ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

বন্ধুত্বের সেতুবন্ধনে গুরুত্ব মোদি ও হাসিনার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২১
বন্ধুত্বের সেতুবন্ধনে গুরুত্ব মোদি ও হাসিনার

ঐতিহাসিক মুহূর্ত। উপলক্ষ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার সাব্রুম শহরের সঙ্গে চট্টগ্রাম জেলার রামগড়ের মধ্যে মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন।

 

মঙ্গলবার কোভিড পরিস্থিতিতে ভার্চ্যুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দু-দেশের প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠেই শোনা গেল বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন আরও সুদৃঢ় করার কথা। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক উন্নয়ন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনে ভারত ও বাংলাদেশের আন্তরিকতা আরও স্পষ্ট হলো।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, দক্ষিণ এশিয়ায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।  

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, নৌ, সড়ক, রেল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সঙ্গে আরও যোগাযোগ বাড়াতে চায় ভারত। বাণিজ্যের পাশাপাশি আত্মিক সম্পর্কের উন্নয়নেরও বার্তা দিলেন দুই বন্ধু দেশের দুই প্রধানমন্ত্রী। আগরতলার বিবেকানন্দ স্টেডিয়ামে ভার্চ্যুয়াল উদ্বোধনের সাক্ষী হতে সমবেত হয়েছিলেন ত্রিপুরার বহু মানুষ। তারা বারবার করতালি দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনে তারাও আন্তরিক।

ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে ১১২ কিমি দূরে প্রান্তিক শহর সাব্রুম। উল্টো দিকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে মাত্র ৭২ কিমি দূরে রামগড়। মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে ফেনী নদী। এই ফেনীই হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। স্থলভূমি বেষ্ঠিত ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের নিকটতম নদী বন্দর চট্টগ্রাম। বাংলাদেশ বহু আগেই চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে ভারতকে। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে সেই সুবিধা সঠিকভাবে নিতে পারছিলো না ভারত। তাই উভয় দেশ সম্মত হয় ফেনীর ওপর সেতু নির্মাণে। চুক্তিবদ্ধ হয় দিল্লি ও ঢাকা। ঠিক হয় ফেনীর ওপর ১ দশমিক ৯ কিমি সেতু গড়ে উঠবে। এরমধ্যে মূল সেতু থাকবে ১৫০ মিটার। জমি অধিগ্রহণ করা হয় দুপারের মোট ১৬ একর। ভারতের অর্থায়নেই সেতুটি গড়ে তুলতে সম্মত হয় দু-দেশ। ২০১৫ সালে মোদি ও হাসিনা সেতুর শিলান্যাস করেন। ভারতের জাতীয় সড়ক পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম সেতু নির্মাণের বরাত পায়। মঙ্গলবার ১৩৩ কোটি রুপি খরচ করে নির্মিত মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন হয়।

মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের ফলে ত্রিপুরা হয়ে উঠেছে গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার। কারণ চট্টগ্রাম ছাড়া ধারে কাছে আর কোনও সমুদ্র বন্দর নেই উত্তর-পূর্ব ভারতের। ত্রিপুরায় ৮৪ শতাংশ সীমান্তই বাংলাদেশের সঙ্গে। রাজধানী আগরতলা থেকে কলকাতার আকাশ পথে দূরত্ব মাত্র ৩২৭ কিমি। ভারতের ভিতর দিয়ে সড়ক পথে কলকাতার দূরত্ব ১৬৫০ কিমিরও বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে কলকাতা যেতে মাত্র ৬২০ কিমি পথ অতিক্রম করতে হয়। এখন চট্টগ্রাম বন্দর আরও কাছে হয়ে গেলো। তাই ত্রিপুরার মানুষ খুবই উচ্ছসিত। ত্রিপুরা ঐতিহাসিক কারণেই বাংলাদেশকে নিজেদের আত্মীয় বলে মনে করে। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেব এদিনও সে কথা স্মরণ করিয়ে দেন।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার অবদানের কথা স্মরণ করেন।  

উল্লেখ্য, গত বছর ত্রিপুরায় পানি সঙ্কট দেখা দেওয়ায় বাংলাদেশ ফেনি নদীর পানি ব্যবহারের অনুমতি দেয়। ইতিমধ্যেই সীমান্তের দু-পারের চর সমস্যারও সমাধান হয়েছে। ত্রিপুরাকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে চাল বা অন্যান্য সামগ্রী আনার সুবিধাও দিয়েছে হাসিনা সরকার। মৈত্রী সেতু ছাড়াও ভারতের অর্থায়নে আগরতলার সঙ্গে আখাউড়ার রেলসংযোগ স্থাপনের কাজ চলছে।

আসলে ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সত্যিই আত্মীয়তার। বাস, রেল বা সেতুই শুধু নয়, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যও বেশ রমরমিয়ে চলছে। ত্রিপুরায় ট্রেড ব্যালেন্স বাংলাদেশের পক্ষে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সামগ্রীর খুব ভালো বাজার রয়েছে ত্রিপুরায়। আগরতলার মধ্য দিয়ে ভারতের বিভিন্ন শহরে যাতায়াতের সুবিধাও নিচ্ছেন বাংলাদেশের মানুষ। কোভিড পরিস্থিতিতে কিছুটা সমস্যা হলেও সীমান্ত হাট দুপারের মানুষকে আত্মীয়তার বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করেছে।  

মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরার মানুষ নিজেদের জনসংখ্যার থেকেও বেশি বাংলাদেশের মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ত্রিপুরার অবদান বাংলাদেশ ভোলেনি। এদিন প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও বার্তাতেও তার প্রমাণ দেন।

অর্থনীতিবিদদের মতে, মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের ফলে বাংলাদেশের পরিবহন শিল্পের বহর অনেক বেড়ে যাবে। বন্দরের শুল্ক যেমন বাড়বে তেমনি বাড়বে বন্দর শ্রমিকদের রোজগার। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সুবিধা মিলবে বাংলাদেশি উৎপাদন শিল্পের। উত্তর পূর্ব ভারতে রপ্তানির নতুন দরজা খুলে গেছে। পর্যটনেরও বিকাশ ঘটবে। সাব্রুমে ইতিমধ্যেই ভারতের ব্রডগেজ ট্রেন চালু হয়েছে। এদিনই শিলান্যাস হয়েছে ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্টের। ১৪২ কোটি রুপি খরচ করে নির্মিত হবে অত্যাধুনিক স্থলবন্দর। সবমিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রবেশদ্বার হতে চলেছে এই সেতু। উভয় দেশের পর্যটকদের জন্য বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে সীমান্তের দুই পার। আর সেটা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বিমানবন্দরও ব্যবহার করার আমন্ত্রণ জানান ভারতকে।  

প্রধানমন্ত্রী হাসিনা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সেতুবন্ধনকে এদিন বাড়তি গুরুত্ব দেন। বারবার স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধে ভারত তথা ত্রিপুরার অবদানের কথা। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সীমানা কখনওই বাণিজ্য প্রসারে বাধা হতে পারে না। দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগের উন্নয়নের কথাও ছিল তার ভিডিও বার্তায়।  

অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে ভারতের আন্তরিকতার কথা তুলে ধরেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ ও মহান স্বাধনীতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে চলতি মাসেই মোদি ঢাকা সফর করবেন।  

এদিন তিনি ভাষণে উভয় দেশের মৈত্রীকে আরও বেশি শক্ত করার দিকে গুরুত্ব আরোপ করেন। তুলে ধরেন তার অ্যাক্ট-ইস্ট পলিসির কথাও। ব্যবসায়িক ও পর্যটন বিকাশকেও গুরুত্ব দেন মোদি। তার মতে, মৈত্রী সেতু বন্ধুত্বের পাশাপাশি সীমান্তের উভয় পারের মানুষদের শ্রীবৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে। নৌ, সড়ক, রেল, বিমান থেকে শুরু করে সমস্ত ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্ব আরোপ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।