ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প

প্রবল খরার কবলে দেশের চা শিল্প

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২০
প্রবল খরার কবলে দেশের চা শিল্প অব্যাহত খরার কারণে লাবণ্যহীন চা পাতাগুলো। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: প্রবল খরার কবলে পড়েছে বাংলাদেশের চা শিল্প। বাগানগুলোতে এখন প্রাকৃতিক বৃষ্টির জন্য হাহাকার। চলতি মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চায়ের সবুজ প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। দীর্ঘ অনাবৃষ্টিসহ প্রখর রৌদ্রতাপে ইতোমধ্যে কোনো কোনোটা বিবর্ণ রং ধারণসহ মারা পড়তে শুরু করেছে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন বাগানের চা গাছ।

গত বছর দেশের চা শিল্পের ১৬৫ বছরের ইতিহাসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের মাধ্যমে নতুন রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। উৎপাদন করেছিল ৯৬ দশমিক ০৭ মিলিয়ন কেজি অর্থাৎ ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজির কিছু বেশি চা।

এবার চায়ের মৌসুমটি খরা দিয়ে শুরু হলে চায়ের গড় উত্পাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্থানীয় আবহাওয়া অফিস থেকে পাওয়াও গেছে দুই বছরের বৃষ্টিপাতের তুলনামূলক পার্থক্য। আবহাওয়ার দৈনিক রেকর্ড করা পরিসংখ্যানও জানান দিচ্ছে চলতি বছরের মৌসুমটি চায়ের জন্য বৃষ্টিপাতহীন।  

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া সহকারী মো. জাহেদুল ইসলাম মাসুম বাংলানিউজকে বলেন, গতবছর ২০১৯ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চের তুলনায় চলতি বছর ২০২০ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চে বৃষ্টিপাতের হার অনেক কম। নবীন চা বাগানগুলোতে সেচের ব্যবস্থা।  ছবি: বাংলানিউজগতবছর জানুয়ারিতে কোনো বৃষ্টিপাত না হলেও ফেব্রুয়ারিতে ৪২ মিমি এবং মার্চে ৩৪ মিমিসহ মোট ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। আর চলতি বছর জানুয়ারিতে ২০ মিমি, ফেব্রুয়ারিতে শূন্য মিমি এবং মার্চ মাসে মোট ৪ মিমিসহ মোট ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তিনি মাসের বৃষ্টিপাত চার্ট তুলনা করে দেখা যাচ্ছে এবার বৃষ্টিপাতের হার কম বলে জানান আবহাওয়াবিদ জাহেদুল।

সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল উপজেলার একাধিক চা বাগান ঘুরে দেখা যায়, খরা থেকে চা গাছগুলোকে রক্ষা করতে ইরিগেশনের (সেচ) ব্যবস্থা করা হয়েছে। তীব্র রোদের উত্তাপ আর বৃষ্টিহীনতার কারণে ফ্যাকাসে হয়ে পড়া চা-গাছগুলো রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকির মাঝে। কোনো কোনো সেকশনের অপেক্ষাকৃত ক্ষতিগ্রস্ত চা-গাছগুলোর গোড়ায় কলসিতে করে পানিও দেওয়া হচ্ছে।   

বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান ও ফিনলে টি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) গোলাম মোহাম্মদ শিবলি বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৯৯ সালের পরে এবারই খুব বেশি খরা দেখা গেলো। এমন খরা অব্যাহত থাকলে আমাদের চা বাগানগুলোর কিছু কিছু চারা মারাও যাবে। এর পাশাপাশি যেগুলো থাকবে ওগুলো দুর্বল হয়ে পড়বে এবং কুঁড়ি আসতে দেরি হবে। চা-গাছে বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ দেখা দেবে। লাল মাকড়শার আক্রমণে চা-গাছের উপরের অংশ লাল হয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে চা উত্পাদনে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।

ইরিগেশন (সেচ) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইরিগেশন দিয়ে শতভাগ চা-গাছে পানি দেওয়া সম্ভব হয় না। এটা শুধুই ইয়াং টি (নবীন চা গাছ) গুলোকে খরার কবল থেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা। তাও পুরো সেকশন (চা বাগানের সুনির্দিষ্ট এলাকা) এর সব চা গাছগুলোকে ইরিগেশনের আওতায় আনা যায় না। এতে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ চা গাছে পানি দেওয়া যায়।

বৃষ্টিপাত সম্পর্ক তিনি আরো বলেন, আগামী মাসগুলোতে আবার যদি বেশি বৃষ্টিপাত হয় সেটিও কিন্তু চা বাগানের জন্য ক্ষতিকারক। ২০১৭ সালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছিল এবং মেঘাচ্ছন্ন ছিল বেশি কয়েকদিন ফলে আমাদের ক্রপ (ফসল উৎপাদন) অনেক কম হয়েছিল। বলে চা বাগানের গড় উৎপাদন কমে গিয়েছিল। তাই চা বাগানের জন্য পরিমিত রোদ এবং পরিমিত বৃষ্টিপাত দুটোই প্রয়োজন।  

প্রথম শ্রেণির চা বাগান ছাড়া সব বাগানগুলোতে আবার ইরিগেশনের সুব্যবস্থা নেই। এ বাগানের সংখ্যা খুবই কম। ফলে অন্য চা বাগানগুলোকে প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাতের উপরই পুরোপুরি ভরসা করে থাকতে হয় বলে জানান ফিনলে টি’র জিএম গোলাম মোহাম্মদ শিবলি।

বাংলাদেশ চা বোর্ড (বিটিবি) এর উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. মুনির আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যদি এপ্রিল-মে মাসে ভালো বৃষ্টিপাত পেয়ে যাই এবং চায়ের ক্রপ (উৎপাদিত ফসল) যদি ভালো চলে আসে তবে এটি অনেকটাই কাভার (পূরণ) হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২০
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।