ঢাকা: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শরীর চর্চার মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে আরও সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় শিশুদের টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস থেকে সুরক্ষায় চিকিৎসাসেবায় আরও অভিজ্ঞতা বাড়ানোর কথা বলেন বক্তারা।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সাথে যৌথভাবে ‘চেঞ্জিং ডায়াবেটিস ইন চিলড্রেন (সিডিআইসি)’ কর্মসূচির এই ভিন্নধর্মী আয়োজন করেছে ডেনমার্ক ভিত্তিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নভো নরডিক্স।
আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এসট্রাপ পিটারসেন, নন-কমিনিকেবল ডিজিসের লাইন ডিরেক্টর রোবেদ আমিন।
বক্তারা ডায়াবেটিসের ঝুঁকির কারণগুলো সকলের সচেতনতার জন্য তুলে ধরেন। যার মধ্যে পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীর চর্চার অভাব অন্যতম।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, সিডিআইসির পরামর্শক সমন্বয়ক বেদোয়ারা জাবিন, বারডেম মহাপরিচালক অধ্যাপক কাইউম চৌধুরী, বাংলাদেশ ডায়বেটিস সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফ উদ্দিন এবং নভো নরডিক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড জেনারেল ম্যানেজার রাজর্ষী দে সরকার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে যা প্রায় ২ কোটি ২ লাখ হবে। প্রায় বেশির ভাগই জানে না তাদের ডায়াবেটিস আছে, যা তাদের সাস্থের ঝুঁকি বাড়ায়।
নভো নরডিস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড জেনারেল ম্যানেজার রাজর্শী দে সরকার বলেন, নিত্য নতুন উদ্ভাবন ও মানসম্পন্ন ওষুধ নিয়ে আসার মাধ্যমে বাংলাদেশে মানুষের ডায়াবেটিস চিকিৎসায় পরিবর্তন আনতে নভো নরডিস্ক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নিম্ন ও মধ্য অর্থনীতির দেশসমূহে ‘চেঞ্জিং ডায়াবেটিস ইন চিলড্রেন’ প্রচারণার আওতায় শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের উন্নত চিকিৎসার জন্য জীবন বাঁচানোর ওষুধের প্রাপ্তি নিশ্চিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ নভো নরডিক্স।
এই উদ্যোগের প্রাথমিক উদ্দ্যশ্য হলো দেশগুলোর জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোতে ডায়াবেটিস সেবার মান উন্নতকরণ এবং শিশুদের টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসর ক্ষেত্রে বিশেষ সেবা উন্নয়ন।
ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এসট্রাপ পিটারসেন বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১৭ হাজার ডায়াবেটিস টাইপ-১ আক্রান্ত বাচ্চা আছে। আজকে এ দিনে আমি তোমাদের সাথে থাকতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আমরা জানি, ডায়াবেটিস হলেও আমরা আশাবাদী হতে পারি, সেজন্য আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। এখন থেকে ২/৩ বছর আগে যখন এসেছিলাম, আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের নাতি অলিভারের গল্প বলেছিলাম। যে ১৪ বছর বয়সে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হয়েছে। সে তখন মেনে নিতে পারছিল না। এখন সে অভ্যস্ত। ডেনমার্কসহ সারা পৃথিবীতেই শিশুরা ডায়াবেটিস আক্রান্ত হয়। সিজিআইসি বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারের সঙ্গে একসাথে কাজ করার একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনামাফিক কাজ করছে। ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন এবং নভোনরডিস্ক বাংলাদেশে ফ্রি ইনসুলিন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এ রকম উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। ডায়াবেটিস আক্রান্ত বাচ্চাদের বলছি, তোমরা ডায়াবেটিসকে বাধা মনে করবেনা।
বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে ড্যাব, বিশ্ব ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশনের সাথে যৌথভাবে ‘সিডিআইসি’ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে নভো নরডিক্স। সারা দেশে ডায়াবেটিস সমিতি এবং ন্যাশনাল হেলথকেয়ার নেটওয়ার্কের আয়োজনে বিনামুল্যে ডায়াবেটিস নির্নয় ও সচেতনতা কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে নভো নরডিক্স।
সোমবার সকালে রাজধানীর রমনা পার্কে মানববন্ধন পরবর্তী আলোচনায় আসন্ন মহামারি প্রতিরোধে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সচেতনাতর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বক্তারা। আলোচনায় নেন চিকিৎসক, নার্স ও ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। এবারে দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘আগামীতে নিজেকে সুরক্ষায় ডায়াবেটিসকে জানুন’।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২২
এমকে/এমজেএফ