টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের গোপালপুর হেমনগর ইউনিয়নের বেলুয়া জনতা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২শ ৯০ জন শিক্ষার্থীকে টিকা দিতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আর এই রেজিস্ট্রেশন করতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ১শ ১০ টাকা করে খরচ হবে বলে মাইকিং করা হয়।
জানা যায়, মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) থেকে গোপালপুর উপজেলার ২৩ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়। বুধবার (১২ জানুয়ারি) হেমনগর ইউনিয়নের বেলুয়া জনতা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২শ ৯০জন শিক্ষার্থীর টিকা দেওয়ার নির্দিষ্ট তারিখ ছিল।
মাদারজানি গ্রামের কলেজছাত্র স্বপন হাসান হৃদয় জানান, বেলুয়া, ভোলারপাড়া, কুমুল্লী, মাদারজানি ও জামতৈল গ্রামের বিভিন্ন সড়কে স্কুল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১শ ১০টাকা করে নিয়ে টিকাকেন্দ্রে যেতে বলা হয়। করোনা টিকার রেজিস্ট্রেশনের জন্য ওই টাকা লাগবে।
কুমুল্লী উত্তরপাড়া গ্রামের প্রচার মাইক বহনকারী ইজিবাইকচালক আব্দুর রহিম গুড্ডু জানান, স্কুলের দপ্তরি রাসেল তার গাড়ি ভাড়া করে আশপাশের পাঁচ গ্রামে টানা দুই ঘণ্টাব্যাপী করোনার টিকার রেজিস্ট্রেশনের জন্য ১শ ১০ টাকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে হাজির হতে বলেন।
শিক্ষার্থী অনিকা জানায়, গত এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সময় করোনার টিকার কথা বলে ১শ টাকা করে আদায় করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এবার মাইকিং করে করোনার টিকার জন্য আরও ১শ ১০ টাকা নিয়ে কেন্দ্রে যেতে বলেন প্রধান শিক্ষক।
এদিকে ঘোষণানুযায়ী সব শিক্ষার্থী রাধারাণী গার্লস স্কুলে রেজিস্ট্রেশনের জন্য টাকাসহ লাইনে দাঁড়ানোর পর শিক্ষকরা টাকা নিতে শুরু করেন। এ সময় সংবাদকর্মীরা হাজির হলে শিক্ষকরা টাকা নেওয়া বন্ধ করে দেন।
ওই স্কুলের ছাত্রী শান্তা, শিখা, আবিদা, আসিফ ও ইমরান অভিযোগ করে জানায়, স্কুল কর্তৃপক্ষ অনেকের কাছ থেকে করোনার টিকার রেজিস্ট্রেশনের নামে ১শ ১০ টাকা করে আদায় করেছেন।
ঘটনা আঁচ করতে পেরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম মিয়া দুপুর ১২টার দিকে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, আমার পিয়ন মাইকিং করার সময় যে খরচের জন্য একশত টাকার কথা প্রচার করেছে তা ভুলবশতঃ শিক্ষার্থীর জন্য নিজের যাতায়াত খরচ। বিষয়টি কেউ ভুল বুঝে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলীম আল রাজী বাংলানিউজকে জানান, মঙ্গলবার থেকে স্কুলের প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। বুধবার দুই হাজার ১শ ৩০ জনকে টিকা দেওয়া হয়। টিকা আনা নেওয়ার খরচ বহন করছে স্থানীয় প্রশাসন। সুতরাং টিকা দেওয়ার অজুহাতে কেউ টাকা আদায় করতে পারেন না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. নাজনীন সুলতানা বাংলানিউজকে জানান, টিকা রেজিস্ট্রেশনের নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ পেয়ে তিনি প্রধান শিক্ষককে সতর্ক করেছেন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, স্কুলের দপ্তরি রাসেল মাইকিং করে টাকা চেয়েছেন। তিনি বিষয়টি জানতেন না। ওই দপ্তরিকে প্রয়োজনে সাসপেন্ড করা হবে।
দপ্তরি রাসেল জানান, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশেই তিনি মাইকিং করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ওসি) মো. পারভেজ মল্লিক অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন বাংলানিউজকে জানান, এ ব্যাপারে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২২
এএটি