ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

হাইকোর্টের তোপে পিছু হটল মমতা সরকারের স্কুল সার্ভিস কমিশন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
হাইকোর্টের তোপে পিছু হটল মমতা সরকারের স্কুল সার্ভিস কমিশন

কলকাতা: শূন্যপদে স্কুলের কর্মশিক্ষা ও শরীর শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আপাতত আগামী ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো রকম নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাতে পারবে না পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)।

শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) এ নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।

অপরদিকে এদিন তাদের অবস্থান বদল করেছে এসএসসি। গত বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) বিচারপতির অসন্তোষ প্রকাশের পর এদিন এসএসসির আইনজীবী আদালতকে জানায়, সংস্থাটির চেয়ারম্যান লিখিত বার্তা দিয়েছে। তাই তারা বাতিল হওয়া ব্যক্তিদের পুনর্বহালের জন্য আর কোনো আবেদন করবে না আদালতে।

গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছিলেন, স্কুল সার্ভিস কমিশন ভেঙে দিন। কারণ সরকার ও সরকারি সংস্থার কথার কোনো মিল পাচ্ছি না। রাজ্য সরকার এক কথা বলছেন, আর আপনারা (এসএসসি) অন্য কথা বলছেন। তাহলে কী দরকার স্কুল সার্ভিস কমিশন রাখার? 

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৯ মে রাজ্য সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৬ হাজার ৮২১টি শূন্যপদ তৈরি করা হচ্ছে। এ পদগুলোতে গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি, নবম-দশমের শরীর শিক্ষা ও কর্ম শিক্ষার যোগ্য বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আদালতের নির্দেশ ও সব নিয়ম মেনে নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু এ চারটি নিয়োগের ক্ষেত্রে এসএসসি আদালতে জানিয়েছিল, যারা অবৈধভাবে চাকরি পেয়ে গেছেন তাদের পরিবারের কথা ভেবে তাদের বঞ্চিত যেন না করা হয়। আর যারা বঞ্চিত এসএসসি তাদের জন্য কিছু শূন্যপদ তৈরি করেছে। এসএসসির এ আবেদনে গত বৃহস্পতিবার বেজায় চটেছিলেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।  বিষয়টি নিয়ে আদালতে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে রাজ্য সরকারের জবাবদিহি চেয়েছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি বলেছিলেন, কী ধরনের কথা? রাজ্য সরকার জানাচ্ছে যারা যোগ্য অথচ চাকরি পাননি, তারা নিয়োগ পাবেন। অথচ রাজ্য সরকারের অধীনস্ত এসএসসি, যারা চাকরির সুপারিশ দিয়ে থাকে তারা বলছেন, অযোগ্যদের চাকরিতে বহাল থাকুক? আর যোগ্য বঞ্চিতদের কথা ভেবে শূন্যপদ তৈরি করেছে এসএসসি? সরকারের দুই পক্ষ দুই ধরনের কথা কেন বলছেন?

এর পরিপ্রেক্ষিতেই এদিন এসএসসির আইনজীবী জানিয়ে দেন তারা আর বাতিল হওয়া ব্যক্তিদের পুনর্বহালের জন্য আবেদন করবে না আদালতে। এ মর্মে এসএসসির চেয়ারম্যান লিখিত কপি আদালতে জমা দিয়েছে। ফলে আদালতের তোপে তাদের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটল স্কুল সার্ভিস কমিশন।

এদিন বিচারপতি এসএসসির আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, সবাইকে সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছে? জবাবে এসএসসি জানায়, সবাইকে সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছে। তবে আপনার নির্দেশ অনুযায়ী, কাউকে এখনো কোনো নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, কর্মশিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১৬ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল কমিশন। ২০১৭ সালে পরীক্ষা হয়। লিখিত পরীক্ষার পর ২০১৮ সালে পার্সোনালিটি টেস্ট (টেট) নেওয়া হয়। এরপর চলতি বছরের ১৪ অক্টোবর অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে স্কুল সার্ভিস কমিশন। তারপর চলতি বছরের ৩ নভেম্বর স্কুল সার্ভিস কমিশন নোটিশ দিয়ে জানায় যে, ১০ ও ১১ নভেম্বর অপেক্ষারতদের তালিকায় থাকা প্রার্থীদের কাউন্সেলিং হবে। তালিকায় নিজের নাম না পেয়ে মামলা করেন তফসিলিভুক্ত সোমা রায় নামে এক চাকরিপ্রার্থী।

তার বক্তব্য, তিনি ৭২ পেয়ে চাকরি না পেলেও ৫৬ নম্বর পেয়ে অন্য ব্যক্তি চাকরি পেয়েছেন। অথচ তালিকায় তার নাম নেই। সোমার আইনজীবীর অভিযোগ ছিল, এসএসসির তৈরি তালিকায় এমন ৬০ জন চাকরিপ্রার্থী রয়েছেন, যাদের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর তার মক্কেলের থেকে কম। অথচ সোমার নাম নেই। ফলে গড়মিল রয়েছে এসএসসির তরফে। পাল্টা এসএসসির যুক্তি যাদের নিযুক্ত করা হয়েছে তারা প্যারা টিচার। ফলে তাদের ‘বিশেষ যোগ্যতা সংরক্ষণে’র আওতায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এসএসসির এ যুক্তি মানতে চাননি বিচারপতি। আদালত জানায়, এ নিয়োগ তো তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। প্যারা টিচারের ক্ষেত্রেও সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের নাম কেন ঢোকানো হয়েছে। ওই তালিকায় দত্ত, ভৌমিক ইত্যাদি পদবির চাকরিপ্রার্থী আছেন। কী বিশেষ যোগ্যতা রয়েছে ওই প্রার্থীদের? আপনি কী বলতে চাইছেন ভৌমিক পদবি তফসিলি জাতিভুক্ত?

এদিন বিচারপতি নিয়োগের সেই স্থগিতাদেশই আপাতত আগামী ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল রেখেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
ভিএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।