ঢাকা: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জরুরি রোগীদের ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) সাপোর্টের জন্য ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টার উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ১২ বেডের আইসিইউর নাম দেওয়া হয়েছে ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টার।
ঢামেক হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসির উদ্দিন জানিয়েছিলেন, জরুরি বিভাগে একটি আধুনিক ও জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসাকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। এখানে চারটি আইসিইউ বেড, ছয়টি এইচডিইউ বেড, পাঁচটি বিশেষ অবজারভেশন বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কেন্দ্রটির নাম দেওয়া হয়েছে ওয়ার স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টার। অথচ সেখানে এখন চিকিৎসক না থাকায় জরুরি রোগীরা আইসিইউ সাপোর্ট থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সংকটাপন্ন রোগীকে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিতে এ আইসিইউ ব্যবহার হয়। এছাড়া অনেকেই মনে করছেন জরুরি আইসিইউর সাপোর্ট না পাওয়ার কারণে রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) বিকেল ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত শফিকুল ইসলাম (৩০) নামে এক যুবককে চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসে তার স্বজনরা। মাথায় গুরুতর আঘাতজনিত কারণে তার অবস্থা গুরুতর ছিল। জরুরি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার তাকে দ্রুত পাঠান নিউরোসার্জারি বিভাগের ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে। রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে নিউরোসার্জারি থেকে চিকিৎসকরা তাকে আবার জরুরি বিভাগে পাঠান। তখন ওই রোগীকে জোরে জোরে শ্বাস নিতে দেখা যায়। জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে তাকে চিকিৎসক প্লাস্টিক জাতীয় একটি জিনিসের ভেতরে চিকন পাইপ ঢুকিয়ে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে দেখা যায়। এরইমধ্যে অনেকে বলাবলি করতে থাকেন রোগীর জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউ প্রয়োজন। তাকে বাঁচাতে হলে দ্রুত লাইফ সাপোর্ট দরকার। এদিকে লক্ষ্য করা যায়, চিকিৎসকরা যখন রোগী শফিকুলের শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার জন্য চেষ্টা করছেন। তখন কাউসার নামে এক অ্যাম্বুলেন্সচালক তার অ্যাম্বুলেন্স থেকে ট্রলি (ট্রলির বিছানা ছিল কমলা রঙের) নামিয়ে জরুরি বিভাগে ঢুকে ওই রোগীর পাশেই ট্রলিটা রাখেন। তাকে এখানে আসছেন কেন জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে তিন বলেন, রোগীর আইসিইউ লাগবে। স্বজনদের অনুমতিক্রমে আমি এসেছি রোগীকে বাহিরের হাসপাতলে নিয়ে যেতে। অথচ তখনও রোগীকে চিকিৎসক শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এদিকে শফিকুলকে অ্যাম্বুলেন্স করে ঢামেক হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় কবির নামে একজন জানান, রোগীর আইসিইউ লাগবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তবে ঢামেকের জরুরি বিভাগে আইসিউতে গিয়েছিলাম। সেখানে তারা বলেন এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। তাই চলে যাচ্ছি অন্য হাসপাতলে।
জরুরি বিভাগের ওয়ার স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারের নার্স ইনচার্জ ফিরোজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গত বছর হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু করার পর পরেই আমাদের এখান থেকে চিকিৎসকদের উঠিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ। এখন চিকিৎসকবিহীন ওয়ার স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টার চালু আছে। তাই আইসিইউর প্রয়োজন রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দু-একজন রোগী আমাদের এখানে আছে। সেসব রোগীকে শুধু স্বাভাবিক অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে।
অপর প্রশ্নের জবাবে ফিরোজা বলেন, জরুরি বিভাগে মেডিক্যাল অফিসার (ইউএমও) থাকেন তাদের তত্ত্বাবধানে ওই বিভাগটি চালু রাখা হয়েছে। তবে স্থায়ীভাবে কোনো চিকিৎসক নেই।
এদিকে ঢামেকে জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আলাউদ্দিন বলেন, হাসপাতালে গত বছর করোনা ইউনিট চালুর পর পরই এখান থেকে চিকিৎসকদের উঠিয়ে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আমাদের এখানে এখন তেমন কোনো চিকিৎসক নেই। তাই আমরা জরুরি রোগীদের প্রয়োজনীয় আইসিউর সেবা দিতে পারছি না। সেখানে এখন শুধু ভেরি ক্রিটিক্যাল রোগীদের ইসিজি করা হয়। পাশাপাশি কিছু রোগীদের স্বাভাবিক অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হাসপাতালে সাধারণ মেডিসিন রোগী ভর্তি বন্ধ। মেডিসিন রোগী ভর্তি বন্ধের কারণে ওখানেও চিকিৎসক সংকট আছে। তবে যতটুক সম্ভব দু-চারজনকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এদিক-সেদিক থেকে চিকিৎসক এনে। তবে করোনার নিয়ন্ত্রণ হলেই সেখানে স্থায়ী চিকিৎসক দেওয়া হবে।
এদিকে হাসপাতাল থেকে একটি সূত্র জানায়, জরুরি বিভাগের চতুর্থ তলায় জেনারেল আইসিইউ আছে। ওই আইসিইউতে জরুরি রোগীদের জন্য বেড পাওয়া মানে সোনার হরিণ হাতে পাওয়া একই সমান। সব সময় ওইখানে রোগীদের সিরিয়াল লেগেই থাকে।
এসব নানা কথা চিন্তা করে তৎকালীন পরিচালক জরুরি বিভাগে ইমারজেন্সি রোগীদের জন্য আইসিইউ নির্মাণ করেন। যেন জরুরি রোগীরা অন্তত ২৪ ঘণ্টা এখানে আইসিইউর সাপোর্ট পেতে পারেন।
** ঢামেকে ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারের উদ্বোধন
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২১
এজেডএস/আরবি