ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার দৃশ্যে আমি স্তম্ভিত: মমতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৩
উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার দৃশ্যে আমি স্তম্ভিত: মমতা

কলকাতা: ভারতের উত্তরপ্রদেশে পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমের সামনে রাজ্যসভার সাবেক এক সদস্য এবং তার ভাইকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় টুইট করে নিজের প্রতিক্রিয়া জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরপ্রদেশের নৈরাজ্য এবং আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার দৃশ্যে রীতিমতো স্তম্ভিত তিনি! 

রোববার (১৬ এপ্রিল) টুইটে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, উত্তরপ্রদেশে আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।

এই নৈরাজ্যের পরিস্থিতি দেখে আমি স্তম্ভিত। অপরাধীরা পুলিশ এবং সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতিতে আইন হাতে তুলে নিচ্ছে। যা চূড়ান্ত লজ্জার। আমাদের সাংবিধানিক গণতন্ত্রে এ ধরনের বেআইনি কাজের কোনও স্থান নেই।

শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাতে পুলিশের হেফাজতে থাকা দুই ভাই আতিক আহমেদ ও তার ভাই আশরাফকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে দুষ্কৃতীরা। ‘গ্যাংস্টার’ হিসেবে পরিচিত এ দুই ভাই অপহরণের একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায়। সাংবাদিকের বেশে ক্যামেরার সামনে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা টপকে গুলি চালায় তিন দুষ্কৃতী। এমন পরিস্থিতিতে যোগীরাজ্যের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।

প্রসঙ্গত, হত্যা ও হামলার মামলায় বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) আতিক আহমেদ ও তার ভাইকে গ্রেফতার করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাতে স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে মেডিকেল টেস্ট করানোর জন্য প্রয়াগরাজের একটি হাসপাতালে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছিল আতিক তার ভাই আশরফকে।

প্রিজন ভ্যান থেকে নামতেই, হাসপাতালের সামনে আতিক ও তার ভাইকে ঘিরে ধরেন সাংবাদিকরা। তাদের ভিড়েই সাংবাদিক সেজে মিশে ছিল তিন দুষ্কৃতী। পুলিশি এনকাউন্টারে আতিকের ছেলে আসাদের মৃত্যু ও তার শেষকৃত্যে যেতে না পারা নিয়েই আতিকদের নানা প্রশ্ন করছিলেন সাংবাদিকরা। তখনই দেখা যায় হঠাৎ একব্যক্তি হাত উঁচিয়ে এসে আতিকের মাথায় বন্দুক ঠেকান এবং ট্রিগারে চাপ দেন। একইভাবে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্করেঞ্জ গুলি করে হত্যা করা আতিকের ভাইকেও। এই ঘটনায় সানি, অরুণ এবং লবলেশ নামে তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে বহুজন সমাজ পার্টির বিধায়ক রাজু পাল খুনের ঘটনায় অভিযোগ ওঠে আতিক এবং তার ভাই আশরাফের বিরুদ্ধে। এরপর ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজু পালের খুনের একমাত্র সাক্ষী উমেশ পাল খুন হয়। উমেশ হত্যার অভিযোগ ওঠে আতিক এবং আশরাফের বিরুদ্ধে। উমেশ পালের হাত্যাকাণ্ডের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পুলিশ জানতে পারে, এই খুনের অন্যতম মাথা ছিলেন আতিকের পুত্র আসাদ এবং আতিকের দলবল। ক্রমে সেই হত্যাকাণ্ডের রহস্যর খুলতেই আতিক এবং আশরাফের নাম জড়িয়ে পড়ে।

ঘটনাচক্রে ১৩ এপ্রিলই পুলিশের এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় আতিকের তৃতীয় পুত্র আসাদের। তার এক সঙ্গী গুলামেরও মৃত্যু হয় একই ঘটনায়। জেলে বসেই ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন আতিক। আসাদের শেষকৃত্যে যাওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা মঞ্জুর করা হয়নি। সাংবাদিকরা এ সবই প্রশ্নই করছিলেন আতিকে। তারইমধ্যে তিন দুষ্কৃতী সাংবাদিক সেজে আতিক তার ভাই আশরফকে গুলি করে হত্যা করে।  

ইতোমধ্যে এ ঘটনার পরেই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এখনও গোটা উত্তরপ্রদেশজুড়ে রয়েছে চাপা উত্তেজনা। তবে এ ঘটনার পর সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্র সরকারের তরফে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে নয়া এসপিও-স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর। বিষয়টি তদারিক করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, এপিল ১৬, ২০২৩
ভিএস/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।