ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

সাইকেল চালিয়ে ২০ দেশ ঘুরেছেন ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৯ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৩
সাইকেল চালিয়ে ২০ দেশ ঘুরেছেন ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি সঞ্জয় ময়ূর

আগরতলা (ত্রিপুরা): যে বয়সে মানুষ পরিবার পরিজনদের সঙ্গে থেকে জীবন পার করে দেওয়া কথা ভাবে, সেই বয়সে বাইসাইকেলকে সঙ্গী করে বিভিন্ন দেশ ঘুরেছেন তিনি। সাইকেল চালিয়েই ২০টির বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি।

অবিশ্বাস্য এই কাজ করেছেন ভারতের নাগরিক সঞ্জয় ময়ূর। বয়স ৬৮, তবে বয়সকে সংখ্যা বানিয়ে তরুণদের মতোই উদ্যোমী, কঠোর পরিশ্রমী এই মানুষ।  

সঞ্জয়ের বাড়ি মহারাষ্ট্রের বোডানগর এলাকায়।  

বহু জায়গা ঘুরে সঞ্জয় এখন ভারতের আগরতলায়। আগরতলার রাস্তায় কথা বলেন বাংলানিউজের সঙ্গে।  

একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, গোটা ভারত ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গত ২ অক্টোবর মুম্বাই শহরের গেট অব ইন্ডিয়ার সামনে থেকে যাত্রা শুরু করেন। ইতিমধ্যে তিনি গোয়া, কর্ণাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, পন্ডিচেরি, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, উড়িষ্যা, পশ্চিমবাংলা, উত্তরপূর্বের সাত রাজ্য হয়ে আগরতলায় এসে পৌঁছেছেন।  

এরপর ত্রিপুরায় বেশ কিছুদিন কাটিয়ে আবার উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্য হয়ে লে লাদাক, জম্মু ও কাশ্মীর, রাজস্থান, গোজরাট ইত্যাদি রাজ্য ঘুরবেন। আগামি আগস্ট মাসে আবার নিজ পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ায় পরিকল্পনা রয়েছে তার।

এতো গেল সঞ্জয়ের নিজ দেশ ভারত ভ্রমণের কথা।
 
এর আগে তার সাইকেল ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে পাকিস্তান, আফগানিস্থান, কাজাকিস্থান, মিশর, লিবিয়া, তিউনেসিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, পর্তুগাল, স্পেন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, গ্রিস, তুরস্ক, সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন, ইসরায়েল ঘুরে এসেছে।

সাইকেল নিয়ে বিশ্বভ্রমণে সঞ্জয়ের মূল উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষ যাতে বেশি করে সাইকেল ব্যবহার করেন। কারণ, সাইকেল পরিবেশবান্ধব। তাছাড়া নিয়মিত সাইকেল চালালে সুস্থ ও সবল থাকা যায় বেশি সময়।

এ কথা জানিয়ে সঞ্জয় তার সাইকেলপ্রীতির বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন।

বললেন, ছোটবেলায় আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকার কারণে বিভিন্ন সময় সাইকেল চালানোর প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন পুরস্কার লাভের আশায়। এমনকি চাকরি জীবনেও তিনি অফিসের কাজে সাইকেল নিয়ে যেতেন। অতীতের দুঃখের কথা বলতে গিয়ে তার চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে।

তিনি জানান, বর্তমানে তিনি সফল ও সুখী। দেশ-বিদেশে ভ্রমণে থাকলেও সকাল বিকেল দুই বেলা করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়। পরিবারের সবার সহযোগিতার জন্য তিনি এভাবে ঘুরতে পারছেন। এই সাইকেলের জন্যই তিনি আজ পরিচিতি পেয়েছেন।  

এ পরিব্রাজক জানান, মহারাষ্ট্র সরকারের ভূমি জরিপ দপ্তরের অধীনে তহশিলদারের চাকরি করতেন। ২০১৩ সালে অবসর নেন। তারপর সাইকেল নিয়ে ভ্রমণ শুরু করেন। দেশ-বিদেশ ভ্রমণের যা খরচা তা তিনি নিজেই খরচ করেন, কারো কাছ থেকে কোন সহায়তা নেন না।

বয়স ৭০ছুঁই ছুঁই হলেও তার চোখে এখন অনেক স্বপ্ন আছে, এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি আগামীদিনে বই লেখার পরিকল্পনা রয়েছে। তাই প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা লিখে রাখেন ডাইরির পাতায়।  

চলার পথে তিনি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সহ সমাজের নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে দেখা করেন কথা বলেন, তার উদ্দেশ্য তুলে ধরেন সবার সামনে। চলার পথে মন্দির, মসজিদ, গির্জা, থানা যেখানে খুশি সেখানেই কাটিয়ে দেন রাত।

দেশ-বিদেশের পথে প্রান্তরে ঘুরতে বেরিয়ে এমন কোন অভিজ্ঞতা রয়েছে যা সারা জীবন মনে থাকবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন জীবনে প্রতি নতুন নতুন কিছু দেখছেন জানছেন।  

তিনি এখন যে সাইকেল চালিয়ে ঘুরছেন সেটি তার কয়েকজন বন্ধু মিলে উপহার হিসেবে দিয়েছে। তাই তিনি এর নাম দিয়েছে মিত্র প্রেম।

এতো বয়সে একা পাহাড়-পর্বত ভেঙ্গে মাইলের পর মাইল সাইকেল চালিয়ে এগিয়ে চলছেন, এভাবে চলা ফেরা করতে ভয় হয় না কখনো কি হয়ে যায়? 

এই কথা শুনে তিনি তার জীবনের একটি ঘটনার কথা বলেন, তখন তিনি চাকরি করছেন। একদিন হঠাৎ করে অফিসের ছাদ থেকে একটি সাপ তাদের সামনে এসে পড়ে। এই সাপটির মুখে একটি টিকটিকি ছিল। তখন তিনি সাপটিকে একটি লাঠি দিয়ে দূরে সরিয়ে দেন। এই পরিস্থিতিতে সাপ টিকটিকিকে ছেড়ে তাকে কামড় দিতে আসে। ততক্ষণে টিকটিকি দৌড়ে পালিয়ে বেঁচে যায়। এই ঘটনা তাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে যার মৃত্যু হওয়ার কথা ছিল এই টিকটিকি বেঁচে গেল সামান্য অসতর্ক হলে তার প্রাণ যেত। তখন তিনি অনুধাবন করেন সময় না এলে কোন পরিস্থিতিতেই মৃত্যু হবে না। এই কথাকে অনুপ্রেরণা করে নিয়েছেন তাই তিনি একা রাস্তায় চলার সাহস পান বলে জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৩
এসসিএন/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।