ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা শুরু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২
কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা শুরু

কলকাতা: চিরাচরিত প্রথা মেনে হাতুড়ির শব্দে শুরু হলো ৪৫তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্ক প্রাঙ্গণে সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ।

 

বইমেলায় এবারের থিমকান্ট্রি বাংলাদেশ। এই নিয়ে তিনবার কোনো দেশ এই শিরোপা পেল। একইসঙ্গে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন কথাসাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, বাংলাদেশের লেখিকা সেলিনা হোসেন ও বইমেলার কর্তৃপক্ষসহ বিশিষ্টজনেরা।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবাংলাকে আলাদা করতে পারি না। শয়নে স্বপনে আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি এক। আজ বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র, ভাষা নিয়ে তাদের আত্মত্যাগ আর আমাদের সহযোগিতা, ফলে দুই দেশের সম্পর্কের সীমানা জোর করে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা যায় না।

এরপর একটি পঙতি উদ্ধৃত করে মমতা বলেন, সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর, একদিকে রবীন্দ্রনাথ অন্যদিকে নজরুল। তাদের অবদান আমরা ভুলিনি। এই তারকাঁটার সীমারেখায় পশ্চিমবাংলার ঐতিহ্য যেমন বাংলাদেশের ভেতরে আছে, তেমন বাংলাদেশের অনেক নিদর্শন পশ্চিমবাংলা থেকে গেছে। ফলে আমরা একে অপরের থেকে কি করে নিজেদেরকে আলাদা করি? বাংলাদেশ-বাংলা-ভারত আমরা একে অপরের চিরসাথী। এ মৈত্রী চিরকাল অটুট থাকবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা কেনো রাষ্ট্রের পক্ষপাতিত্ব করছি না। তবে আমরা যুদ্ধের বিরোধী। আমরা শান্তির পক্ষে। মনে রাখবেন এটা আন্তর্জাতিক বইমেলা তাই কোনো স্টলের সামনে আন্দোলন বিক্ষোভ দেখাতে যাবেন না।

প্রসঙ্গত, এবারের ৪৫তম বইমেলায় থাকছে ভিন্ন স্বাদ। থিম কান্ট্রি ‘বাংলাদেশ’ এর পাশাপাশি বিদেশি প্রকাশকদের স্টলে হাজির আছে ‘পুতিন’-এর রাশিয়া। একই ছাতার তলায় আছে ‘ইউক্রেন’ হামলার নিন্দায় সরব আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জাপানের মতো দেশের প্রকাশকরাও। এবারে মোট ২০টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে।

পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা দেন, এই মেলা প্রাঙ্গণ এবার থেকে ‘সেন্ট্রাল পার্ক’ এর বদলে  বইমেলা প্রাঙ্গণ হিসেবে চিহ্নিত হবে। এর জন্য কলকাতার মেয়র ফিরাদ হাকিমকে মঞ্চ থেকে দায়িত্ব দেন তিনি।

বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, যথার্থই বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সংস্কৃতি আলাদা করা যায় না। এমন এক মাহেন্দ্রক্ষণে কলকাতার বইমেলা হচ্ছে, যেখানে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং ভারত-বাংলাদেশের স্বীকৃতির সুবর্ণ জয়ন্তী, সেখানে বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুকে কলকাতা বইমেলা উৎসর্গ করেছে, যা আমাদের কাছে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

একইসঙ্গে এদিন শুভ সূচনা হলো কলকাতা বইমেলার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের। উদ্বোধন করেন কেএম খালিদ, সেলিনা হোসেনসহ কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার তৌফিক হাসান ও বিশিষ্টজনেরা। এবারে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন হয়েছে ৭ই মার্চের ভাষণের আদলে। জাতির পিতা ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই ভাষণকেই উপজীব্য করে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। এছাড়া বইমেলার তিনটি প্রবেশদ্বার সাজানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৩টি বইকে উৎসর্গ করে। সেগুলো হচ্ছে- বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা ও আমার দেখা নয়া চীন।

একইভাবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা তার বিশিষ্টদের হারিয়েছে। তাঁদের প্রতি সম্মান জ্ঞাপনে এবারের বইমেলায় তৈরি হয়েছে বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য হল। পাশাপাশি মেলায় পার্কের মাঠের পাশ দিয়ে তৈরি কংক্রিটের পথকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে একাধিক সরণি। প্রয়াত বিশিষ্টজনদের নামে তৈরি হয়েছে এই সরণিগুলি। লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, বাপি লাহিড়ী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষসহ বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের বিবিধ আয়োজন আছে বইমেলায়।

করোনা আবহে স্টলগুলির ৩৫ শতাংশ আয়তন কমিয়ে বাড়তি জায়গা বের করা হয়েছে। এবারের মেলায় প্রায় ৬০০টি স্টল থাকছে। একই সঙ্গে থাকছে আরও ২২০টি লিটল ম্যাগাজিনের স্টল। মহামারির কারণে এবারের মেলায় ৪টির বদলে ৯টি প্রবেশদ্বার তৈরি হয়েছে। প্রত্যেকটি গেট বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের নামে করা হয়েছে। ১৪ দিন ব্যাপী এই বইমেলা চলবে ৯ ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কেনাবেচার পাশাপাশি চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চলবে অষ্টম কলকাতা সাহিত্য উৎসব। বইপ্রেমীদের জন্য বইমেলা খোলা থাকবে প্রতিদিন স্থানীয় সময় বেলা ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১
ভিএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।