ঢাকা: করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার মাঝেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। চলতি মাসের প্রথম চার দিনের প্রতিদিনই দুই শতাধিক নতুন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
চলতি মাসের প্রথম চার দিনে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিদিনই দুই শতাধিক ব্যক্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। আর গত এক সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণ করলে ডেঙ্গুর দেখা যায়। আক্রান্তদের বেশির ভাগই রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা।
স্বাস্থ্য তথ্য ইউনিট সূত্রে জানা যায়, ২৮ জুলাই সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা অর্থ্যাৎ ২৯ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত সারাদেশে ১৯৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হন। এদের মধ্যে ১৮১ জনই ঢাকার রোগী, বাকি ১৩ জন ঢাকার বাইরের। ২৯ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ৩০ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন ১৭০ জন রোগী শনাক্ত হন যাদের মধ্যে ১৬৪ জনই ঢাকার রোগী আর বাকি ৬ জন ঢাকার বাইরের।
এভাবে ৪ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রতি ২৪ ঘণ্টায় যথাক্রমে ১৯৬, ২৩৭, ২৮৭, ২৬৪ এবং ২৩৭ জন করে নতুন রোগী শনাক্ত হন। এদের মধ্যে মাত্র ৬১ জন রোগী ঢাকার বাইরের আর বাকিরা সবাই রাজধানী ঢাকা থেকে শনাক্ত হন।
এছাড়াও চলতি বছরের মাসিক হিসেব দেখলেও ডেঙ্গুর ভয়াবহতা স্পষ্ট ফুটে ওঠে। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৩২ জন। ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে ৩ জন, মে তে ৪৩ জন এবং জুনে ২৭২ জন। তবে জুলাই মাসে এসে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো বেড়ে যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এই এক মাসেই আক্রান্ত হন দুই হাজার ২৮৬ জন ব্যক্তি। আর চলতি মাসের প্রথম চার দিনে এখন পর্যন্ত এক হাজার ২৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ৬৮৩ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৬১৭ জন। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়ার সন্দেহ রয়েছে ৮ জন ব্যক্তির ক্ষেত্রে। এছাড়াও এই মূহুর্তে দেশজুড়ে এক হাজার ৫৮ জন রোগী সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এক হাজার চার জন রোগী। বাকি ৫৪ জন রোগী ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবস্থা যদি দ্রুত সামাল দেওয়া না যায় তাহলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নেবে। যেখানে পুরো জুলাই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজারের কিছু বেশি সেখানে আগস্টের প্রথম চার দিনেই আক্রান্তের সংখ্যা হাজার পেরিয়েছে।
এদিকে সাধারণ মানুষদের অভিযোগ, করোনার প্রকোপে চাপা পড়ে যাচ্ছে ডেঙ্গু মোকাবিলার মতো বিষয়টি। যদিও ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশাসহ মশক নিয়ন্ত্রণ যাদের দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন সেই দায়িত্ব পালনে কাজ করে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মশক নিধনে দফায় দফায় চিরুনি অভিযান পরিচালনা করছে। এসব অভিযানে এডিস মশার লার্ভার স্থান ধ্বংস করা হচ্ছে। কোনো স্থাপনায় লার্ভা পাওয়া গেলে অথবা লার্ভা প্রজননে সক্ষম পরিবেশ পাওয়া গেলে সেখানে জেল-জরিমানা এবং সতর্কবার্তাও দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষ করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রায় প্রতিদিন একটি করে নির্দিষ্ট অঞ্চলে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
সামাজিক আন্দোলনের ডাক দিয়ে মেয়র আতিক বলেন, সুস্থতার জন্য সুস্থ পরিবেশের কোনো বিকল্প নাই, আর সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সংক্রান্ত সামাজিক আন্দোলনে সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
ডেঙ্গু রোগের জন্য দায়ী যে এডিস মশা সেটা অভিজাত এলাকার মশা। পরিষ্কার স্বচ্ছ পানিতে এর জন্ম। এই পানি বেশিরভাগ সময়েই আমাদের বাসাবাড়িতে বিভিন্ন জিনিসে জমে থাকা পানি। যেমন টব, ডাবের খোসা, কমোড, প্লাস্টিকের বোতল, এসির জমা পানি ইত্যাদি। আমরা ক্যাম্পেইন করেছি যে, তিন দিনে একদিন জমা পানি ফেলে দিন। নগরবাসী যদি সচেতন হয় তাহলেই এই ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে মুক্ত থাকা যায়। করোনার এই সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ আমরা চাই না।
বাংলাদেশ সময় ঘণ্টা: ১৬৩৫, আগস্ট ০৫, ২০২১
এসএইচএস/এসআইএস