কুমিল্লা: কুমিল্লায় দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে করোনা পরিস্থিতি। লাগামহীনভাবে বাড়ছে সংক্রমণ, এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা।
উপসর্গ নিয়ে হাসপাতাল এবং বাড়িতে মারা গেছেন এমন আরো অনেকে। হাসপাতালে মারা যাওয়া করোনা পজিটিভ রোগীদের পরিসংখ্যান মিললেও উপসর্গ এবং বাড়িতে মৃত্যুর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান মিলছে না।
স্থানীয়রা বলছেন পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টের রোগী দিনকে দিন বাড়ছে। কুমিল্লা মেডিক্যালসহ কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীর ঠায় মিলছে না। প্রতিদিন ঝরছে প্রাণ।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট রোগীতে পরিপূর্ণ। যায়গা না পেয়ে অনেকের ঠাঁয় হয়েছে বারান্দায়। আইসিইউ বেডগুলোও খালি থাকে না। উপজেলা সদরের হাসপাতালগুলোতেও করোনা রোগীর সংখ্যা বেশি।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন অফিসের দেওয়া তথ্য মতে ২০ জুলাই থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬১ জন করোনা পজিটিভ রোগী মারা গেছেন। এ সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২৪৭ জন।
সর্বশেষ সোমবার (২৬ জুলাই) বিকেলে দেওয়া তথ্যমতে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। শনাক্ত হয়েছে ৮৩৫ জন। টেস্ট হয়েছে ২৩৪৯ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৩৫৩ জন। শনাক্তের হার ৩৫ শতাংশ।
এর আগেরদিন রোববার (২৫ জুলাই) জেলায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৫ জন। ১ হাজার ৭০১ জন নমুনা পরীক্ষা করিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭০১ জনের দেহে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ সময় সুস্থ হয়েছেন ২২৭ জন। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার দেখানো হয়েছে ৪১ দশমিক ২ শতাংশ।
শনিবার (২৪ জুলাই) জেলায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ০৬ জন। ৪৯৯ জন নমুনা পরীক্ষা করিয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৬৩ জনের দেহে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ সময় সুস্থ হয়েছেন ২২৭ জন। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার দেখানো হয়েছে ৫০ দশমিক ২ শতাংশ।
শুক্রবার (২৩ জুলাই) করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ২০৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে ৪৮১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) মারা গেছেন ৭ জন। এদিন ২৫১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
বুধবার (২১ জুলাই) ঈদুল আজহার দিন মারা যায় ৯ জন। এদিন শনাক্ত হয়েছিলো ৪৪১ জনের। মঙ্গলবার (২০ জুলাই) মারা গিয়েছিলো ৭ জন। শনাক্ত হয়েছিলো ৫৪৯ জন।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন বলেন, জেলার করোনা পরিস্থিতি ভালো না, পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে বলা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের উচিত যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
তিনি জানান, কুমিল্লায় সর্বমোট ২৪ হাজার ৬৬৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৬৭২ জন, মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৫০৬ জনকে। আর মোট সুস্থ হয়েছেন ১৪ হাজার ৭৭২ জন।
কুমেক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. রেজাউল করিম বলেন, হাসপাতালে করোনা ইউনিটে বেড রয়েছে সর্বমোট ১৩৬টি। প্রতিদিন ৩০/৩৫ জন রোগী অতিরিক্ত থাকেন। ২০টি আইসিইউ বেড এবং ১০টি এইচডিইউ বেড রয়েছে। এসব বেডের কোনোটিই খালি নেই।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পিকআপ-মাইক্রোবাস ও সিএনজি অটোরিকশায় মানুষকে চলাচল করতে দেখা গেছে। জেলা প্রশাসন পুলিশ, সেনাবাহিনী বিজিবি স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রনে মাঠে কাজ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২১
এসএইচডি/আরএ