হয়। কিন্তু এ ওয়ার্ডে একটি মাত্র টয়লেট রয়েছে। দীর্ঘ সিরিয়াল দিয়ে টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। এতে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন তারা। তাই এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানান তিনি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বিজয়পাশা এলাকার জাহাঙ্গীর আলম স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে গতকাল সোমবার বিকেল ৩টায় এ হাসপাতালে এসেছেন। সিট পাননি। তাই ওয়ার্ডের বাইরে খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা করাচ্ছেন অসুস্থ স্ত্রীর। তিনি জানালেন, ভর্তি হওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কোনো ডাক্তার রোগী দেখতে আসেননি। বাইরের দোকান থেকে স্যালাইন ও ওষুধ কিনে আনতে হচ্ছে। নার্সরা শুধু স্যালাইন লাগিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরো জানান, এখানে প্রচণ্ড গরম, দুর্গন্ধ ও নোংরা পরিবেশ। এ পরিবেশে ডায়রিয়া রোগীরা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাই দ্রুততম সময়ে ডায়রিয়া রোগীদের ভালো পরিবেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।
মিলন শেখের স্ত্রী লিপি বেগম তিনদিন আগে বাচ্চার ডায়রিয়ার চিকিৎসা করাতে এসেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গরিব বলে তিনদিন আগে হাসপাতালে এলেও আমাকে বেড দেওয়া হয়নি। বারান্দার ফ্লোরেই আছি অসুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে। এছাড়া তেমন কোনো ওষুধপত্রও দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, যদি ওষুধ, বেড ও ভালো পরিবেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে এখানে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজ করে কি লাভ হবে? আমাদের মতো গরিব মানুষের এসব দরকার নেই।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে তথ্য সংগ্রহের প্রায় শেষ পর্যায়ে দেখা গেল, একজন চিকিৎসক রোগীদের ফাইলপত্র দেখছেন। রোগীদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। তিনি এ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষাজ্ঞ ডা. সুব্রত কুমার রায়।
তিনি জানালেন, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী চাপ বেড়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। সীমিত ব্যবস্থাপনায় আমরা রোগীদের ভালো চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তিনি আরো জানালেন, অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। এছাড়া এ সময় নানা প্রকার মৌসুমী ফল পাওয়া যায়। এসব ফল খাওয়ার সময় মাছির মাধ্যমেও ডায়রিয়া ছড়াচ্ছে।
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. অসিত কুমার মল্লিক জানালেন, জেলায় অনাবৃষ্টি, প্রচণ্ড তাপদাহ ও পৌরসভার লবণাক্ত পানির কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। এখানে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ১৩টি বেড রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ কারণে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বাইরেও রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। তবে আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরো জানালেন, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে স্যালাইনের সংকট রয়েছে। তাই ভর্তি রোগীদের বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। এছাড়া মুখে খাবার স্যালাইন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র হাসপাতাল থেকে রোগীদের সরবরাহ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২১
এসআই