সাভার থেকে (রানা প্লাজা) ফিরে: দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলো রানা প্লাজা ধসের তিন তিনটি বছর। এই দুর্ঘটনায় অনেকেই চিরদিনের জন্য হারিয়েছেন তাদের প্রিয়জন।
তাদেরই একজন জনমদুঃখী জাহেদা বেগম (৭০)। মৃত্যুপুরী রানা প্লাজায় হারিয়েছেন একমাত্র মেয়ে সালেহা বেগমকে (৩০)। যার লাশের চিহ্নটুকুও মেলেনি।
চুয়াডাঙ্গা সদরের জাহেদা ১২ বছর আগে হারিয়েছেন স্বামী তাহাজ উদ্দিন মন্ডলকে। এরপর এই পৃথিবীতে তার একমাত্র সহায় হয়েছিলো মেয়ে সালেহা। রানা প্লাজা ধসে সেটাও হারিয়ে পৃথিবীতে বড্ড একা হয়ে গেছেন।
নিজে কোনো কাজ করতে পারেন না। তবে একমাত্র মেয়ে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেলেও তার প্রাণের বিনিময়েই বুঝি মায়ের জন্য একটা ব্যবস্থা করে গেছেন।
রানা প্লাজা ধসে নিহত সালেহার মা ক্ষতিপূরণ বাবদ সাড়ে ৭ লাখ টাকা পেয়েছেন। এই টাকা থেকে প্রতিমাসে সাড়ে ৭ হাজার টাকা পাচ্ছেন জাহেদা। তা দিয়েই খেয়ে পরে বেঁচে আছেন তিনি।
তবে ক্ষতিপূরণ নয়, মেয়েকেই তিনি চেয়েছিলেন। আজও চান। আর সে কারণেই এখনো হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে পাওয়ার আশায় রানা প্লাজার পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে থাকেন। একা একা কাঁদেন। বুকের ব্যথা কমিয়ে আবার ঘরে যান।
মেয়ের মৃত্যুস্থলের এই কান্নাটুকুই যেনো তার বেঁচে থাকার সম্বল। সে কারণেই রানা প্লাজার পাশে একটি রুম ভাড়া করে থাকছেন জাহেদা বেগম।
তার ধারণা রানা প্লাজার ইট-পাথরের সঙ্গে মিশে গেছে সালেহারের লাশ। সেই জন্য রানা প্লাজার ধ্বংস্তূপকেই মেয়ের কবর মনে করেন।
মেয়ে হারানোর সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা স্মরণ করেন জাহেদা বেগম। বলেন, মা (মেয়ে সালেহার) আমার হাসতে হাসতে মইরে গ্যালো। মায়েরে রানা প্লাজার কনে পুঁতে থুইলো আজও পাইলাম নাকো!
‘মা আমার সকালে একটা উটি (রুটি) খাইয়ে কাজে আইছিল। মা কোনো দিন ছুটি পাইনি, সব কাজ করতে পারতো। সালেহা অনেক কর্মিক (কঠোর পরিশ্রমী) ছিল। দুনিয়ায় আমার কেউ নাই! সব অন্ধকার। মরলে আমার বুকে মাটি (কবর) দিয়ার লোক নি (নাই),’ কান্নাঝরা কণ্ঠে বলছিলেন জাহেদা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৬
এমআইএস/জেডএম