যশোর: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার (১০ জুন) থেকে যশোর ও নওয়াপাড়া পৌরসভা লকডাউন শুরু হয়েছে। বুধবার (০৯ জুন) দিবাগত রাত ১২টা থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউন চলবে ১৬ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত।
এ সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনাকাটার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে কাঁচাবাজার, মুদিবাজার ও ফার্মেসি আগের মতোই খোলা থাকবে। আর বন্ধ থাকবে অন্যান্য দোকানপাট। একইসঙ্গে যশোর থেকে লোকাল রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা গণপরিবহন নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে চলাচল করতে পারবে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টগুলোতে পুলিশ চেকপোস্ট পাহারায় নিয়োজিত থাকবে। শহরে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের করা হবে জরিমানা।
এর আগে, যশোর পৌরসভা ও নওয়াপাড়া পৌরসভায় করোনা পরিস্থিতি খারাপ হয়ে উঠায় লকডাউন কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, গত মে মাসে ভারত সীমান্তবর্তী জেলা যশোর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটি। এ মাসের শেষ সপ্তাহে যশোরে করোনা শনাক্তের হার আগের তুলনায় কিছুটা বাড়তে থাকে। জুন মাসের শুরুতে থেকে প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্তের হার। গত ৭ জুন শনাক্ত হয় ২৯ শতাংশ, ৮ জুন তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ শতাংশে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় ৪২১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ১৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদিন শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ। এছাড়া, যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় সাত হাজার ৭০১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮৪ জন।
এছাড়া যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭২ জন। এমন পরিস্থিতি যশোরে করোনা সংক্রমণ কমাতে যশোরের জেলা প্রশাসন লকডাউন ঘোষণা করে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা যশোর পৌরসভা ও নওয়াপাড়া পৌরসভার সব ওয়ার্ড। এই লকডাউনে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে রোগী পরিবহনকারী, অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পণ্য বহনকারী ট্রাক ও জরুরি সেবাদানের জন্য ব্যবহৃত পরিবহন ছাড়া সব যান চলাচল বন্ধ থাকবে। ওষুধের দোকান ছাড়া সর্ব প্রকার দোকান ও শপিংমল বন্ধ থাকবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় (মুদিখানা) পণ্যের দোকানপাট, খাবারের দোকান, হোটেল, রেঁস্তোরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে। তবে হোটেল, রেস্তোরায় ভোর ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি-সরবরাহ করা যাবে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ এসব স্থানে জনসমাগম করতে পারবে না। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলে সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। রিকশায় একজন, অটোরিকশায় দু’জন এবং মোটরসাইকেলে শুধু চালক যাতায়াত করতে পারবেন। শিল্পকারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। শ্রমিকদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা যেমন-কৃষি উপকরণ, (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, স্থলবন্দরসমূহের কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, গণমাধ্যম, বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও যানবাহন এ নির্দেশনার বাইরে থাকবে। অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে যেতে পারবেন না। পর্যটনস্থল, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এমন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমার নামাজসহ প্রতি ওয়াক্তে সর্বোচ্চ ২০ জন মুসল্লি অংশগ্রহণ করতে পারবে। এদিকে, জেলা প্রশাসনের করোনা প্রতিরোধে জারি করা নির্দেশনা বাস্তবায়নে বুধবার সকাল থেকেই যশোর শহরে প্রচার মাইক বের করে। শহরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক মাইকে পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়। একইসঙ্গে কেউ এসব নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন। ঊর্ধ্বমুখী এ হার রুখতে বুববার মধ্যরাত থেকে যশোর পৌরসভা ও নওয়াপাড়া পৌরসভায় কঠোর স্বাস্থ্যবিধি আরোপ করা হচ্ছে। এর ফলে যশোর শহর থেকে কোনো যানবাহন ছেড়ে যাবে না, দোকানপাট, বিপণিবিতান, পার্ক, কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ থাকবে। কেবল কাঁচাবাজার, ওষুধের দোকান ও নিত্যপণ্যের দোকান এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৪ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২১
ইউজি/আরএ