ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

ববি হাকিমের পূজায় মমতার চক্ষুদান

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
ববি হাকিমের পূজায় মমতার চক্ষুদান চেতলা অগ্রণীর দুর্গাপূজা। ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা:  উৎসব সর্বদাই মিলনের রূপ নেয়। ধর্ম সেখানে বড় কথা নয়। ১৯৭০ সালে চেতলা অগ্রণীর কালীপূজায় দশ বছরের কিশোর ববি হাকিম অংশ নিয়েছিলেন তাঁর হিন্দু সহপাঠীদের সাথে। শাবল তুলে প্যান্ডেলের বাঁশ পোঁতা থেকে খুঁটিনাটি নানা কাজে অংশ নিতে শুর করেন তিনি। তারপর পেরিয়ে গেছে কয়েক দশক। নব্বইয়ের গোড়ায় ববি হাকিমের বাড়ির উল্টোদিকে পিয়ারি মোহন রায় রোডের ফুটপাতে শুরু চেতলা অগ্রণীর দুর্গাপূজা। যেখানে বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন যুবক ববি।

সেই পথ চলা শুরু। এবছর ২৫ পূর্ণ হচ্ছে ববি হাকিমের দুর্গাপূজার।

কলকাতার সেরা পাঁচটি পূজার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চেতলা অগ্রণীর পূজা। যার কাণ্ডারি ববি হাকিম। এখানকার পূজা ববি হাকিমের পূজা নামে পরিচিত।

‘কখনও ধর্ম আমাকে এই মিলনোৎসব থেকে আলাদা করতে পারেনি। এ তো আমারও পূজা। পূজায় সামিল হতে আমার ভালো লাগে। আমার ছোটবেলার বন্ধু নীলু, বেল্টু, শুভাশিস, সঞ্জয়ের থেকে নিজেকে কখনও আলাদা বলে মনে হয়নি। ছোটবেলায় নিজেই যুক্ত হই। কলকাতায় পূজা দেখে বেড়াতাম। পরে পরিবার নিয়ে আনন্দ করার জন্য দুর্গা পূজা। আজ দেখতে দেখতে ২৫ বছর পার হয়ে গেল। নিজেকে এখনও একজন সংগঠক বলেই মনে করি। অকপটেই এই কথাগুলি বললেন, রাজ্যের নগরন্নোয়ন মন্ত্রী ববি তথা ফিরহাদ হাকিম। যিনি সদ্য হজ করে ফিরেছেন। তাঁর অগাধ আস্থা নিজের ধর্মের প্রতিও।
১৯৯২ সাল থেকে ফুটপাতে শুরু হওয়া চেতলা অগ্রণীর পূজা আট বছর পরে মাঠে জায়গা পায়। সেই থেকে শুরু হয় থিমের পূজা। অগ্রণীর সদস্য, সম্পাদক থেকে সভাপতি পদে উত্তরণ হয় ববির। শুধু চাঁদা তোলা, স্পনসরশিপ যোগাড় করা নয়, পূজা মণ্ডপের থিমও করেছেন ববি হাকিম। কখনও বরফ গলে পানি, কখনও শোলের রামগড় পাহাড়, কখনও ভুজের ভূমিকম্প-এ সবই ববিরই ভাবনা।

চেতলা অগ্রণীর দুর্গাপূজা।  ছবি: বাংলানিউজ২০০০ সালে প্রথম কাউন্সিলর, বরো চেয়ারম্যান, তারপর বিধায়ক হন তিনি। তাঁর রাজনৈতিক উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গে পূজার কলেবরও বৃদ্ধি পেয়েছে সমান তালে। চেতলা অগ্রণী আর ববি হাকিম-এর নাম সমার্থক। ২০১১ সালে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হওয়ার পর আর থিম তৈরির সময় পান না। এখন শিল্পীদের দিয়ে পূজা মণ্ডপ তৈরি করানো হয়। রাজ্যে পূজার একাধিক সম্মান চেতলা অগ্রণীর ঝুলিতে এসেছে।

এই পূজার আরও একটি বিশেষত্ব আছে। সেটি হলো, প্রত্যেক বছর মহালয়ার দিন প্রতিমার চক্ষুদান করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারও তাঁর অন্যথা হয়নি। মহালয়ার সন্ধ্যায় সাড়ে সাতটায় দেবীর চোখ এঁকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তবে সাধারণের জন্য পূজামণ্ডপ খুলে দেওয়া হবে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে।

এবার ২৫ বছরের পূজার থিম বা চিন্তা ‘অন্তহীন’। যার অর্থ হলো- ‘আহুতিতে যজ্ঞের কাঠ/আবাহনে বিল্বের দারু/শেকড়েই কৃষ্টির সার/ চেতলায় মহামায়া তরু/ অন্তহীন পথ হেঁটে যাই/ শুরু শেষ সময়ের খেলা/ চেতনার নাই পরাজয়/ বদলায় শুধু কালবেলা। ’ এই ভাবনাকে মাথায় রেখেই তৈরি হচ্ছে পূজামণ্ডপ ও প্রতিমা।

পুরো মণ্ডপটাই তৈরি হচ্ছে চেলা কাঠ দিয়ে। যা যজ্ঞ এবং চিতায় ব্যবহৃত হয়। সেই কাঠ দিয়ে এক অনন্য মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। তারামণ্ডলের মতো দুর্গামণ্ডপের গায়ে লেখা থাকছে চণ্ডীমন্ত্র। একটি মেহগনি গাছের গুঁড়ি কেটে এক কাঠের উপরে তৈরি করা হয়েছে দুর্গা প্রতিমাটি।  

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা,  সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
ভিএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।