ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

করোনা বাড়লেও উদ্বেগজনক নয়, প্রয়োজন তীক্ষ্ণ নজরদারি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২
করোনা বাড়লেও উদ্বেগজনক নয়, প্রয়োজন তীক্ষ্ণ নজরদারি

ঢাকা: দেশে করোনা সংক্রমণের হার গত কয়েকদিন থেকেই বাড়ছে। করোনার এ ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের হার উদ্বেগজনক না হলেও নিয়মিত এ ভাইরাসটিকে তীক্ষ্ণ নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দেশে করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) ছিল আট দশমিক ৩৪ শতাংশ। বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) শনাক্তের হার সাত দশমিক ৪০ শতাংশ। বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ছয় দশমিক ৯৪ শতাংশ। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ছয় দশমিক ৭১ শতাংশ। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ছয় দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং গত রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল চার দশমিক ৯৩ শতাংশ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার বাড়লেও বর্তমান ধরন আগ্রাসী ভূমিকায় নেই। যে হারে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে সেই তুলনায় অসুস্থতা এবং মৃত্যুর সংখ্যাও কম। সামান্য সর্দি কাশী এবং জ্বর হয়ে ভালো হয়ে যাচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তিরা। তবে যে কোন ভাইরাস প্রতিনিয়তই সে নিজের ধরন পরিবর্তন করে। বর্তমান করোনা ভাইরাসের যে ধরন রয়েছে সেটা পরিবর্তিত হয়ে মারাত্মক কোনো ধরনে পরিবর্তন হচ্ছে কি না সে জন্য নিয়মিত ভাইরাসটিকে পর্যবেক্ষণ (সার্ভিলেন্স) করা উচিত।   

এদিকে গত রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারের একদল গবেষক দেশে তিন জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের নতুন উপধরন 22D:Omicron/BA.2.75 শনাক্ত করেছে বলে জানান।  

গবেষক দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, BA.2.75 সাবভ্যারিয়েন্টে স্পাইক প্রোটিনে ওমিক্রনের BA.2 ভ্যারিয়েন্টের মতোই মিউটেশন দেখা যায়। তবে তার সঙ্গে দুটি রিভার্স মিউটেশন G446S এবং R493Q দেখা যায়।

ওমিক্রনের এ উপধরনটি জুলাই মাসে ভারতে প্রথম শনাক্ত হয়। গত আগস্ট মাসে এ উপধরনটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শনাক্ত হয়।  উপধরনটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহজেই ফাঁকি দিতে সক্ষম। এ জন্য মাস্ক ব্যবহারসহ কঠোরভাবে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনও বিকল্প নেই।

করোনার টিকা নেওয়া ব্যক্তিরাও এ উপধরন আক্রান্ত হচ্ছেন। আগামী দিনে এ উপধরন বর্তমানে সংক্রমণশীল অন্যান্য উপধরনের তুলনায় বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। তবে উপধরনকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও উদ্বেগজনক ধরন হিসেবে আখ্যায়িত করেনি।

করোনার নতুন কোন ধরণের কারণে দেশে সংক্রমণের হার বাড়ছে কি না জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা এবং প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুস্তাক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, জিনোম সিকোনসিং করে বোঝা যাবে নতুন কোন ধরণের কারণে সংক্রমণ বাড়ছে কি না। সারা পৃথিবীতে এখন ba.5 ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমণ হচ্ছে। বাংলাদেশেও সর্বশেষ যে ঢেউ তাতেও এ ধরনটি ছিল। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে যে ধরন শনাক্ত হয়েছে তা এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন না ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার মনিটরিং পর্যায়ে আছে। অর্থাৎ করোনার এ ধরনকে এখনও উদ্বেগজনক বলা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, গত দুই সপ্তাহ থেকে দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। যেহেতু এখন করোনায় বেশির ভাগ মানুষ গুরুত্বর অসুস্থ হচ্ছে না, হাসপাতালে যেতে হচ্ছে না তাই অনেকেই করোনা পরীক্ষা করাতে আসছে না। যাদের উপসর্গ আছে তারা সবাই পরীক্ষা করালে আরও বেশি হবে শনাক্তের হার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব হেলথ সায়েন্সের সাবেক উপাচার্য. চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, করোনার যে ধরনটি এখন রয়েছে এটা বিপদজনক মনে হচ্ছে না। এটা একটা দুর্বল ধরন। এতে আক্রান্ত হলে সাধারণ ঠাণ্ডা জ্বরের মতই কিছু উপসর্গ দেখা দিবে। তারপরেও আমাদের সাবধানে থাকা উচিৎ। নিয়মিত এ ভাইরাসকে সার্ভিলেন্সে রাখা দরকার। বিপদজনক কোন মিউটেশনে এটা মোড় নেয় কিনা? সংক্রমণ কম বেশি ওঠানামা করবে এটাই স্বাভাবিক।

তিনি আরও জানান, করোনা একেবারে নির্মূল হবার সম্ভাবনা খুবই কম। এটা কোথাও বাড়বে, আবার কোথাও কমবে। করোনার পরিপূর্ণ বিহেভিয়ার বুঝতে আমাদের আরও সময় লাগবে। তবে এটা পরিষ্কার যে যদি না আবার কোন বিপদজনক ধরন তৈরি হয় যার সম্ভাবনা এখনও তেমন একটা দেখা যায়নি।  তবে হতেও পারে। তাই করোনা ভাইরাসকে হালকাভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই যেহেতু ভাইরাসটির গতি বিধি এখন পুরোটা বোঝা যায়নি। যাদের বিভিন্ন কোমরবিডিটি রয়েছে এবং বয়স্ক যারা আছেন তাদের অবশ্যই সাবধানে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে নিয়মিত জিনোম সিকোন্সিং করে সব সময় নজদারি করতে হবে খারাপ কোন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২
আরকেআর/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।