ঢাকা : আমরা জানি আদার অনেক ধরণের ভেষজগুণ আছে। বাঙালির ঘরে দৈনন্দিন আদার ব্যবহারও কম নয়।
বাঙালির ঘরে আদার ব্যবহার আরো একধাপ বাড়িয়ে দিতে গবেষকরা যেন আরো গবেষণা করছেন এবং আদার গুণাগুণ বের করে চলেছেন।
সম্প্রতি পরিচালিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, দিনে একটি করে আদা পায়ুপথ বা অন্ত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে ১৫ জনের একটি দলকে প্রতিদিন আদা খেতে দেওয়া হয়। এভাবে ২৮ দিন দু’গ্রাম করে আদা খেতে দেন গবেষকরা। অন্যদিকে অপর ১৫ জনের দলটিকে একই সময়ে প্ল্যাসিবো ট্যাবলেট দেন।
ফলাফলে দেখা যায়, ১৫ জন প্ল্যাসিবো গ্রহণকারীর তুলনায় যারা প্রতিদিন আদা খেয়েছে সেই দলটির মাঝে পায়ুপথের প্রদাহ কম পরিলক্ষিত হয়েছে।
ভেষজ চিকিৎসক সুজানা রিক বলেন, তুলনামূলক কম ক্ষতিকর যেসব ক্যান্সার হয়ে থাকে তা প্রতিরোধে আদা খুবই কার্যকরী। আর গবেষণায় সেটিই প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি আদা মানুষের জীবনমান বৃদ্ধি করে। এছাড়া কম খরচে অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রতিদিন একটি করে আদা খাওয়াই যথেষ্ট।
‘আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চ’ এর একটি জার্নালে গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
আদার ছয়টি উপকারিতা :
ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ক্যান্সার সেন্টারে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, আদাগুড়ো ওভারিয়ান ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলে।
গর্ভাবস্থায় অসুস্থতা কমিয়ে দেয় : যেসব নারী প্রথম গর্ভধারণ করে কিংবা ১৯ থেকে ২৭ বছর পর্যন্ত গর্ভধারণের সময় প্রথমদিকে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে বলা যায় আদার বিকল্প নেই। গর্ভাবস্থায় বিশেষ করে বমি বমি ভাব, দুর্বলতা ও অরুচি কমাতে আদা বেশ উপকারী। ‘ধাত্রীবিদ্যা এবং গাইনোকলজি’ বিভাগের একটি জার্নালে গবেষণালব্ধ এ তথ্য প্রকাশিত হয়।
ভ্রমণকালীন অসুস্থতা রোধে : আমাদের দেশে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে জিনজার (আদা) গুড়োর বক্স পাওয়া যায়। সাধারণত এসব বক্স ভর্তি আদা রাস্তায় বিক্রি হয়ে থাকে। আসলে চলাচল করার সময় বমি ভাব থাকলে জিনজারের বক্স কিনে মুখে দিতে দেখা যায় অনেককে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্লেনে, বাসে, ট্রেনে বা বিভিন্ন যানবাহনে চলার সময় মোশন সিকনেসের কারণে বমি বমি ভাব হয়। এই বমি বমি ভাব কমাতে আদা বেশ কার্যকর।
বুকজ্বলা কমাতে : হজমে সাহায্যের জন্য এবং বুকজ্বলা কমাতে যুগ যুগ ধরে চীনারা আদার ব্যবহার করে আসছে। এটি তাদের একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি। চীনের এই প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি এখন অনেক দেশেই প্রচলিত। বুক জ্বালাপোড়া কমাতে তাই আদা খাওয়া হয়।
ঠাণ্ডা, জ্বর এবং ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা প্রতিরোধে : আদা ঠাণ্ডাজনিত অসুস্থতা রোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এক কাপ ফোঁটানো পানিতে এক ফালি তাজা আদা ও লেবু মিশ্রন খেলে ঠাণ্ডাজনিত হাঁচি, কাশি এবং জ্বর কমে যায়।
নারীদের মাসিক অসুস্থতা রোধে : ২০০৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, নারীদের মাসিক শুরুর প্রথম তিনদিন, চারবার আড়াইশ’ মিলিগ্রাম করে আদা খেলে পেটের ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। যা ওষুধ খেয়ে সম্ভব হলেও তার অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে যায়।
তাই আজ থেকে ঘরে আদা রেখে নিজেই হয়ে যান নিজের সেবক বা ডাক্তার। মনে রাখবেন শরীরের যত্নে আদার বিকল্প কিন্তু ওষুধ নয়।
বাংলাদেশ সময় : ১৪৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১২
সম্পাদনায় : কামরুন নাহার সুমি, নিউজরুম এডিটর/তানিয়া আফরিন, নিউজরুম এডিটর