ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

ঈদে কলকাতায় নয়নার ১৭ পদের বাংলাদেশি খাবার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৪
ঈদে কলকাতায় নয়নার ১৭ পদের বাংলাদেশি খাবার

কলকাতা: ঈদুল ফিতর দোরগোড়ায়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে ঈদ উৎসবের।

এই খুশির উৎসবে বাহারি আয়োজনে প্রস্তুত কলকাতা। উৎসবের আলো আর খাবারের আনন্দ চেটেপুটে উপভোগ করা শুধু সময়ের অপেক্ষা। ঈদ ঘিরে নানা সাজে বর্ণিল এখন কলকাতা। এই বর্ণিল মুহূর্তে মুখরোচক নানান খাবার নিয়ে হাজির শেফ নয়না আফরোজ। কলকাতার মেয়ে বাংলাদেশের বউ নয়না তার রন্ধনশিল্পের কারণে এরই মধ্যে যথেষ্ট পরিচিতি কুড়িয়েছেন। ঈদ উপলক্ষে কলকাতার একটি অভিজাত বাঙালি রেস্তোরাঁর সঙ্গে জোট বেঁধে তিনি এনেছেন বেশ রকমের বাংলাদেশি খাবার।

বিগত বছরগুলোয় নানা উপলক্ষে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার জনপ্রিয় খাবার শহরবাসীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন নয়না। এর আগে খুলনার চুইঝালের খাসির মাংস, মুন্সিগঞ্জের আদলে ইলিশ লেজের ভর্তা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বেগুনসিরাজী, পদ্মাপাড়ের ইলিশ পোলাও ইত্যাদি কলকাতার বাসিন্দাদের মুখে তুলে দিয়েছেন তিনি। সেসব পদ এখন বেশ জনপ্রিয় ‘সিটি অব জয়’-এ। গত পূজোয়ও বাংলাদেশের নানান রকম ভর্তা এবং ডালের সঙ্গে কলকাতাবাসীকে পরিচয় করিয়েছেন নয়না। এবারের ঈদে খাবারের সম্ভারেও রয়েছে বাঙালি আভিজাত্য।

উৎসব পার্বণে নয়নার নিবেদন—হাঁড়ি কাবাব, জালি কাবাব, মাংসের দইবড়া, হালিম, পাঁঠার পিঠালি, খাসির পোলাও, হাঁসের ইয়াকনি পোলাও, রুই মাছের পোলাও, বুটের পোলাও, খুদের পোলাও, নাল্লি কোরমা, দেশি মুরগির ঝোল, ইলিশ কোরমা, ক্ষীর সেমাই, পেঁপের পায়েস, কাঁচা আমের হালুয়া, শাহি টুকরাসহ আরও কয়েক ধরনের ভাজাপোড়া খাবার।

নিজের ঈদ আয়োজন প্রসঙ্গে নয়না বলেছেন, এবারে ১৭ রকমের পদ করা হয়েছে। আমাকে সহযোগিতা করেছেন কলকাতার ২২ জন শেফ। মূলত ঈদের দিন যে ধরনের খাবারগুলো বাংলাদেশে হয়ে থাকে, তারই কয়েক ধরনের খাবারের সঙ্গে আমি কলকাতার মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।

ভারতে তার একাধিকবার কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে নয়না বলেছেন, অনেক জায়গায় আমি কাজ করেছি। বিশেষ করে কলকাতার বাইরে যে কাজগুলো করেছি ওখানে সব সময় একটা স্রোতের বিপরীতে গিয়ে কাজ করতে হয়। কী চাইছি তা বোঝাতে খুব অসুবিধা হয়। কিন্তু কলকাতার সিক্স বালিগঞ্জ প্লেস রেস্তোরাঁ একেবারেই ভিন্ন। তারা যথেষ্ট হেল্পফুল এবং আমাকে সহযোগিতা করেন। যে কারণেই দ্বিতীয়বার এদের সঙ্গে যুক্ত হলাম।

ঈদ উপলক্ষে হলেও এরই মধ্যে কলকাতার এই রেস্তোরাঁ পাওয়ায় যাচ্ছে বাংলাদেশি খাবার। উৎসবের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘বাংলাদেশের পোলাও পায়েস পার্বণ’।

কলকাতার জনপ্রিয় ফুড ভ্লগার অভিজিৎ বিশ্বাস। বাবা একদা ছিলেন ঢাকার এবং মা ময়মনসিংহের। কিন্তু অভিজিতের কোনোদিন বাংলাদেশ যাওয়া হয়নি। বাংলাদেশি খাবারের সঙ্গে যতটুকু তার পরিচয় তা বাসাতেই। কিন্তু তাতেও কলকাতার ছাপ পড়ে গেছে বলেই মনে করেন অভিজিৎ। তার ওপর কলকাতার অনেক জায়গায় বাংলাদেশি বলে যে খাবারগুলোর চল রয়েছে, তা যে বাংলাদেশি নয় তা বোঝেন অভিজিৎ।

তিনি বলেছেন, এখানে এসে স্বাদের তারতম্য বুঝতে পারছি। তিনি বলেন, একজন ফুড ভ্লগার হওয়ার কারণে সারাদিন খাবারের সঙ্গে থাকতে হয়। বিভিন্ন খাবার আমাদের চেখে দেখতে হয়, তারপর রেটিং দিতে হয়। নয়না আফরোজের সঙ্গে আমি কোনোদিন মুখোমুখি হইনি। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তার নাম এবং পরিচয় জেনেছি। ফলে এবারে যখন জানতে পারলাম বাংলাদেশের খাবার এই রেস্তোরাঁয় পাওয়া যাচ্ছে, চলে এলাম। মূলত বাংলাদেশি বলে কলকাতায় আমরা যা খাচ্ছি আর আমাকে যা যা পরিবেশন করা হয়েছে তার মধ্যে জমিন-আসমান ফারাক। এখানে এত সুন্দর ব্যালেন্স অব ফ্লেভার আর এত ইউনিকনেস, যে বাংলাদেশে খাবার কাকে বলে সেটা বুঝতে গেলে একবার খেতে হবে।

চন্দ্রিমাও একজন ফুড ভ্লগার। শুধু বাংলাদেশি খাবারের টানে দ্বিতীয়বার রেস্তোরাঁয় এসেছেন। তিনি বলেন, প্রতিটি খাবার সুন্দর এবং খুবই মুখরোচক। যাকে টেস্টি বলা যায়। তবে আমার ডেজার্টের মধ্যে পেঁপের পায়েস অসাধারণ লেগেছে। আমি কোনোদিন ভাবিনি কাঁচা পেঁপে আর দুধ দিয়ে যে এরকম ক্ষীর বা পায়েস বানানো যায়। এক কথায় অসাধারণ।

চাহিদা কেমন? এ বিষয়ে রেস্তোরাঁর ম্যানেজার রাজকুমার বলেন, প্রত্যেকটা আইটেমের ডিমান্ড আছে। গেস্ট এর ফিডব্যাক ভালো। বিশেষ করে স্টার্টারে হাঁড়ি কাবাব সব থেকে ভালো চলছে। এই প্রিপারেশনটা হয় মাটির হাঁড়িতে এবং কাঠের জালে। এর ফিডব্যাক খুবই ভালো। এছাড়া হাঁসের পোলাও, খাসির পোলাও খুব চলছে। রুই পোলাও খেয়েও অনেকে জানতে চাইছেন, ইলিশের হয় না? নাল্লি কোরমারও ভালো ফিডব্যাক পাচ্ছি। এছাড়া ডেজার্টের মধ্যে পেঁপের পায়েসের সবথেকে ইউনিক ফিডব্যাক পাচ্ছি।

সব মিলিয়ে নয়নার নিবেদনে কলকাতাবাসী বেশ উপভোগ করছেন বাঙালি খাবার। নয়নার বেড়ে ওঠা কলকাতায়।  মায়ের হাতেই রান্নার হাতেখড়ি। পরে বাংলাদেশে বিয়ে। এরপর খাবারের টানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ঘোরা। আর সেই সব স্বাদ তুলে দিচ্ছেন কলকাতাবাসীর মুখে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২৪
ভিএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।