কলকাতা: বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। যদিও ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, শনিবার (৬ মে) দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ রোববার সেই ঘূর্ণাবর্ত পরিণত হবে নিম্নচাপে। সোমবার সেটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে উত্তর অভিমুখের মধ্য বঙ্গোপসাগরের দিকে এগোনোর পূর্বাভাস রয়েছে। মঙ্গলবার (৯ মে) গভীর নিম্নচাপটি মধ্য বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
ভারতের মৌসুম ভবনের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, তামিলনাড়ু বা অন্ধপ্রদেশ এই চার রাজ্যের কোনো একটি দিকে ধেয়ে আসতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোচা। ফলে সতর্ক হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও। ইতোমধ্যে মোচাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের কন্ট্রোল রুম চালু করেছে, রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্ন। সেখান থেকে নজরদারি চালানো হবে বলে জানা গিয়েছে।
তবে আবহাওয়াবিদদের মতে, নিম্নচাপে পরিণত হলে গতিপথ সুস্পষ্ট হবে। অর্থাৎ কোন অভিমুখ যাবে তা নিম্নচাপ ঘনীভূত হলেই স্পষ্টভাবে জানতে পারবেন আবহাওয়াবিদরা। তবে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে নাম হবে মোচা। এই মোচা নামটি দেওয়া হয়েছে ইয়েমেন থেকে। ইয়েমেনের বন্দর শহর মোকা থেকে নেওয়া হয়েছে। এক সময় এই শহর কফি ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্র ছিল।
এর প্রভাবে শনিবার আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রোববার ও সোমবার তুমুল বৃষ্টি হতে পারে ওই দুই দ্বীপপুঞ্জ এলাকায়। বৃষ্টির সঙ্গে দমকা ঝড়ো হাওয়া বইবে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। হাওয়ার গতিবেগ থাকবে ৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। সোমবার সেই ঝড়ো হাওয়া গতিবেগ ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে বলে, অনুমান আবহাওয়াবিদদের।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ইতোমধ্যে আগামী কয়েকদিন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে পর্যটক ও মৎস্যজীবীদের। দ্বীপপুঞ্জ সংলগ্ন সমুদ্রে আগামী সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। যারা সমুদ্রে রয়েছেন তাদের রোববার বিকেলের মধ্যে উপকূলে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
একইভাবে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় শনিবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার (১১ মে) পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের প্রবেশ নিষেধ বলে জানিয়েছে দিল্লির মৌসুম ভবন। ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে ওই সময়। এর পাশাপাশি ভেসেল পরিষেবা এবং সমুদ্র তীরবর্তী বিনোদনমূলক পর্যটন সম্পর্কিত ক্রিয়া-কলাপ বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তৎপর হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনও। দুর্যোগ সামলাতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি উড়িষ্যাতেও তৎপরতা শুরু হয়েছে। সে রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলিকে আগাম প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত কয়েক বছরে মে মাসেই একের পর এক ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। ২০২০ সালে ধেয়ে এসেছিল ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’। যার তাণ্ডবে পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। লণ্ডভণ্ড হয়েছিল কলকাতাও। পরের বছর ২০২১ সালে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’। ২০২২ সালের মে মাসে তৈরি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’। ওই বছরের অক্টোবর মাসে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’। আশঙ্কা সত্যি হলে, আবারও মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’ ধেয়ে আসতে পারে পশ্চিমবঙ্গের দিকে।
১৯৩৩ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ