ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

মমতার কিস্তি ডোবাতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি হচ্ছেন শুভেন্দু!

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২২
মমতার কিস্তি ডোবাতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি হচ্ছেন শুভেন্দু!

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির সভাপতি হতে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। বিষয়টি এখনও দিনের আলোর মত পরিষ্কার না হলেও বঙ্গ বিজেপি শিবিরে জোর জল্পনা চলছে।

তবে শুভেন্দু বাংলার ভার নিলে তাকে স্বাগত জানাবেন সাবেক রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কোনও রাখঢাক না রেখেই রোববার (২৩ অক্টোবর) এ কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি।

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তেই দিলীপকে ছেঁটে বর্তমানে ওই পদে আছেন সুকান্ত মজুমদার। তিনি একুশের বিধানসভা ভোটে বালুরঘাট আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে রাজ্যের উত্তরবঙ্গ প্রত্যাশা মত ফল করলেও দক্ষিণবঙ্গ পরাস্ত হয় মমতার বাহিনীর কাছে। রাজ্যে বিজেপি না আসার কারণ এটাই। পাশপাশি দিলীপের কিছু অশ্লীল বক্তব্য- সব মিলিয়ে দিলীপকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে সুকান্তকে আনা হয়েছিল। তাতে যথেষ্ট চটেছিলেন দিলীপ। যদিও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাতে মলম দিয়ে দিলীপকে সর্বভারতীয় সহসভাপতির দায়িত্বে আনে।

তবে দিলীপের আমলেই তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসেন শুভেন্দু। দলে যোগ দিয়েই বাজিমাত করেন তিনি। বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম থেকে পরাস্ত করেন মমতার মত দাপুটে নেত্রীকে। শুভেন্দুর জন্যই ভবানীপুরে উপনির্বাচন থেকে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হতে হয় মমতাকে। শুভেন্দু হয়ে ওঠেন বিধানসভার তথা শাসক দলের বিরোধী মুখ।

তারপর থেকেই প্রতিনিয় দিলীপ, সুকান্তর থেকে শুভেন্দুর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তার উপস্থিতিতে জনসভাগুলোয় উপচে পড়া ভিড়, কটু কথা না বলেও তীর্যক মন্তব্যের দ্বারা কিভাবে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া যায় তা শুভেন্দু রপ্ত করে ফেলেছে। সেই কারণে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রয়োজনে সভাপতি সুকান্তকে না জানিয়েই শুভেন্দুকে ঘন ঘন দিল্লি ডেকে পাঠাচ্ছে। তারপরেই শুরু হয় জল্পনা। ধারণা করা হয়, তার প্রস্তাবেই সায় দিয়ে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, যা এতদিন প্রকাশ পাচ্ছিল না, মমতার সরকারের সেসব দুর্নীতি সামনে আসছে। জেলে যেতে হচ্ছে রাজ্যের নেতামন্ত্রীদের।  

তার ওপর বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট। গ্রামস্তরের এই ভোটে ভীত মজবুত হলে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে ভালো ফল হবে বিজেপির। ইতিমধ্যে দলের শাখা-সংগঠনের বিভিন্ন পদে বদল এনেছে গেরুয়া শিবির। সেই বদলেই বদলাতে চলেছে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। এমন ইঙ্গিতই স্পষ্ট হচ্ছে। বিজেপি সূত্রের দাবি, সব কিছু ঠিকাঠাক এগোলে আগামী ডিসেম্বরে মধ্যেই বঙ্গ বিজেপি নতুন সভাপতি হতে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। এই মুহূর্তে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন শুভেন্দু।

শুভেন্দু দলের রাজ্য সভাপতি হলে তার কী কোনও আপত্তি আছে? এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে রোববার (২৩ অক্টোবর) দিলীপ ঘোষ বলেন, শুভেন্দু অধিকারী দলের রাজ্য সভাপতি হলে আমি তাকে ওয়েলকাম করব। নিশ্চই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সব দিক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

উল্লেখ্য, দিলীপ ঘোষের থেকে রাজ্য বিজেপির প্রধান পদের দায়িত্ব হাতে নেন সুকান্ত মজুমদার। তবে তার বিরুদ্ধে গত কয়েকমাসে ভুরি-ভুরি অভিযোগ জমা পড়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। দলের কোন্দল মেটাতে সুকান্ত পুরোপুরি ব্যর্থ, এমনও নলিশ জমা পড়ে নাড্ডার কাছে। সুকান্তকে দিল্লিতেও ডেকে পাঠিয়ে তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। তবে তারপরেও সমস্যা মেটেনি। সুকান্তর বিরুদ্ধে অসন্তোষ ক্রমেই বেড়েছে দলে।

তবে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে শুভেন্দু-সুকান্ত একযোগে থাকতে দেখা গিয়েছে। ফলে শুভেন্দু সভাপতি হলে  সুকান্তরও সেই ব্যাপারে বিশেষ আপত্তি থাকবে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

তবে, দলের একাংশ ও আরএসএস-এর একটি বড় অংশ বিজেপি রাজ্য সভাপতি পদে ফের একবার দিলীপ ঘোষের ওপরেই বাজি ধরছেন। তাদের মতে, দক্ষ সংগঠক হিসেবে ‘জাত’ চিনিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। গত লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনের মধ্যে ১৮ আসন পেয়েছিল বিজেপি। তার নেতৃত্বেই বাংলায় বিজেপি ভালো ফল করা শুরু করেছে। আর তাই দিলীপ ঘোষ ফের একবার দলের ভার নিলে বাংলায় বিজেপির উন্নতি হবে বলেই মনে করছেন তারা।

যদিও তাতে অমিত শাহ, জেপি নাড্ডাদের মত নেতৃত্বদের দিলীপের প্রতি তেমন উৎসাহ নেই। তার চেয়ে শুভেন্দুতেই তাদের আস্থা বেশি বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২২
ভিএস/এজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।