যশোর: শয্যা বাড়িয়েও করোনারোগীর চাপ সামলানো যাচ্ছে না যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। দফায় দফায় শয্যা বাড়িয়েও রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালটির চিকিৎসক ও নার্সরা।
হাসপাতালের ইয়েলো জোনে এখন শয্যার চেয়ে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি রয়েছেন। উপসর্গের রোগীদের ভর্তি নিচ্ছে না জেলার কোনো বেসরকারি হাসপাতাল। আবার কোভিড ‘পজিটিভ’ রোগীদেরও মাঝেমধ্যে জেনারেল হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে ভারতফেরত করোনারোগীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। এদিকে, পরিস্থিতি সামাল দিতে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত চলছে কঠোর বিধিনিষেধ।
জানা যায়, যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ও করোনার উপসর্গ নিয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় ১১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) যশোরের সিভিল সার্জন কার্যালয় ও জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬০ জন যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিট (রেড) ও আইসোলেশন (ইয়েলো) ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। আইসোলেশন ওয়ার্ডে কোনো শয্যা খালি নেই। মেঝেতেও রোগী রাখার জায়গা নেই। প্রতিদিনই এই ওয়ার্ডে করোনা উপসর্গ নিয়ে মানুষ মারা যাচ্ছেন। এ হাসপাতালের ১০৭ শয্যার করোনা ইউনিট ও আইসোলেশনে ১২৯ জন ভর্তি আছেন। এছাড়া এই ইউনিটের অধীনে ভারতফেরত করোনায় আক্রান্ত ১৩ জনকে বেসরকারি জনতা হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শহরের পাশাপাশি করোনায় সংক্রমণ গ্রামাঞ্চলেও বেড়ে যাওয়ায় এমন অবস্থা হয়েছে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। এছাড়া তিন শয্যার আইসিইউ ইউনিটও রোগীতে পূর্ণ।
যশোরের সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, যশোরে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৩৪৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬ হাজার ৮৮৮ জন সুস্থ হয়েছেন। হাসপাতালে ৮৯ জন ও নিজেদের বাড়িতে ৩ হাজার ২৫১ জন চিকিৎসাধীন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১১৯ জন।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত রোগী আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ফলে হাসপাতালের বহির্বিভাগে জ্বর-সর্দি বা করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। জেলায় করোনারোগী বাড়লেও হাসপাতালে রোগীর চাপ সামাল দিতে প্রস্তুত রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
‘বর্তমানে করোনারোগীদের চিকিৎসায় ৯ জন ডিউটি ডাক্তার ও ৪ জন কনসালট্যান্ট রয়েছেন। ২০ জন নার্স রয়েছেন। এ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। যা দু’একদিনের মধ্যে গ্যাস রিফিল করে চালু করা হবে। হাসপাতালে এ মুহূর্তে প্রতিটি সিলিন্ডারে ৬৮শ লিটার অক্সিজেন ধারণক্ষমতার ৪৮টি সিলিন্ডার মজুদ আছে। এছাড়া হাসপাতালে তিনটি ভেন্টিলেটর চালু রয়েছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সাজেদা ফাউন্ডেশনের অর্থায়ন ও অবকাঠামোগত সুবিধা নিয়ে এ হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো হয়েছে।
ফাউন্ডেশনের ১০ জন চিকিৎসক, ১২ জন স্টাফ নার্সসহ আরো ২৭ জন স্টাফ হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া সাজেদা ফাউন্ডেশন প্রতিটি সিলিন্ডারে ৭ হাজার লিটার অক্সিজেন ধারণ ক্ষমতার ১০০টি সিলিন্ডার সরবরাহ করছে। হাসপাতালে ফিমেল পেয়িং ওয়ার্ড ও এইচডিইউ ইউনিটকে রেড জোনের আওতাভুক্ত করে ৫০টি শয্যা বাড়ানো হচ্ছে। ভারতফেরত যাত্রীদের মধ্যে কোয়ারেন্টিন শেষে শনাক্ত উপসর্গবিহীন করোনারোগীদের আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসার জন্য জনতা হাসপাতাল নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিক প্রস্তুত করা হয়েছে। এ হাসপাতালে ৩০ জনকে রেখে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে।
যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বাংলানিউজকে বলেন, আমরাও মনে করি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা আরও বাড়ানো দরকার। কিন্তু হাসপাতালের নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা করানোর বিষয়ে মানুষের আগ্রহ কম। পরীক্ষার জন্য যত মানুষ আসবে, আমরা তত পরীক্ষা করতে পারবো। আমাদের দিক থেকে কোনো সংকট নেই। তবে আগের চেয়ে পরীক্ষা কিছুটা বেড়েছে। আরও কীভাবে পরীক্ষা বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।
যশোরের জেলা প্রশাসক ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি তমিজুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টা আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। হাসপাতালে করোনারোগীর চাপ বাড়ায় বেসরকারি জনতা হাসপাতালটি নেওয়া হয়েছে। সেখানে ৪০টি শয্যা রয়েছে। ভারতফেরত করোনা পজিটিভ ব্যক্তিদের এই হাসপাতালে রাখা হবে। এতে জেনারেল হাসপাতালের করোনা রেড জোনে রোগীর চাপ অন্তত অর্ধেক কমবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২১
ইউজি/এএ