যশোর: সীমান্ত জেলা যশোরের কেশবপুর উপজেলায় দিনকে-দিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে অবনতি হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি। এতে উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একমাত্র সরকারি হাসপাতালে পরিপূর্ণ রয়েছে শয্যাগুলো।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার প্রথম থেকেই উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি সরকারি হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ড হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। করোনা উপসর্গ রোগীদের জন্য এই ওয়ার্ডের একপাশে ইয়োলো জোন ১৩টি শয্যা এবং আরেক পাশে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় রেড জোনে ২৩টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়। এতে সর্বমোট ৩৬টি শয্যা, যা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পরিপূর্ণ। এছাড়াও হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডে সাধারণ নারী-পুরুষ রোগী রাখা হচ্ছে।
এদিকে করোনা ওয়ার্ডে কিছু সংস্কার ও সেন্ট্রাল অক্সিজেনের পাইপ বসানোর জন্য গত তিনদিন আগে করোনা উপসর্গ ও আক্রান্ত রোগীদের রাখা একত্রিত করে রাখা হয়েছে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে। তবে, শিশু ওয়ার্ডের শিশুদের রাখা হয়েছে হাসপাতালের দোতলায় অস্থায়ী নামাজ ও খাওয়া-দাওয়ার স্থানে। এছাড়াও সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি নারী-পুরুষের মধ্যেই কয়েকজন করোনা উপসর্গের রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বুধবার (১৪ জুলাই) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১৮ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনদিন আগেও তারা করোনা ওয়ার্ডের ইয়োলো জোন ও রেড জোনে ছিলেন, তবে সেখানে সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আপাতত শিশু ওয়ার্ডে একত্রিতভাবেই থাকছেন।
এছাড়াও হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডে (বর্তমানে সাধারণ ওয়ার্ড) দেখা গেছে, নারী-পুরুষ মিলে ১৪ শয্যায় পরিপূর্ণ। তবে, এই সাধারণ ওয়ার্ডেই করোনা উপসর্গ নিয়ে কয়েকজন রোগী চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।
সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মণিরামপুর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের পাশে থাকা তার জামাতা আবু মুসা বাংলানিউজকে বলেন, রোগীর শ্বাসকষ্ট ও কাশি থাকায় তিনদিন আগে এই ওয়ার্ডে ভর্তি। র্যাপিড টেস্টে নেগেটিভ এসেছে, তবে যশোর থেকে পিসিআর ল্যাবের রিপোর্ট নেগেটিভ এলে রোগী বাড়ি নিয়ে যাবো। এছাড়াও শিশু ওয়ার্ডে (বর্তমানে করোনা ওয়ার্ড) চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন ও কেশবপুরের পাঁজিয়ার বাসিন্দা আব্দুর রউফ বাংলানিউজকে বলেন, শাশুড়ির করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে এলে প্রথম দুইদিন নারী ওয়ার্ডে (বর্তমানে সাধারণ ওয়ার্ড) ভর্তি ছিলো, কিন্তু রিপোর্ট পজিটিভ আসায় বর্তমানে শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।
সাধারণ ওয়ার্ডের একজন রোগীর স্বজন বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালে এখন গড়ে চার-বাইশ পয়সার মতো অবস্থা। আমাদের রোগীর পাশেই রয়েছেন শ্বাসকষ্ট-কাশির রোগী। কোনোটা করোনা, আর করোনা না কীভাবে বুঝবো? বেশ কয়েকজন সাধারণ রোগী ভয়ে বাড়ি চলে গেছে।
এছাড়াও দুপুরে কেশবপুরের বুড়লি থেকে গ্যাসের সমস্যায় হাসপাতালে আসা অঞ্জলী রানি বাংলানিউজকে বলেন, চিকিৎসকরা ভর্তি থাকতে বলছেন, কিন্তু ওপরে ওয়ার্ডের গিয়ে করোনার ‘ভয়ে’ ভর্তি না হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
কেশবপুরের বিভিন্ন গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ বাড়িতেই এখন জ্বর, সর্দি-কাশির রোগী। যে বাড়িতে এমন জ্বর হচ্ছে, পরিবারের সবাই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে, করোনা পজিটিভ আসার ভয়ে কেউ হাসপাতালে না এসে গ্রাম্য চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে, কারো কারো অবস্থা খারাপের দিকে গেলে কিংবা সচেতন ব্যক্তি হলে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন। যদিও চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই সমস্যার কারণেই মৃত রোগীর মধ্যে অধিকাংশই গ্রামের। আক্রান্তের প্রথম দিকে গুরুত্ব না দিয়ে অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে নিলে তখন আর চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ থাকছে না। এতে আক্রান্তের হারও বেড়ে যাচ্ছে। কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, কেশবপুর উপজেলায় ৫৮৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে হাসপাতালের ‘রেড জোনে’ ভর্তি আছেন ২৩ জন, অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ৬ জন এবং ১৩৭ জন হোম আইসোলোশনে আছেন। এছাড়াও ২০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। হাসপাতালে ২২ জন চিকিৎসক থাকলেও বিভিন্ন ট্রেনিং ও অন্যান্য কাজে বাইরে আছেন ৮ জন। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ ১৪ জন দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও চিকিৎসা কাজে জড়িত ৫৭ জন করোনা আক্রান্ত হলেও প্রায় সবাই সুস্থ হয়েছেন।
কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আল্লাহর রহমতে সুষ্ঠু-সুন্দরভাবে হাসপাতালটির সব কার্যক্রম চলছে। আটজন চিকিৎসক বাইরে থাকলেও কোনো সমস্যা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, যে ১৪ জন আছেন এটা যথেষ্ট।
এছাড়াও হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের পাইপ বসানোর জন্য করোনা রোগী শিশু ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে জানালেও তিনি দাবি করেন, সাধারণ ওয়ার্ডে কোনো উপসর্গেও রোগী নেই। উপসর্গের রোগী বারান্দায় ঘিরে রেখেছি, যাতে অন্যদের সংক্রমণ না হয়।
তিনি আরও বলেন, আপাতত কোনো অক্সিজেন সংকট নেই। এছাড়াও সেন্ট্রাল অক্সিজেন দুই-তিন দিনের মধ্যেই চালু হলে ২০ জন রোগীকে সাপোর্ট দেওয়া যাবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সাধারণ ওয়ার্ডে মাত্র ৬-৭জন রোগী আছে। এসময় উপসর্গের রোগী একই ওয়ার্ডে রাখার ব্যাপারটা তুলে ধরলে তিনি অস্বীকার করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২১
ইউজি/এএটি