ঢাকা: সারাদেশ থেকে স্বল্প খরচের কারণে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন রোগীরা। প্রথমে মাত্র ১০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে রোগীর চিকিৎসা শুরু হয়।
নানা শারীরিক জটিলতার কারণে ঢাকার পাশাপাশি দেশের সব জেলা থেকে রোগীরা এই হাসপাতালে ভর্তি হয়। সঙ্গে থাকেন তাদের স্বজনরা। হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী রোগীর সঙ্গে একজন স্বজন থাকার নিয়ম থাকলেও এমনও দেখা গেছে ঢামেকে দিনের পর দিন ৪ থেকে ৫জন রোগীর সঙ্গে থাকছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করার পরে স্বজনদের রাতে ঘুমানোর সমস্যায় পড়তে দেখা যায়। কারণ তাদের থাকার কোন জায়গা নেই। স্বজনরা গরিব হওয়ায় কোনো আবাসিক হোটেলেও থাকতে পারছেন না। যেহেতু হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে একজনের বেশি স্বজন থাকতে পারে না, তাই দিনের বেলায় রোগীর সেবায় সময় পার করলেও রাতে তাদের ওয়ার্ডের বাইরে হাসপাতালের ফ্লোরে প্লাস্টিকের পাটি বিছিয়ে ঘুমাতে দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) রাতে ঢামেক হাসপাতালের পুরাতন ও ১০ তলা নতুন ভবনের তলায় তলায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাইরে ফ্লোরে প্লাস্টিকের পাটি বিছিয়ে আনুমানিক কয়েক শতাধিক স্বজনকে সিরিয়াল করে ঘুমাতে দেখা যায়।
এ বিষয় হাসপাতালের প্রশাসনিক এক কর্মকর্তা জানান, ভর্তি রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই গরিব। কারণ প্রথমে এখানে মাত্র ১০ টাকা দিয়ে একটি টিকিট কিনলেই রোগীর চিকিৎসা শুরু হয়ে যায়।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে না জেনে এক রোগীর সঙ্গে কাঁথা, কম্বল ও বালিশ নিয়ে ১০ থেকে ১২ জনও হাসপাতালে আসেন। সেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির পর তারা জানতে পারেন সঙ্গে একজনের বেশি থাকতে পারবেন না। তখন বাকি স্বজনরা সমস্যায় পড়ে যান। টাকার অভাবে তারা কোনো আবাসিক হোটেলেও থাকতে পারেন না। এ কারণে দিনের বেলায় তারা নানা ভাবে সময় পার করলেও রাতে বাইর থেকে পাটি কিনে সেটা হাসপাতালের কোথাও বিছিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
ঢামেক হচ্ছে অন্যদের পাশাপাশি দেশের দরিদ্র পরিবারের সবচেয়ে আস্থার হাসপাতাল। এটি জাতীয় হাসপাতাল, কোনো রোগীকে এখান থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার নজির নেই। হাসপাতালটি ২ হাজার ৬শ শয্যার হলেও এখানে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওয়ার্ডে জায়গা না থাকলেও হাসপাতালের ফ্লোরে রেখে চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় পাটি বিছিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতির সময় এক গাইনি রোগীর দুই স্বজন মামুনুর রহমান ও ফরহাদ রেজা জানান, তাদের বাড়ি নেত্রকোনায়। পুরুষ হওয়ার কারণে মহিলা ওয়ার্ডে থাকতে পারছেন না। তাই ওয়ার্ডের বাইরে ফ্লোরে ঘুমানোর চেষ্টা করছেন। গত পাঁচ দিন যাবত এভাবেই ঘুমাচ্ছেন।
রাজশাহীর প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আকাইদ (১২) নামে এক শিশুকে মাথায় সমস্যা জনিত কারণে পুরাতন ভবনের একটি ওয়ার্ডে ভর্তি করেছেন স্বজনরা। শিশুটির বাবা-মা ও দুই ভাইবোনসহ এক চাচা সবাই হাসপাতলে অবস্থান করছেন গত ১০ দিন যাবত।
বাবা হতদরিদ্র গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) গিয়াসউদ্দিন জানান, হাসপাতালের ওয়ার্ডে রোগীর সঙ্গে তার মা থাকতে পারে। আর কেউ থাকতে পারে না, নিয়ম নেই। তাই আমরা ৫ জন ওয়ার্ডের বাইরে পাটি বিছিয়ে রাত্রি যাপন করি। গরিব হওয়ায় কোনো আবাসিক হোটেল তো দূরের কথা, রাজধানীর মিরপুরে এক আত্মীয়র বাসা আছে সেখানেও যেতে পারি না। তাই নিরুপায় হয়ে এভাবেই রাত্রি যাপন করছেন।
এদিকে ঢামেক হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) শাহ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মহিলাদের ওয়ার্ডে পুরুষদের থাকার নিয়ম নেই। পাশাপাশি অন্যান্য ওয়ার্ডে রোগীর সঙ্গে একজন থাকতে পারে। এছাড়া যারা প্লাস্টিকের পাটি বিছিয়ে হাসপাতলের আনাচে-কানাচে ঘুমান তারা হতদরিদ্র কোনো রোগীর স্বজন। বাইরে আবাসিক হোটেল বা অন্যান্য জায়গায় থাকার মতো অর্থ তাদের নেই। তাই নিরুপায় হয়ে ঘুমন্ত এসব লোকজনের নিরাপত্তা দেন হাসপাতালের আনসার সদস্যরা।
এদিকে ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া জানান, কয়েক দিন যাবত অতিরিক্ত গরমের কারণে অনেক রোগীর স্বজনরা আবার ওয়ার্ডে থাকতে চাইছেন না। তাই পাটি বিছিয়ে ওয়ার্ডের বাইরে রাত্রিযাপন করেন, এছাড়া বাড়তি স্বজনরা তো আছেই। রোগীর সঙ্গে দূর-দূরান্ত থেকে আসা স্বজনরা নিরুপায় হয়েই হাসপাতালের আনাচে-কানাচে রাত্রিযাপন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, ৮ এপ্রিল, ২০২২
এজেডএস/এমএমজেড