ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

কলকাতায় অভূতপূর্ব সাড়া পেল ‘মুজিব’

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২৩
কলকাতায় অভূতপূর্ব সাড়া পেল ‘মুজিব’ কলকাতার সিনেমার কলাকুশলীদের সঙ্গে ‘মুজিব’ সিনেমার প্রধান চরিত্র আরিফিন শুভ। ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা: ভারতে শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) মুক্তি পেয়েছে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমা। পশ্চিমবঙ্গের চল্লিশটি প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর এ বায়োপিক।

সবমিলিয়ে ভারতের ৪৫০টির বেশি হলে বাংলা ও হিন্দি ভাষায় সিনেমাটি প্রদর্শিত হবে। তার আগে বুধবার (২৫ অক্টোবর) মুম্বাই এবং বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কলকাতায় সিনেমাটির প্রথম শো দেখানো হয়েছে। যেখানে যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছে এই সিনেমা।

বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীকে ভারতীয় নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল কতটা তুলে ধরতে পারছেন, এটাই ছিল কলকাতাবাসীর প্রধান কৌতূহল। বৃহস্পতিবার সিনেমা দেখে তাকে দশে দশ দিলেন শহরবাসী। শুধু তাই নয়; বঙ্গবাসীর অভিমত, পশ্চিমবঙ্গে নতুন একটি পর্ব শুরু হল—যার নাম ‘মুজিব পর্ব’।  

প্রথম প্রদর্শনীর দর্শকরা বলেছেন, ‘আমরা আরিফিন শুভর চরিত্রায়নের মধ্য দিয়ে মুজিব পর্বে প্রবেশ করেছিলাম। ইতিহাসের পাতা থেকে স্বয়ং যেন আমাদের চোখের সামনে উঠে এসেছিলেন জীবন্ত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার। ঘটনাপ্রবাহ আকারে সামনে আসছিল তৎকালীন রাজনৈতিক ব্যবস্থা। ’ 

মুখ্য ভূমিকা থেকে অতি ছোট চরিত্র, প্রত্যেকের অভিনয় কলকাতাবাসীর মন ছুঁয়ে গেছে। সিনেমা শেষে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বের হওয়ার সময় দর্শকদের আলাপচারিতায়ই তা প্রকাশ পাচ্ছিল।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কলকাতায় বাংলা সিনেমার ইতিহাসে ‘মুজিব’ একটি নজির গড়েছে। ওটিটির দাপটে সাধারণত বাংলা সিনেমা কলকাতাবাসীকে খুব একটা হলমুখী করতে পারছে না। হল মালিকদের বর্তমান ভরসা বলিউড আর দক্ষিণী ছবি। সেখানে বাংলা ছবি হিসেবে মুজিব শহরবাসীর যথেষ্ট সাড়া পেয়েছে। বৃহস্পতিবার একবারের জন্য ছবিটি দেখানোর কথা ছিল দক্ষিণ কলকাতার একটি মাল্টিপ্লেক্স হলে। কিন্তু দর্শকের চাপে অ্যাক্রোপলিস মলের দুটি মাল্টিপ্লেক্স হল খুলে দেওয়া হয়। দুটি প্রেক্ষাগৃহে একসঙ্গে দেখানো হয় মুজিব।  

উদ্যোক্তাদের অভিমত, প্রথমদিন এমন ভিড় হবে ধারণা করতে পারেননি তারা। যে কারণে কোয়েল মল্লিকের ‘নীতিন মাসি’ ছবিটি বন্ধ করে একসঙ্গে দুটি হলে ‘মুজিব’ চালাতে হলো।

ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন—এনএফডিসির কলকাতায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তরঙ্গ মেহাতা বাংলানিউজকে বলছিলেন, ‘বাণিজ্যিক সফলতা কতটা আসবে তা সময় বলবে। তবে ছবিটি ভারতে যথেষ্ট প্রশংসা পাচ্ছে। মুম্বাইয়ের প্রিমিয়ার শোতে বলিউডের কলাকুশলী থেকে সাধারণদের মধ্যে যে সাড়া আমরা পেয়েছি তখনই আন্দাজ করতে পেরেছিলাম পশ্চিমবঙ্গে প্রাপ্তিটা বেশি হবে। এ ছবি ভারতে নতুন মাইলফলক ছোঁবে বলে ধারণা করছি। ’

এই অভূতপূর্ব সাড়া প্রসঙ্গে অভিনেতা আরিফিন শুভ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটা তো শুধু বাংলাদেশের মানুষের গল্প নয়, এটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরও গল্প। আমি ধারণা করেছিলাম ভারতে ভালো সাড়া পাবো। আমি জানি সবচেয়ে বেশি রেসপন্স পাবো এই পশ্চিমবঙ্গ থেকে। ’

দর্শকরা বলছিলেন, সাধারণত মাল্টিপ্লেক্স হল মানে পপকর্ন আর কোমল পানীয় সহযোগে মুভি উপভোগ করা। সেদিক থেকেও মুজিব সিনেমা নতুন নজির দেখালো। ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শক তার আসন থেকে ওঠার চিন্তাও করেননি। এমনকি সিনেমার কয়েক মিনিটের বিরতিতেও দর্শক বসেছিলেন নিজের আসনে।  

ছবির শেষ দৃশ্যে ফুটে উঠছে ১৫ আগস্টের কালরাতের ঘটনা। যে রাতে বিপথগামী কিছু সেনা সদস্য নৃশংসভাবে হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের। অসাধারণ ক্যামেরা মুভমেন্ট শিহরণ জাগায় দর্শকহৃদয়ে। ব্যাকগ্রাউন্ডে শান্তনু মৈত্রর মিউজিকে একটি বেদনাদায়ক গান পরিবেশকে করে তোলে আরও ভারী।

কয়েকটা দৃশ্য আগে দেখানো হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে দেশটির ঢাকার হাইকমিশন সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন বঙ্গবন্ধুকে। ‌বঙ্গবন্ধু তা উড়িয়ে দিচ্ছেন এই বলে যে—হত্যা তো দূর, বাঙালি কখনো তার বিদ্বেষীও হতে পারে না। খুবই ছোট্ট দৃশ্য, কিন্তু ততটাই সাবলীল। মনে গেঁথে রাখার মতো। যার প্রমাণ মিলল ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া অয়নের কথায়। অয়নের মা-বাবা টলিপাড়ায় সিরিয়াল জগতের মানুষ। ছবি শেষে বাবার কাছে তার প্রশ্ন, ‘বঙ্গবন্ধু যদি একবার ওনার কথাটা শুনতেন তাহলে হয়তো এরকম হতো না। ’ অয়নের বাবা যেন কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

বঙ্গবন্ধুকে চরিত্রে ফুটিয়ে তুলতে নিজেকে কতটা ভাঙতে-গড়তে হয়েছে? এর উত্তরে আরিফিন শুভ বলেন, ‘অন্যান্য চরিত্র কাল্পনিক। আর এটা একজন রক্ত মাংসের চরিত্র, একজন জাতির পিতার চরিত্র। যাঁর চেহারা ও ব্যক্তিত্ব দুই বাংলার মানুষের মনে গেঁথে আছে। শ্যাম বেনেগাল এক টেকের মানুষ। কেটে-ছেঁটে এডিট করেন না। যতবার ভুল হয়েছে ততবার প্রথম থেকে শ্যুট করতে হয়েছে। ’

দর্শকদের ভাষ্যে, সিনেমার কোরিওগ্রাফি, ক্যামেরার কাজ, ফ্রেমিং, মেকাপ-এককথায় প্রশংসার। তবে আরেকটু সময় নিয়ে কাজটা করলে এ সিনেমা ভিন্নমাত্রা পেতো। ভারতবাসী বঙ্গবন্ধুকে চেনে বইয়ের পাতায়। সিনেমার পর্দায় তার চরিত্রায়ন বঙ্গবন্ধুকে জানার গভীর আগ্রহ তৈরি করবে ভারতীয়দের মধ্যে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২৩
ভিএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।