ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

তথ্য প্রযুক্তির আধুনিকতায় বেড়েছে চিকিৎসাসেবার মান

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২১
তথ্য প্রযুক্তির আধুনিকতায় বেড়েছে চিকিৎসাসেবার মান

সিংড়া (নাটোর) থেকে: বিজ্ঞানের যে কয়েকটি শাখা দ্রুত উন্নতি করেছে চিকিৎসাবিজ্ঞান তার মধ্যে অন্যতম। তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বের যেকোনো স্থানে বসেই এখন চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করা সম্ভব।

সেটিই দেখিয়ে দিচ্ছে নাটোরের সিংড়া উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

কয়েক বছর আগেও প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের এই অঞ্চলটিতে ছিল না কোনো চোখের ডাক্তার। তাই চোখের সমস্যা হলে সাধারণ মানুষকে যেতে হতো ঢাকা বা রাজশাহী। তবে একটি উদ্যোগ বদলে দিয়েছে সেই চিত্র। যদিও উপজেলাটিতে বর্তমানেও কোনো চোখের ডাক্তার নেই, তবুও ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে কমিউনিটি ভিশন সেন্টার স্থাপন করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রতিদিন প্রায় ২০ জন চোখের রোগীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এখন অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ। সেই পরিবর্তনের ছোঁয়া যে গ্রামেও লেগেছে, বোঝা গেলো সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে। বিশেষ করে এখানে দুটি উদ্যোগ বদলে দিয়েছে পুরো উপজেলার স্বাস্থ্যসেবার মান। এর একটি কমিউনিটি ভিশন সেন্টার যেমন চক্ষু রোগীদের সেবা দিচ্ছেন, ঠিক তেমনি রোগীদের টেলিমেডিসিনের সেবা দিচ্ছে 'টেলিমেডিসিন স্বাস্থ্যসেবা'। মূলত ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভিডিও কনফারেন্সে এবং রিপোর্ট দেখিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়ে দেওয়া হয় এই সেবাতে।

নিজেদের সেবা সম্পর্কে বলতে গিয়ে হাসপাতালটির সিনিয়র স্টাফ নার্স মুসলিমা আক্তার বলেন, ভিশন সেন্টারের মাধ্যমে আমরা প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন চোখের রোগীকে সেবা দিয়ে থাকি। এর আগে সংখ্যাটা আরও বেশি ছিল। তবে এখন জনবল কম থাকায় সেবা কিছুটা কমেছে।

তিনি বলেন, আমরা চক্ষু রোগীদের চোখ এখান থেকে মেশিনে পরীক্ষা করি এবং তা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বড় ডাক্তাররা দেখেন। আমরা এখানে মেশিনে চোখে যেভাবে দেখি, তারা সেটি তাদের মনিটরে দেখতে পারেন। এরপর চোখের রিপোর্টের রেজাল্টও এখান থেকে তাদের দেখানোর সুযোগ রয়েছে। তারা সেগুলো দেখে সাজেশন করেন। এরপর আমরা সেগুলো রোগীদের লিখে দেই। আর এই কর্মযজ্ঞে সাধারণত প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তাররা এভাবে চোখ পরীক্ষা করেন।

টেলিমেডিসিন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগেও দেখা গেলো একই চিত্র। এই বিভাগ থেকে হাসপাতালটির মেডিক্যাল অফিসার মো. আব্দুল লতিফ বলেন, আমরা সব সময় রোগীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। এর মধ্যে এমন কিছু বিষয় থাকে যে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া লাগে। সে সময়ই আমরা ভিডিও কনফারেন্স এবং রিপোর্ট শেয়ারের মাধ্যমে অভিজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে এই রোগীদের আলাপ করিয়ে দেই এবং সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। এতে করে রোগীরা উপকৃত হয় এবং আমরাও আমাদের সর্বোচ্চ সেবাটি দিয়ে মানুষের উপকার করতে পারি।

চোখের ডাক্তার দেখাতে এসে আলেয়া খাতুন নামের এক রোগী বলেন, আগে এই এলাকায় কোনো চোখের ডাক্তার ছিল না। পরে আমাদেরকে যেতে হতো অনেক দূরে রাজশাহী অথবা ঢাকাতে। এখন আমরা আমাদের নিজ এলাকাতেই এই সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়াই আমাদের অনেক উপকার হয়েছে।

প্রদীপ কুমার নামের অপর একজন রোগী বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার এবং নার্সরা যেমন ভালো সেবা দেয় ঠিক তেমনি গুরুতর কিছু হলে বা চোখের সমস্যা হলে তারা কম্পিউটার দিয়ে বড় ডাক্তার দেখিয়ে দেয়। এই বিষয়টি আমাদের গ্রামে অনেক সুফল বয়ে এনেছে।

সার্বিক বিষয়ে সিংড়া উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা সব সময়ই আমাদের সেবাগুলোকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নেওয়ার চেষ্টা করছি। এতে আমরা সুফল পাচ্ছি। দ্রুত গতির ইন্টারনেটের ফলে খুব সহজেই দেশের মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয় এবং আমরা তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকি। এ কার্যক্রমটিতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রজেক্ট।

তিনি বলেন, এর মধ্যেই এই কার্যক্রমের জন্য প্রায় ত্রিশ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ কেনা হয়েছে। আগামীতে এর সুফল উপজেলাবাসী আরও বেশি করে পাবে বলেই মনে করি। আর সেটি ডিজিটাল বাংলাদেশের সার্থকতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১ , ২০২১ 
এইচএমএস/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।