ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প

সোমেশ্বরীর বুকে কয়লা খুঁজে জীবন চলে যাদের!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
সোমেশ্বরীর বুকে কয়লা খুঁজে জীবন চলে যাদের! সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ কয়লা তুলে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে জীবন চালান তারা। ছবি: বাংলানিউজ

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) থেকে: হাতের কব্জি পর্যন্ত ডুবিয়ে দিনভর রোদে পুড়ে নদীর পানি আর বালুচর ঘেঁটেই চলেছেন নারীরা। হঠাৎ করে কেউ ওই দৃশ্য দেখলে মনে করতে পারেন- তারা হয়তো হারিয়ে যাওয়া নাকের ফুল বা কানের দুল খুঁজছেন।

তবে আসল বিষয় হচ্ছে- শুধু ওই নারীরাই নন, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী কয়েক হাজার মানুষ নদী থেকে নিয়মিত কয়লা তোলেন। এটিও এক ধরনের পেশা, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ কয়লা তুলে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে জীবন চালান তারা।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কূলঘেঁষা সীমান্তবর্তী নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর বুকের এমন দৃশ্য প্রতিদিনের।

সরেজমিনে গেলে সোমেশ্বরী নদীর বিভিন্ন ঘাট আর বালুচরে কর্মরত কয়লা শ্রমিকেরা জানান, উত্তোলিত কয়লা নদীতীরেই কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। পরে সেগুলো দেশের বিভিন্ন ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য পাঠানো হয়। কয়লা বিক্রি করে একেকজন দিনে ৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন।

কয়লা ব্যবসায় নিয়ম-নীতি বেধে দিলে শ্রমিকরা ন্যায্যমূল্য পাবেন, প্রচুর রাজস্ব আয়ও হতে পারে।  ছবি: বাংলানিউজশ্রমিকদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীদের কেনা কয়লা মণ হিসেবে নদীর পানিতে ধুয়ে দিয়েও জীবিকা নির্বাহ করেন অনেকে। তারাও দিনে হাজারখানেক টাকা আয় করে থাকেন।

কয়লা শ্রমিক খোপা মানকিন ও হুইলিস নকরেক বাংলানিউজকে জানান, চলতি বছরের দু’দফার অকাল বন্যায় পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে প্রচুর কয়লা নদীতে এসে জমেছে। ফলে অন্য বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ কয়লা পাওয়া যাচ্ছে। বন্যায় ক্ষতির ধাক্কার পর এতো কয়লা তুলতে পারায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্ট আর্থিক অভাব ও দৈন্যদশা মোকাবেলা করতে পারছেন বলেও মন্তব্য করেন তারা।

বালুচরের রোদে শুকিয়ে প্লাস্টিকের বস্তায় কয়লা রাখছিলেন বৃদ্ধা শ্রমিক জাহেরা খাতুন। তিনি জানান, সোমেশ্বরী নদীর পানির নিচে বা বালুচর খুঁড়লেই কয়লা পাওয়া যায়। যার যেখান থেকে খুশি ইচ্ছেমতো কয়লা তুলছেন।

জাহাঙ্গীর আলম জানান, নদী থেকে তোলার পর পরই পরিষ্কার না করে বিক্রি করলে মণপ্রতি ৪০০-৫০০ টাকা দাম আসে। তবে ভেজা কয়লা ধুয়ে পরিষ্কার করে ৬০০-৭০০ টাকা দরে বিক্রি করা যায়। আবার ভালোভাবে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার ও শুকিয়ে বিক্রি করলে ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পাওয়া যায়।

উত্তোলিত কয়লা নদীতীরেই কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন ইটভাটায় পাঠান ব্যবসায়ীরা।  ছবি: বাংলানিউজকোনো কোনো ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে ন্যায্যমূল্য না পাওয়া নিয়েও অভিযোগ রয়েছে কয়লা শ্রমিকদের। তারা জানান, কিছু ব্যবসায়ী নদী আর বালুচরে দিনভর অবস্থান করে প্রকৃত কয়লা ক্রেতাদেরকে শ্রমিকদের কাছে ভিড়তে বাধা দেন! ওই চক্রের লোকজন শ্রমিকদের ফাঁদে ফেলে কম দামে কয়লা কিনে চড়া দামে বিক্রি করেন।

তবে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় সরকারও মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে দাবি করেন রুহুল আমিনসহ সেখানকার স্থানীয় সচেতন বাসিন্দারা। তাদের মতে, প্রশাসন কয়লা ব্যবসায় নিয়ম-নীতি বেধে দিলে প্রচুর রাজস্ব আয় হতে পারে। এতে লাভবান হবে স্থানীয় প্রশাসন বা সরকার।

সোমেশ্বরী নদী থেকে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার কয়লা তোলা হয় বলেও দাবি স্থানীয়দের।

ইচ্ছেমাফিক কয়লা তোলা ও রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দিনের পর দিন ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রশীদ জানান, এসব বিষয়ে খুব শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।