পঞ্চগড়: দেশের সর্ব উত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ের মানুষের একমাত্র ভরসা পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল। তবে উত্তরের এই হাসপাতালটিতে আইসিইউ ও অক্সিজেন প্লানটেশন না থাকায় চরম সংকটের মধ্য পড়েছে জেলাবাসীসহ রোগীরা।
অন্যদিকে, নিরুপায় হয়ে দিনাজপুর অথবা রংপুরের হাসপাতালে ছুটতে গিয়ে খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।
স্থানীয়রা বলছেন, পঞ্চগড়ে করোনা রোগীদের পাশাপাশি অন্য রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিদারুণ সংকট চলছে। জেলার একমাত্র আধুনিক সদর হাসপাতাল হলেও এটিতে নেই আইসিইউ সুবিধা ও অক্সিজেন প্লানটেশন। যে কারণে এ জেলায় মৃত্যুর ঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলেছে।
করোনা শনাক্ত বেশ কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বললে তারা বাংলানিউজকে বলেন, করোনা টেস্টে পজেটিভ এলে তারা পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে হাসপাতালে আইসিইউ না থাকার কারণে ফুসফুস আক্রান্ত হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের দিনাজপুর মেডিক্যালে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন। দিনাজপুরে চিকিৎসা নেওয়ার কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে তাদের।
এদিকে, শুধু করোনা রোগীরাই না, সড়ক দুর্ঘটনা, স্টকসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলে চিকিৎসকেরা ঝুঁকি নিতে চায়না বলে অন্যত্র পাঠিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
পঞ্চগড় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ পঞ্চগড় জেলায় দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ পর্যন্ত এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪১১ জনে। গত জুন মাসে ২৩০ এবং চলমান জুলাই মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩০ জন। এদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ জন। অন্যদিকে, দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর এই জেলায় প্রথম ঢেউয়ে আক্রান্ত হন ৭৭৯ জন। এদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন ২০ জন। বর্তমানে ৩০৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী আইসোলেশনে রয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৮ জন রোগী। চিকিৎসাসেবা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯৭ জন রোগী।
আরো জানা যায়, বর্তমানে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন রোগীর সেম্পল নেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে করোনা পজেটিভ আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। আইসিইউ এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় জটিল আকার ধারণ করা রোগীদের পাঠানো হচ্ছে রংপুর অথবা দিনাজপুর। এদের মধ্যে করোনা ভাইরাস ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়লেই রোগীদের বাইরে পাঠানো হচ্ছে। এ কারণে আক্রান্ত রোগীদের ব্যয় বাড়ছে। একদিকে কোভিড আক্রান্তের ফলে পারিবারিক দুঃশ্চিন্তা অন্যদিকে চিকিৎসার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের কারণে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়ছেন। অনেকে তাই করোনা টেস্ট করাতে চান না। গোপন রেখেই চলাফেরা করছেন।
এদিকে, সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জুন মাসের ২৪ তারিখ থেকে পুনরায় করোনা টিকা সিনোফার্ম দেওয়া শুরু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এবারে তিন ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রবাসীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে ২৩১ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চগড় সিভিল সার্জন ডা. ফজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আইসিইউ নির্মাণ করতে অনেক সময়ের ব্যাপার। তাছাড়া করোনা রোগীর প্রধান সমস্যা অক্সিজেন। সেই অক্সিজেন সমস্যা সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে একটি সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান (নির্মাণাধীন) বসানো হয়েছে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এই প্লান্টের কাজ শেষ হবে। অক্সিজেন প্লান্ট বসানো হলে ৬ থেকে ১০ হাজার লিটার অক্সিজেন কন্টেইনার বসানো হবে। এতে ২০ জন রোগীকে অক্সিজেন সেবা দেওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘন্টা, জুলাই ০৪, ২০২১
এনটি