ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বরিশাল মেডিক্যালে দুদকের অভিযান, তথ্য না দেওয়ার অভিযোগ 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২
বরিশাল মেডিক্যালে দুদকের অভিযান, তথ্য না দেওয়ার অভিযোগ 

বরিশাল: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজে (শেবামেক) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযান এবং অধ্যক্ষের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।  

এ সময় তারা কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বিচার দাবিতে স্লোগানও দেন।

অপরদিকে অধ্যক্ষের সঙ্গে ঘটা ওই ঘটনায় বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মরকলিপি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।

মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় বিএমএর জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

এর আগে, মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দুদক সমন্বিত বরিশাল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহার নেতৃত্বে পাঁচজনের একটি টিম বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবামেক) এ অভিযান চালায়।

অভিযানের বিষয়ে দুদকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন সরকারি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করা, হাসপাতালের চেয়ে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী নিয়ে ব্যস্ত থাকাসহ কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজে যায় দুদকের ওই টিম।

অভিযোগে ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসকের নামোল্লেখ করে বিভিন্ন চিকিৎসকের কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের কর্মকর্তারা। আর অভিযোগে ব্যক্তিগত চেম্বারে কয়েকশত রোগী দেখলেও সময়মতো সরকারি অফিসের দায়িত্ব পালন না করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সকাল সোয়া নয়টার দিকে মেডিক্যাল কলেজে গেলে তারা অনেককেই তাদের নিজ কার্যালয়ে পাননি। দুদক টিম প্রবেশের খবর পেয়ে অধ্যক্ষসহ অনেক চিকিৎসকই কলেজের প্রশাসনিক ভবনে আসতে শুরু করেন। এমনকি সকাল সোয়া ১০টার দিকেও চিকিৎসকরা অধ্যক্ষের কক্ষে বায়োমেট্রিক হাজিরা দিতে শুরু করেন।

এরপর দুদুক টিম কলেজ অধ্যক্ষের কাছে চিকিৎসকদের এক সপ্তাহের বায়োমেট্রিক হাজিরার তালিকা দেখতে চান। তা দিতে অস্বীকার করেন কলেজ অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান শাহীন। এ নিয়ে দুদকের কর্মকর্তার সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

দুদক টিম চলে যাওয়ার পরে কলেজ অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, শুনেছি দুইজন চিকিৎসকের নামে অভিযোগ পেয়ে তারা এখানে এসেছেন। তারা আমার রুমে এসে হঠাৎ করেই হাজিরা শিট চান। তবে আমি কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে সেটি দিতে পারি না, তাই আমি ডিজি মহোদয়কে বিষয়টি ফোনে অবহিত করি। তিনি আগে অবগত না করে হঠাৎ এসে এ কাগজ চাইতে পারে না বলে জানালে আমি হাজিরার কাগজ দেইনি। তখন দুদক কর্মকর্তা আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তারা আমাকে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা বলে অভিহিত করেন। আমার কক্ষে ঢুকে যে আচরণ করেছেন তা তারা করতে পারেন না।

মনিরুজ্জামান শাহিন চিকিৎসকদের দেরিতে অফিসের আসার বিষয় স্বীকার করে বলেন, যার যখন দায়িত্ব সেটা সঠিকভাবে পালন করছেন কিনা সেটা বিষয়। অনেক চিকিৎসক দেরিতে এসে দায়িত্ব পালন করে পাঁচটার সময়েও যান। রাতেও অনেককে থাকতে হয় তা কিন্তু কেউ বলেন না। করোনার সময় আমাদের মাসুম নামে যে চিকিৎসক নিজের জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করেছেন তার সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন দুদক কর্মকর্তা।

যদিও এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে বসে কোনো বক্তব্য দেননি দুদক কর্মকর্তারা। পরে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত বরিশাল জেলা কার্যালয়ের গিয়ে ডেপুটি পরিচালক দেবব্রত মণ্ডলের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, অভিযানের সামগ্রিক তথ্য জানতে হলে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে হবে। আমরা আমাদের কার্যক্রমের তথ্য সেখানে পাঠিয়ে দেবো। এক্ষেত্রে তিনি প্রধান কার্যালয়ে যোগোযোগের পরামর্শ দেন ।

তিনি জানান, নিয়মানুযায়ী আমরা কোনো অভিযান নিজ ইচ্ছাতে চালাতে পারি না। কেন্দ্রীয়ভাবে যে নির্দেশনা আসে সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করি। আর কোথায় কখন অভিযান হবে সেটা আগে থেকেও জানানো হয় না।
এদিকে মেডিক্যাল কলেজে দুদকের অভিযানের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, দুদক কর্মকর্তা শুরু থেকেই অধ্যক্ষকে স্যার হিসেবে সম্মোধন করে আসছিলেন। কিন্তু হাজিরার বিষয়টি জানতে চাওয়ায় এবং দুদক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে হাজিরা দিতে আসাদের ছবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি কিছুটা ঘোলাটে হয়ে যায়।

এদিকে দুদকের আভিযানিক টিম মেডিক্যাল কলেজ ত্যাগ করলে সেখানে জড়ো হতে থাকেন চিকিৎসক এবং মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষার্থীরা। পরে এ নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ অধ্যক্ষের সম্মেলন কক্ষে বিষয়টি নিয়ে জরুরি সভা করে বিএমপি।  

বিএমপি বরিশাল জেলার সভাপতি ডা. ইসতিয়াক হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় মেডিক্যাল কলেজ অধ্যক্ষ এবং বিএমএর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীনসহ অন্যান্য চিকিৎসক-শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় হঠাৎ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে দুদকের অভিযান এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে অসদাচরণের প্রতিবাদ জানান বিএমএ নেতারা। এ ঘটনায় দুদক টিমের বিচার দাবি জানিয়ে বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মরকলিপি দেওয়া সিদ্ধান্ত নেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২২
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।