ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ভারত

রাস্তায় ফ্রিজ বসিয়ে ‘ফ্রি ঠাণ্ডা পানি’ পান করাচ্ছেন তৌসিফ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৫ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২৩
রাস্তায় ফ্রিজ বসিয়ে ‘ফ্রি ঠাণ্ডা পানি’ পান করাচ্ছেন তৌসিফ ছবি- ভাস্কর সরদার

কলকাতা: পথিক; একটু জলের খোঁজ করছিলাম, বেজায় তেষ্টা পেয়েছে। বৃদ্ধ; তা তো পাবেই, ভালো জল যদি হয় তা দেখলেই তেষ্টা পায়, নাম করলেই তেষ্টা পায়, ভাবতে গেলেও তেষ্টা পায়।

কত জল খেলাম কলের জল, নদীর জল, ঝরণার জল, পুকুরের জল কিন্তু মামাবাড়ির জল অমনটি আর কোথাও পাইনি।  

সুকুমার রায়ের ‘অবাক জলপান’ গল্পে একটু পানি পান করতে গিয়ে কতইনা নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল পথিককে। সেই পানীয় জলের সমস্যা এখনো রয়ে গেছে কলকাতায়।

অপরদিকে, বৈশাখ শেষ হয়ে জ্যৈষ্ঠের আগমন। মাঝেমধ্যে কালবৈশাখীর আবির্ভাব হলেও প্রতিনিয়তই বাড়ছে গরমের তীব্রতা। বলতে গেলে, তৃষ্ণায় ‘কলিজা’ ফাটছে পথচারীদের। উপায় একটাই, কিনে খাও নামিদামি কোম্পানির বোতলবন্দী পানি। তবে মন্দার বাজারে কতো জনেরই বা সেই সামর্থ্য হয় যে, কিনে পানি খাবে!

এহেন পরিস্থিতিতে পথ চলতি সাধারণ মানুষকে স্বস্তির পানি খাওয়াতে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন কলকাতার সমাজসেবী হিসেবে পরিচিত তৌসিফ রহমান। ঠাণ্ডা পানির যোগান দিতে সিপিআইএম সদর দপ্তর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের রাস্তায় নিজের উদ্যোগে বসিয়েছেন ফ্রিজ। সেখানে রাখা আছে ফিল্টার করা বোতলবন্দী ঠাণ্ডা পানি। আবার আশেপাশের স্থানীয়রাও নিজের মতো করে রেখে দিচ্ছেন পানির বোতল।  

পানি যাতে ঠাণ্ডা থাকে, তার জন্য সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা হয়েছে ফ্রিজ। আর এই ফ্রিজের ওপর লিখে দেওয়া হয়েছে, বিনামূল্যে ঠাণ্ডা পানি। অর্থাৎ পথচারীরা যে যার প্রয়োজনে সেই পানি পান করতে পারেন।

তৌসিফ রহমানের অভিমত, এলাকায় অনেক স্কুল রয়েছে। পথযাত্রীরা যাতে যাতায়াতের পথে ঠাণ্ডা পানি পান করতে পারেন, সে জন্যই এই ব্যবস্থা। গত বছরের এমন সময়েও ফ্রিজ বসানো হয়।  

নিজের খরচে পথচারীদের ঠাণ্ডা পানি পান করাচ্ছেন এই যুবক। এছাড়াও আরও নানা সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তৌসিফ।

কেন এমন উদ্যোগ? তৌসিফ জানান, হিন্দু-মুসলিম যাই বলুন না কেন, সবাই আল্লাহর সৃষ্টি। আর হাদিসে আছে, আল্লাহর সৃষ্টির সেবা করলে সওয়াব মিলবে। আমি সেই সওয়াবের আশায় মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি।  

কলকাতার এই যুবকের বার্তা, উন্নয়নের জন্য শুধু সরকারের দিকেই ভরসা করলে হবে না। নিজেদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তবেই টিকে থাকবে মানুষ। টিকে থাকবে সমাজ ব্যবস্থা।

তৌসিফের সমাজ সেবামূলক কাজের এখানেই শেষ নয়। এর আগে করোনায় লকডাউনের সময় ৫৬৫ দিন ধরে গরীব সাধারণকে রান্না করা খাবার খাইয়েছেন তিনি। পথশিশু, গরীব, রাস্তায় নোংরাকুড়ানীদের জন্য কাজ করেন তৌসিফ। তার সহযোগিতায় পথেই যাদের বাস, এমন পথ শিশুদের ইংরেজি ভার্সন স্কুলে লেখাপড়ার ব্যবস্থাও করেছেন।  

তার অভিমত, বাংলা-হিন্দি-আরবি-উর্দু তো শিখবেই। কিন্তু, বিশ্বজুড়ে ইংরেজির বাজার। পথশিশু বলে তাদের মেধা কিন্তু কম নয়। কে বলতে পারে, কাল এদের মধ্যে কেউ একজন খ্যাতনামা হবে না!

ছবি- ভাস্কর সরদার

মুসলিম অধ্যুষিত এই অঞ্চলে মাত্র একটি হিন্দু পরিবারের জন্য দুর্গা পূজার আয়োজন করে থাকেন তৌসিফ। ওই এলাকায় করেছেন পথ লাইব্রেরিও। দীর্ঘক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করা যাত্রীরা যাতে মোবাইলে না মজে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করেন, তার জন্য করেছেন বাসস্টপ লাইব্রেরি।  

এছাড়াও কলকাতার রাজাবাজার এলাকার খালপাড়ের নারীদের জন্য নির্মাণ করেছেন ৪০০ শৌচাগার। পেয়েছেন এইচডিএফসি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড। এমনকি লিমকা বুকস অব রেকর্ডেও নাম রয়েছে তৌসিফের।

এছাড়াও আরও পরিচয় আছে, আদ্যোপান্ত মমতাপন্থী তৌসিফ। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গেও সদ্ভাব আছে তার। কিন্তু, সরাসরি রাজনীতিতে না গিয়ে ব্যবসার পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কাজকেই বেছে নিয়েছেন তৌসিফ।

তার কথায়, আমার সাধ্য যতোখানি, ততোখানিই করি। প্রয়োজনে সরকারি সুযোগ-সুবিধাও নিয়ে থাকি প্রান্তিক মানুষদের জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২৩
ভিএস/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।