কলকাতা: ভারতে ওয়াক্ফ সংশোধনী আইন পাস হওয়ার পর অশান্ত পশ্চিমবঙ্গ। বিশেষ করে কলকাতাসহ রাজ্যটির মুসলিম অধ্যুষিত জেলার একাংশ বিক্ষোভ চলছে।
শুক্রবারও (১১ এপ্রিল) অশান্ত ছিল মুর্শিদাবাদের সুতি, রঘুনাথগঞ্জ, সামসেরগঞ্জ এলাকা। সড়কে সরকারি বাস, পুলিশের গাড়ি ও একাধিক মোটরসাইকেল জ্বলেছে। কোথাও কোথাও ট্রাফিক সিগন্যালও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে অসংখ্য টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিও চালায় তারা। পুলিশের গুলিতে আহত হয় এক কিশোর। গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে ওয়াক্ফ আইন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অশান্ত হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদ।
শুক্রবার রাতে পাওয়া শেষ খবর পর্যন্ত, পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিক্ষোভ দমন করতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সঙ্গে মোতায়েন করা হয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) -কে। অশান্ত মুর্শিদাবাদে রাতে টহল দিচ্ছে বিএসএফ।
এর আগে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের ওমরপুরে পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। কিন্তু তা অমান্য করেই হয় জমায়েত। জেলাটির ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল।
এদিন ওয়াক্ফ আইন বাতিলের জন্য মুর্শিদাবাদের সুতি এবং সামসেরগঞ্জ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ মিছিল করে এগোচ্ছিলেন। মিছিল সাজুর মোড় এলাকার কাছাকাছি ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করলে বাধা দেয় পুলিশ। সেই সময় বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে গিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালীন সাজুর মোড়ে সরকারি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে জাতীয় সড়ক থেকে অবরোধ উঠে গেলে রাত ১১টার দিকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সকাল থেকে বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা থেকে একাধিক অশান্তির খবর সামনে এসেছে। একই অবস্থা কলকাতা শহরের। কলকাতায় শুক্রবার জুমার নামাজের পরই ওয়াক্ফ আইনের বিরোধিতায় পথে নামেন বিক্ষোভকারীরা। শহরের পার্কসার্কাস এলাকায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যেতে থাকে মিছিল। পুলিশ বাধা দিতে গেলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
অপরদিকে, কলকাতার এসপ্ল্যানেডে টিপু সুলতান মসজিদ ও জাকারিয়া স্ট্রিটের নাখোদা মসজিদের পক্ষ থেকে পার্কস্ট্রিট সংলগ্ন এসপ্ল্যানেডের রাজপথ অবরোধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি পোড়ানো হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কুশপুতুল। প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার স্লোগান চলতে থাকে। আর এর জেরে সন্ধ্যা পর্যন্ত এক প্রকার স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা কলকাতা। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের চারদিক থেকে ঘিরে রাখে পুলিশ।
গত ২ এপ্রিল ভারতের সংসদ ভবনের দুই কক্ষে (লোকসভা এবং রাজ্যসভা) পাস হয় বিতর্কিত ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল। যার ওপর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর স্বাক্ষরে সেই বিল আইনে পরিণত হয়েছে। নতুন ওয়াক্ফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় দেশটিতে আন্দোলন-প্রতিরোধ গড়ে উঠছে। মুসলিম সংগঠনগুলোর পাশাপাশি বিজেপিবিরোধী একাধিক রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আর এর আঁচ এসে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গসহ কলকাতায়।
প্রসঙ্গত, ওয়াক্ফ সম্পত্তি ইসলাম ধর্মে আল্লাহর নামে দানকৃত বলে বিবেচিত, যা বিক্রি করা যায় না। ব্যক্তিগত বা বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহারযোগ্য নয় ওয়াকফকৃত সম্পত্তি। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, এখন থেকে কোনো জমি ওয়াক্ফ কিনা, তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের জেলা প্রশাসক। এছাড়া, ওয়াক্ফ বোর্ডে এবার থেকে অমুসলিম সদস্যেরও রাখা যাবে। বোর্ডের কার্যক্রমে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
সংশোধিত এই আইন ধর্মীয় বিশ্বাস ও স্বার্থের পরিপন্থি বলে ভারতীয় মুসলমানদের অভিযোগ।
আগের ওয়াক্ফ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী, কোনো সম্পত্তি ওয়াক্ফ ঘোষণা করার ক্ষমতা ওয়াক্ফ বোর্ডের হাতে ছিল। তবে সংশোধনী আইনে এই ক্ষমতা এখন জেলা প্রশাসক বা সমপদমর্যাদার সরকারি কর্মকর্তার হাতে চলে গেছে। এছাড়া, সরকার সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত বিতর্কিত সম্পত্তি ওয়াক্ফ হিসেবে নয়, সরকারি সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে। এই নিয়েই ভারতজুড়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৫
ভিএস/এসএএইচ