ঢাকা: শিল্প-কলকারখানা খুলে দেওয়া হলে নিঃসন্দেহে করোনার ঝুঁকি বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী।
শুক্রবার (৩০ জুলাই) চলমান বিধি-নিষেধের মধ্যেই আগামী ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী সব শিল্প-কলকারখানা খুলে দেওয়ার অনুমতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
অপরদিকে, এদিন দুপুরে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, আমরা কীভাবে এ সংক্রমণ সামাল দেবো? রোগীদের কোথায় জায়গা দেবো? সংক্রমণ যদি এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে কী পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব? অবস্থা খুবই খারাপ হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এসব বিবেচনাতেই আমরা বিধিনিষেধ বাড়ানোর সুপারিশ করেছি।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে এ ধরনের সিদ্ধান্ত সাংঘর্ষিক কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত সাংঘর্ষিক তো বটেই। চলমান লকডাউন বলতে যা বোঝায় কল-কারখানা খুলে দিলে সেটাতো আর চলমান থাকলো না।
তিনি বলেন, কল-কারখানা খোলা থাকলে, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের যাতায়াত বাড়বে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ও বাড়বে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কারখানাগুলো শ্রমিকদের যাতায়াতের ব্যবস্থা এর আগে কখনও করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে বলে মনে হয় না। সেক্ষেত্রে তখন আবার গণ-পরিবহন খোলার প্রশ্ন সামনে চলে আসবে। সিএনজি বা রিকশায় ঠাসাঠাসি করে যাতায়াত করলে ঝুঁকি তো বাড়বেই। নিঃসন্দেহে আবারও করোনার ঝুঁকি বেড়ে যাবে।
এ চিকিৎসা বিজ্ঞানী বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের অর্জন ছিল, করোনার শনাক্তের হার একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করছিল। বলা যায়, একটা জায়গায় স্থির ছিল। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এতটা সংক্রামক হওয়ার পরেও শনাক্তের হার ২৭ থেকে ৩২ এর মধ্যে ওঠানামা করছে। এটাই হচ্ছে আমাদের কঠোর বিধিনিষেধের সুফল। বিধিনিষেধ না থাকলে এটা বেড়ে দ্বিগুণ অথবা তার চেয়ে বেশি হয়ে যেতে পারতো। বিধি-নিষেধ চলমান থাকলে এ হার আরও কমে যেত, এখন সেই সম্ভাবনা আর দেখছি না। এর ফলে হয়তো আবার সংক্রমণ বাড়বে। ফলে মৃত্যুর হার বাড়তেই থাকবে। আরেকটা আশঙ্কার জায়গা হচ্ছে, সংক্রমণ বাড়তে থাকলে নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হয়ে যায়। ভারতে করোনা সংক্রমণের তীব্রতার সময়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার মতামত হচ্ছে, যদি কারখানা খুলতেই হয়, তাহলে শ্রমিকদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা, শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের টিকা দেওয়া, শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক পরিবহনের ব্যবস্থা করা, মিল কারখানাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যবস্থা নেওয়া এবং এসব ব্যয়ের একটা ব্যবস্থা মালিকদের কাছ থেকে নেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে সংক্রমণ যতটা না চিন্তার কারণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপরে যে উপচেপড়া চাপ সেটা কমানো তার চেয়ে বেশি চিন্তার কারণ।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২১
আরকেআর/ওএইচ/