কলকাতা: বাংলাদেশির অভাবে আরও শোচনীয় অবস্থা কলকাতার মারকুইস স্ট্রিটের। সে অঞ্চলের কিডস্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, কলিন লেন, টটি লেনসহ নিউমার্কেট এলাকায় ছোটবড় সব হোটেলের করুণ দশা।
ব্যবসায়ীদের অভিমত, ভারতীয় ভিসা নীতিতে জটিলতা। তাই এ অঞ্চল শূন্যেতে ঠেকেছে বাঙালি পর্যটক। আর তাতেই সব ধরনের ব্যবসায়ীরা আশঙ্কার প্রহর গুনছেন। মারকুইস স্ট্রিট- ফ্রিস্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি'র যুগ্ম সচিব মনতোষ সরকার নিজেও একজন হোটেল ব্যবসায়ী। তারও আছে রাজপ্রাসাদের মত বিলাসবহুল হোটেল। তাতে কর্মরত শতাধিক কর্মী। তার অভিমত, এরকম চলতে থাকলে ছোট ছোট হোটেলের সারিতে আমাকেও দাঁড়াতে হবে। অর্থাৎ আমাকেও বন্ধ করে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নিউমার্কেট মূলত পর্যটক ভিত্তিক অঞ্চল। যার সিংহভাগ বাংলাদেশি পর্যটক। তাদের অনুপস্থিতি আমাদের এখানে প্রভাব ফেলছে। কোভিড মহামারীতেও এতটা প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সকলের জীবন জীবিকায় টান পড়েছে। তার ধারণা এই সমস্যা অত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হওয়ার নয়। ফলে ইতোমধ্যে তারা বিকল্প ভাবা শুরু করেছেন।
মারকুইস স্ট্রিটে কাশ্মীরি শালের দোকান রয়েছে শ্রীনগরের বাসিন্দা নাসির আহমেদ খানের। গত ২৫ বছর ধরে ভাড়ায় চলেছে' কাশ্মীর আর্ট বাজার' দোকান। শেষ আট বছর ধরে পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরেছেন ছেলে এমডি তালেব। তিনি তো দোকান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন। তালেব বলেন, আর কতদিন এভাবে বেচাকেনা না করে থাকা যায়? আসন্ন রোজার মাস। ফলে মার্চ -এপ্রিল অবদি দেখব। অবস্থার পরিবর্তন না হলে কলকাতার ব্যবসা গুটিয়ে মুল্লুক (দেশে) ফিরে যাব।
বিরক্ত স্বরে আধভাঙা হিন্দি শব্দে তালাব বলেন, সব কিছুর একটা লিমিট থাকে। কতদিন ভিসা বন্ধ থাকবে? স্বাভাবিক কবে হবে? কোনো কিছুই স্পষ্ট করে জানতে পারছি না। না জানাচ্ছে মমতার পক্ষ থেকে রাজ্য সরকার, না জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। করোনা সময় জানানো হয়েছিল ছ’মাস - একবছর সব কিছু বন্ধ থাকবে। আমরা সে ভাবে মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এখন তো কেউ-ই স্পষ্ট করে বলছে না। তাহলে কলকাতায় থেকে কি হবে?
তার মতে, দিন যত যাবে বাংলাদেশি না আসার কারণে কলকাতায় ব্যবসায়ী আরও সমস্যায় পড়বে। বাংলাদেশির অভাবে মারকুইস স্ট্রিটে প্রায় শতভাগ ব্যবসা পড়ে গেছে। নিউমার্কেটের ব্যবসা পড়েছে ৫০ শতাংশ। এমনকি বাংলাদেশিদের কারণে বড় বাজারে ব্যবসায় ১৫-২৫ শতাংশ পড়ে গেছে। এই রোজায় বাজার না উঠলে শহরজুড়ে এর প্রভাব আরও পরবে।
তবে তারই মধ্যে চিকিৎসার কারণে কিছু বাংলাদেশি ভারতে অবস্থান করছেন। তবে তারা শুধুমাত্র সীমান্ত পার হয়ে কলকাতায় আসছেন এবং এর পরই চলে যাচ্ছেন দিল্লি, চেন্নাই, মুম্বাই, বেঙ্গালরুর মত ভিন রাজ্যে। ফলে ব্যবসায়ীক দিক থেকে কিছুই জুটছে না কলকাতার কপালে। তাহলে কি হবে কলকাতার মারকুইস স্ট্রিটের, এখন এ প্রশ্নই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাদের। বৃহস্পতিবারের(১৩ ফেব্রুয়ারি) তথ্য মতে, সে অঞ্চলে প্রায় ১৫০টির বেশি হোটলে আছে। তারমধ্যে মাত্র ২৫ জন বাংলাদেশি কলকাতায় অবস্থান করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ভিএস/এমএম