ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

বিধানসভা ভোটের বৈতরণী পার হতে ‘পিকে’র দ্বারস্থ মমতা!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৬ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৯
বিধানসভা ভোটের বৈতরণী পার হতে ‘পিকে’র দ্বারস্থ মমতা!

কলকাতা: রাজকুমার হিরানি-আমির খান জুটির ছবি ‘পিকে’ তাক লাগিয়ে দিয়েছিল সবাইকে। শোবিজ অঙ্গনের বাইরে ভারত পরিচিত আরেক ‘পিকে’র সঙ্গেও। তিনি প্রশান্ত কিশোর। পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজিস্ট বা রাজনৈতিক কৌশল রচয়িতা। রাজনৈতিক অঙ্গনের এ ‘পিকে’ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মপদ্ধতি বাতলে দিয়ে জিতিয়েছেন অনেককে। এমনকি খোদ নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসার ক্ষেত্রেও এই ‘পিকে’র ‘জাদু’ ছিল বলে মনে করা হয়।

সেই ‘জাদু’ পেতেই কি-না এবার প্রশান্ত কিশোরের শরণাপন্ন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। পেশাদার পরামর্শক প্রশান্তকে মমতা নিয়োগ দিয়েছেন ২০২১ সালের রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনকেন্দ্রিক কৌশল নির্ধারণ ও কাজের পথ বাতলানোর জন্য।

পশ্চিমবঙ্গে কয়েক দশক ধরে বামদের শাসনের অবসান ঘটিয়ে মমতার দল তৃণমূল ২০১১ সালে রাজ্য সরকার গঠন করে। তিনি হন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও তৃণমূলের আধিপত্য বজায় থাকে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ৩৪টি, আর বিজেপি পেয়েছিল মোটে ২টি। তবে পাঁচ বছর পর অর্থাৎ ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি ‘বাংলা’য় আসন দখল করে ১৮টি। আর তৃণমূলের আসন কমে দাঁড়ায় ২২টি।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের এমন ‘ভোট-বিপর্যয়’ চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে মমতার কপালে। অন্যদিকে চনমনে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করা দল বিজেপি। তারা বলে চলেছে, আসছে বিধানসভা নির্বাচনেও পশ্চিমবঙ্গে ফুটবে ‘পদ্মফুল’।

এই সমীকরণ সামনে আসার পরিপ্রেক্ষিতেই মমতা ডেকেছেন প্রশান্ত কিশোরকে। তার দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলছে, প্রশান্ত কিশোরের অতীত সাফল্য এবং অভিজ্ঞতা তৃণমূলের বিগত দুই বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ধরে রাখতে পথ দেখাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রশান্ত কিশোরের জন্ম বিহারের রোহতাস জেলার কোরান গ্রামে। উচ্চশিক্ষার পাঠ চোকানোর পর যোগ দেন জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিভাগে। কর্মস্থল ছিল আফ্রিকা। আট বছর চাকরির পর ২০১১ সালে ফিরে আসেন ভারতে। তৈরি করেন নিজের সংস্থা সিটিজেন্স ফর অ্যাকাউন্টেবল গভর্নমেন্ট (সিএজি)। নিজের সংস্থায় নিয়োগ করেন পেশাদার লোকজনকে।

এই কৌশল রচয়িতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গুজরাটের বিধানসভা ভোটে এবং ২০১৪ দিল্লির গদি দখল করতে নরেন্দ্র মোদীকে ‘কর্মপদ্ধতি’ দেখান প্রশান্ত। এরপর বিহারে নীতিশ কুমারের জোট এবং সম্প্রতি অন্ধ্র প্রদেশে বিধানসভা ভোটে জগনমোহন রেড্ডির দলের বিপুল জয়েও ছিল প্রশান্তের বাতলানো ‘কৌশল’। বলা হয়ে থাকে, আসন ধরে গবেষণা ও বিশ্লেষণের পর প্রশান্ত সংশ্লিষ্ট দলের নেতৃত্বকে এলাকাভিত্তিক বক্তব্য ও প্রচারণার কৌশল নির্ধারণ করে দেন। তাতেই জনগণ দলকে আপন করে নেয়। সেই আপন করে নেওয়ার ফল মেলে ব্যালটে।

‘পিকে’র জাদুর ব্যাপারে তৃণমূল আশাবাদী হলেও বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান তার বাতলানো কৌশল দলটি কতখানি বাস্তবায়ন করতে পারে তা নিয়ে। তবে যদি মমতা-পিকের এই ‘জোটযুদ্ধ’ কাজ করে, তাহলে শুধু মমতার সাফল্য নয়, সেটা পিকেকে নিয়ে যাবে ‘ক্ষমতার নির্ধারক’ পর্যায়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।