রাজশাহী: রাজশাহীতে করোনা শনাক্তের হার কিছুটা কমলেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে মৃত্যুর হার। করোনা মোকাবিলায় রাজশাহীতে কঠোর লকডাউন জারি করা হলেও তাই পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
গেল ২৪ ঘণ্টায়ও রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৭৮৬ জনে।
এদিকে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও আশপাশের জেলার রোগী বেশি হলেও চলতি মাসে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া রোগীদের অধিকাংশই রাজশাহীর। প্রতিদিন ভর্তি তালিকাতেও রাজশাহীর রোগীই বেশি।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা যাওয়াদের মধ্যে ১৩ জনই রাজশাহী জেলার। অন্যদের মধ্যে একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ও চারজন নওগাঁ জেলার। এর আগে বুধবার (২৩ জুন) রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, করোনা ইউনিটে ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১৮ জনের মধ্যে ৮ জন করোনা পজিটিভ ছিলেন। আর ১০ জন ভর্তি ছিলেন করোনার উপসর্গ নিয়ে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ছয়জনের বয়স ৬১ বছরের ওপরে। বাকিদের মধ্যে ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে পাঁচজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে তিনজন এবং ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সের চারজন।
তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৪ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ৩৩ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১০, নাটোরের চার, নওগাঁর ছয় ও পাবনার একজন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৪৩ জন। আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৫৭ বেডের বিপরীতে মোট চিকিৎসাধীন রোগী ছিলেন ৪০৪ জন। বাকিদের মেঝে ও বারান্দায় অতিরিক্ত বেড তৈরি করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে, রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণের পিক টাইম চলছে বলে ধারণা করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী পরিচালক ডা. নাজমা আক্তার বলেন, রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণের এখন পিক টাইম বা সর্বোচ্চ অবস্থা চলছে বলে আমরা ধারণা করছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, এটিকে আর বাড়তে না দেওয়া। পরিস্থিতি আগে যেমন ছিল তেমনি আছে। এখন কার্যকর লকডাউন ও সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।
করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. চিন্ময় কান্তি বলেন, শুধু মৃত্যুই নয়, রাজশাহীতে আক্রান্তের হারও যথেষ্ট শঙ্কার। র্যাপিড অ্যান্টিজেন, আরটিপিসিআর, জিনএক্সপার্ট মিলে রাজশাহীতে আক্রান্তের হার ২০ শতাংশ। কিন্তু শুধু আরটিপিসিআর হিসেবে আক্রান্তের হার ৩৯ শতাংশ এবং জিনএক্সপার্টে ৫৭ শতাংশ। মহামারির প্রবণতাকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এ চিত্র বেশ খারাপ। যেসব এলাকায় ভিড় বেশি, সে এলাকায় করোনার সংক্রমণের হারও বেশি। রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় সামাজিক সংক্রমণ চলছে।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, করোনার প্রকোপ দেখে মনে হচ্ছে সামাজিক সংক্রমণ হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় স্বাস্থ্য অধিদফতর ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়্যান্টের ৮০ শতাংশ উপস্থিতি পেয়েছে। সে হিসেবে ধারণা করা যায় রাজশাহীতেও ডেল্টার উপস্থিতি রয়েছে। এখন লকডাউন দেওয়ায় এর সুফল পাওয়া যাবে। এছাড়া সবাইকে স্বাস্থবিধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় গত ১১ জুন থেকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় সাতদিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। পরে তা আরও সাতদিন বাড়ানো হয়। যা শেষ হওয়ার কথা ছিল আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) মধ্য রাতে (রাত ১২টায়)। কিন্তু করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু তুলনামূলকভাবে না কমায় লকডাউন সাতদিন বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২১
এসএস/এএ