কলকাতা: বহুল আলোচিত কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজের নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দীর্ঘ পাঁচ মাস পর দোষী সাব্যস্ত করা হলো সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাইকে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে কলকাতার শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস অভিযুক্ত সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
২০ জানুয়ারি তার সাজা ঘোষণা হবে। বিচারক সঞ্জয়কে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সব তথ্য তার বিরুদ্ধে রয়েছে। ফলে সাজা তাকেই পেতেই হবে।
এদিন মাত্র ১২ মিনিটের শুনানি হয়। এতে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারায় ধর্ষণ, ৬৬ ধারায় ধর্ষণের সময় আঘাত করে হত্যার চেষ্টা এবং ১০৩(১) ধারায় খুনের অভিযোগে সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
আগামী সোমবার তার সাজা ঘোষণা হবে। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে ফাঁসি এবং সর্বনিম্ন সাজা হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
যদিও আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন সঞ্জয় রাই। বিচারক বলেন, সিবিআই যা প্রমাণ দিয়েছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে আপনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। আপনাকে শাস্তি পেতেই হবে।
জবাবে সঞ্জয় বলেন, আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমাকে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা যেমনটা বলেছেন, আমি সেই মতোই কথা বলেছি।
সঞ্জয়ের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক বলেন, আগামী সোমবার আপনার বক্তব্য শোনা হবে। এদিন সাজা ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মাসহ আত্মীয় পরিজন।
যদিও শুধু সঞ্জয়কে দোষী করায় খুশি নন অভয়ার পরিবারের সদস্য এবং আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। ইতোমধ্যে শতাধিক প্রশ্ন তুলে তারা কলকাতা হাইকোর্টে নতুন করে মামলা করেছে। একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টেও মামলা চলছে।
তাদের মূল প্রশ্ন হল, অভয়া (নারী চিকিৎসক) হাসপাতালের সেমিনার রুমের চারতলায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। কে সঞ্জয়কে জানিয়েছিল? সঞ্জয় হাসপাতালের কেউ নয়। তিনি পুলিশের একেবারে নিচু স্তরের কর্মী। তিনি কীভাবে হাসপাতালে ঢুকলেন?
হাসপাতালের একতলার তালা দেওয়া গেট কে খুলে দিয়েছিল? মৃত্যুর ১১ ঘণ্টা পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন পুলিশে ডায়েরি করেছিল? কেন দ্রুত ময়নাতদন্ত হয়েছিল? পরিবারের পক্ষে পুনরায় ময়নাতদন্তর দাবি তোলা হলেও পুলিশ কেন তা গ্রাহ্য না করে দাহ করেছিল?
এর পাশাপাশি পরিবার হাতিয়ার করেছে সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির বয়ানকে, যেখানে বলা হয়েছে, এক নয়, একাধিক মানুষের ডিএনএ পাওয়া গিয়েছিল অভয়ার শরীর থেকে। ফলে এটি একজনের কাজ নয়।
পরিবার ও আন্দোলকারীর দাবি, এই ঘটনায় একাধিক মানুষ এবং প্রভাবশালীরা জড়িত। শুধু সঞ্জয়কে সাজা দিয়ে এ মামলা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না।
গত বছর ৯ আগস্ট আর জি কর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় লাশ। অভিযোগ ওঠে কর্মরত অবস্থায় ওই নারী শিক্ষার্থীকে প্রথমে ধর্ষণ ও পরে খুন করা হয়। এরপরই শোরগোল পড়ে যায় ভারতজুড়ে।
ঘটনার তদন্তে নেমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাইকে গ্রেপ্তার করেন কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে পুলিশ। পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এই মামলার তদন্তভার যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে।
পরে তদন্ত চালিয়ে সিবিআই সঞ্জয় রাইকেই একমাত্র অভিযুক্ত বর্ণনা করে চার্জ গঠন করে। সেক্ষেত্রে ওই নৃশংস ঘটনার ৫ মাস ৯ দিন পর শনিবার সঞ্জয় রায়কেই দোষী সাব্যস্ত করা হলো। এদিন নিহত নারী চিকিৎসকের বাবা-মায়ের গলায় ছিল একরাশ হতাশা।
তারা উভয়েই বলেন, আমরা সবকিছুই হারিয়েছি। নতুন করে আর কিছুই পাওয়ার নেই। এখন বিচারক যদি সঠিক রায় দেন আমার মেয়ের আত্মাটা হয়তো একটু শান্তি পাবে।
তার মা বলেন, সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ওরই সাজা ঘোষণা হবে, বিচারক যেটা ভালো মনে করবেন, তাই হবে। এতে আমাদের আশা বা নিরাশার কিছু নেই। কারণ তদন্ত এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আমরা শেষ দেখে ছাড়ব।
বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
ভিএস/আরএইচ