ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

অধিক আসনে লড়তে চলেছে বিজেপি, আসন সমঝোতায় ভুগছে ‘ইন্ডিয়া’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২৪
অধিক আসনে লড়তে চলেছে বিজেপি,  আসন সমঝোতায় ভুগছে ‘ইন্ডিয়া’

কলকাতা: সব ঠিক থাকলে আগামী এপ্রিল-মে মাসে ভারতের সংসদ নির্বাচনের (লোকসভা নির্বাচন) সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তার আগেও হয়ে যেতে পারে।

এমন জল্পনাও শোনা যাচ্ছে। বিজেপির পূর্ব নির্বাচনী ইস্তেহার অনুযায়ী, আগামী ২২ জানুয়ারি উত্তরপ্রদেশে রাম মন্দির উদ্বোধন। তারপরেই নাকি নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল ঘোষণা করে দিতে পারে। তাই যদি হয়, তবে মার্চ -এপ্রিলেই সম্পন্ন হয়ে যাবে ভারতের সংসদ নির্বাচন।

সেই নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় কেন্দ্রের ক্ষমতাশীল দল বিজেপি। সাড়ে ৪শ'র বেশি আসনে দলীয় প্রার্থী দিতে চায় তারা। অন্যদিকে কংগ্রেস, তৃণমূল, আমআদমি পার্টি, বামদলগুলো সহ ২৭ দলের বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স) জোটের দলগুলো একত্রে তিন শতাধিক আসনের লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।

তবে শেষ পর্যন্ত ইন্ডিয়া জোট কি ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তা বুঝতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। ইতিমধ্যে প্রায় একলা চলো নীতি নিয়ে ফেলছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল।

শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) দল প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে নেতা কর্মীদের একপ্রকার বুঝিয়ে দিয়েছেন,  প্রয়োজনে রাজ্যের ৪২টি আসনে একলা লড়াই জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কোনো ভাবেই কংগ্রেসকে আসন ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

ফলে কংগ্রেসের ক্ষেত্রে মমতা যদি এমন ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তাহলে বামেদের কি হবে? কারণ বিরোধীরা রাজ্যভিত্তিক জোট হিসেবে লড়াই করলে, পশ্চিমবঙ্গের নিরিখে বাম এবং কংগ্রেসে সঙ্গে আসন সমঝোতা করতেই হবে মমতাকে। আর তা যদি না হয় তাহলে বাংলায় ইন্ডিয়া জোট থাকবে না। তাতে চাপ বাড়বে গোটা ভারতেই বিজেপি বিরোধী  ইন্ডিয়া জোটে। ফলে সেই জোটের সমীকরণ বুঝতে আরও সময় কিছুটা লাগবে। তার উপর নির্বাচন এগিয়ে এলে সেটা জোটের জটিলতা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা।

তবে বিজেপির নিরিখে গত সংসদ নির্বাচনে (২০১৯ সাল) ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৪৩৬টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি। এরমধ্যে ৩০৩ আসনে জয় পায় তারা। অর্থাৎ বিজেপির ঝুলিতে যায় ২২ দশমিক ৯ কোটি ভোট, প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ।

অন্যদিকে, গত নির্বাচনে ৪২১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল কংগ্রেস। তাদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ১১ দশমিক ৯৪ কোটি। যদিও ইন্ডিয়া জোটের নিরিখে এবারে শতাব্দী প্রাচীন দলটি অনেক কম আসনে লড়তে চায়। জানা যাচ্ছে, মোট ২৯০ আসনে ফোকাস করেছে কংগ্রেস।

সেখানে সাড়ে চারশোর বেশি আসনে লড়তে চলছে বিজেপি একাই। বাকি আসন তারা ছাড়বে শরিকদের। মূলত, গতবারের তুলনায় এবার বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট শরিক দলের সংখ্যা কমে গেছে। সেসব রাজ্যে বিজেপি দলীয় প্রার্থী দিতে পারে। যেমন পাঞ্জাব রাজ্যে শিরোমণি আকালি দল, বিহারে জনতা দল ইউনাইটেড, মহারাষ্ট্রে শিবসেনা, তামিলনাড়ুতে এআইএডিএমকে এবং রাজস্থানে আরএলপি মতো দলগুলি একসময় বিজেপির জোটে থাকলেও এবার তারা নেই।

গত নির্বাচনে বিহারের ৪০ লোকসভার আসনের মধ্যে ১৭ আসন প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি। একইভাবে মহারাষ্ট্রের ৪৮ আসনের মধ্যে ২৫ আসনে, তামিলনাড়ুতে ৩৯ আসনের মধ্যে ৫ আসন এবং পাঞ্জাবের ১৩ আসনের মধ্যে মাত্র ৩ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি। বাকি আসন ছিল ছেড়ে দিয়েছিল তাদের জোট শরিকদের।

আর এই সাড়ে চারশো আসনে বিজেপি, ভোটের লড়াইতে হাতিয়ার করতে চলেছে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীর জনপ্রিয়তা, জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার, ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন এবং একাধিক উন্নয়নমূলক কেন্দ্রীয় প্রকল্প। তাদের ধারণা, জনসমক্ষে ঠিকঠাক প্রচারে আনলে গতবারের ৩০৩ আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।

তার ওপর ২০২৩ সালের শেষের দিকে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্রিশগড়ের মত রাজ্যগুলোর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে।  
সেইসব অঙ্ক কষে অধিক আসনে লড়তে চায় বিজেপি। দলটির লক্ষ্য, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে শতকরা ৫০ শতাংশের বেশি ভোট সংগ্রহ করা। ফলে ভারতের নিরিখে এই মুহূর্তে মোদীর যে জনপ্রিয়তা, তাতে ইন্ডিয়া জোট যদি নিজেদের মধ্যে আসন বন্টনে সমঝোতা না করতে পারে,  সেক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতায় আসার বিষয়ে প্রশ্ন চিহ্ন থাকবে। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, ২০ জানুয়ারি ২০২৩ 
ভিএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।