ঢাকা: ৭ এপ্রিল, শনিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এবার দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্রবীণদের যতœ নিন: স্বাস্থ্য রক্ষায় এগিয়ে আসুন’।
১৯৪৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিওএইচও) প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে প্রতিবছর ৭ এপ্রিল বিশ্বব্যাপি এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। এবারের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের বিষয়ে ডাব্লিওএইচও বলেছে, ‘বিশ্বের প্রতিটি বৃদ্ধ এবং বৃদ্ধার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে, যেন তারা পরিপূর্ণ জীবন পায় এবং পরিবার ও সমাজের জন্যে হয়ে ওঠে সম্পদ।
বাংলাদেশে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা এবং প্রতিকূল আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা: আ ফ ম রুহুল হক।
দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। প্রবীণদের সমস্যা সমাধানে তথা দেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বানী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
দিবসটি উপলক্ষে শনিবার দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সকাল দশটায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী পর্ব। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা: আ ফ ম রুহুল হক। থাকবে স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদর্শনী।
বিকাল ৩টায় শিশু একাডেমীতে অনুষ্ঠিত হবে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা। ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়ক দ্বীপ সজ্জিতকরণ করা হবে। ট্রাক সজ্জিত করে আয়োজন থাকবে জারি গানের। দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও দিবসটি উদযাপনের জন্য রূপরেখা পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য দিবসের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক।
মন্ত্রী রুহুল হক বলেন, দেশের শহর ও গ্রাম সর্বস্তরেই প্রবীণদের স্বাস্থ্য সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের মধ্যে ক্রনিক ডিজিজ ও শারীরিক অক্ষমতাও বাড়ছে। পরিবার, সমাজ তথা দেশে এর প্রভাব পড়ছে।
তিনি বলেন, প্রবীণদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীল হয়ে বেদনায়ক জীবনযাপন করতে হয়। দেশের সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালে প্রবীণদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই।
বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, আগামী ৪ দশকে বিশ্বে ৬০ বা তার বেশি বয়সী প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১০ ভাগ থেকে ২২ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ বিশ্বে প্রবীণদের সংখ্যা ৮০ কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২’শ কোটি হতে পারে।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্যভুক্ত দেশসমূহে ৬০ বছরের অধিক বয়সের জনসংখ্যা ৮ ভাগেরও বেশি যা আগামী ২০২৫ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে শতকরা ১২ ভাগ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রবীণদের সঙ্গে পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় রাখতে হবে। সামাজিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাদেরকে সম্পৃক্ত রাখা উচিত। তাদের জন্য উপযুক্ত কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতাল থেকে প্রবীণদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে হবে। দু:স্থ প্রবীণদের পুনর্বাসদের ব্যবস্থা করা দরকার বলেও মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সম্পদের সীমাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন কারণে জনগণের কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। দেশ স্বাস্থ্যখাতে মোট জিডিপি’র ৩ দশমিক ১ শতাংশ ব্যয় হয়, যা উন্নত দেশ সমূহের তুলনায় অনেক কম।
তিনি জানান বর্তমানে দেশে স্বাস্থ্য খাতে ৩ হাজার ১২ জন মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র ১ জন চিকিৎসক। ২ হাজার ৬৬৫ জনের জন্য ১টি রোগী শয্যা, ৬ হাজার ৩৪২ জনের জন্য ১ জন নার্স রয়েছে। চিকিৎসকের সঙ্গে নার্সের আনুপাতিক হার এখনো সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা ; ০৬ এপ্রিল ২০১২
এমএন/
সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর