ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প

ওয়েট ব্লু রপ্তানি হলে চামড়ায় ‘সুদিন ফিরবে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২০
ওয়েট ব্লু  রপ্তানি হলে চামড়ায় ‘সুদিন ফিরবে’

ঢাকা: মূল্য সংযোজনের লক্ষ্যে ১৯৯০ সাল থেকে প্রাথমিকভাবে প্রক্রিয়া করা পশম ছাড়ানো (ওয়েট ব্লু) চামড়া রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এরপরই ব্যবসায়ীরা আধুনিক যন্ত্রপাতি এনে চামড়া প্রক্রিয়াকরণের দ্বিতীয় ধাপ ‘ক্রাস্ট’ও তৃতীয় ধাপ ‘ফিনিশড লেদার’উৎপাদন শুরু করেন।  তবে ওয়েট ব্লু বন্ধ থাকার পর থেকে চামড়া ব্যবসায় ধস নামতে শুরু করে, এমনটা অভিযোগ পোস্তার আড়তদারদের।

তাদের মতে, কাঁচা চামড়া রপ্তানি না করে পুনরায় ওয়েট ব্লু চালু হলে আবারও চামড়া রপ্তানির পরিধি বাড়বে। দেশে আসবে চীন, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, জাপান ও স্পেনের মতো উন্নত রাষ্ট্রের ক্রেতারা।

আমাদের দেশ থেকে চামড়া কিনে ভারত ওয়েট ব্লু রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করলেও আমরা পারছি না। এটা করতে পারলে আমাদের দেশে এসে চামড়া কিনবে উন্নত রাষ্ট্রগুলো।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ঈদুল আজহায় মোট এক কোটি ১০ লাখের মতো পশু জবাই হয়। এগুলোর মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ গরু-মহিষ, বাকি পশুর মধ্যে ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ও উট।  ইপিবি’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪০ কোটি ডলারের চামড়া রপ্তানি হয়েছিল। সেটা চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১১ মাসে নেমেছে ৯ কোটি ডলারে।

চামড়া আড়তদাররা বলছেন, আমাদের দেশের ৮০ ভাগ চামড়া ভারতে চলে যাচ্ছে, সেই চামড়া বিশ্বে তারা রপ্তানি করছে। আমাদের দেশ থেকে চামড়া নিয়ে ভারত বহিঃবিশ্বে রপ্তানি করতে পারলে আমরা কেনো পারবো না। এজন্য সরকারের কাছে তারা আহ্বান জানান, ওয়েট ব্লু  চামড়া ৪০ ভাগ, ক্রাস্ট চামড়া ৪০ ভাগ এবং ২০ ভাগ ফিনিশড চালু করতে।

এটা করতে পারলে আবারও চামড়ার সুদিন ফিরে আসবে। তখন চামড়া নিয়ে কোনো সিন্ডিকেট কাজ করতে পারবে না। ট্যানারি মালিকদের কাছেও অর্থের জন্য যেতে হবে না। বিশ্বের বড় বড় দেশ থেকে বায়াররা এ দেশে এসে চামড়া কিনবে বলে জানান তারা।

পোস্তার আড়তদার বলছেন, এবারও ২৫০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। গত বছরের চামড়া বিক্রি বাবদ ট্যানারি মালিকদের দেয়া চেক আজও ক্যাশ হয়নি। গত বছরও একই অবস্থা ছিল, এ কারণে চামড়া কেনায় বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। এবারও ব্যাংকের সহযোগিতা আর ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা টাকা ফেরত না পেলে লাখ টাকার গরুর চামড়া ২০০ টাকায় বিক্রি হবে।

কথা হয় পোস্তায় আড়তদার সমিতি বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য, আড়তদার ও চামড়া ব্যবসায়ী মো. হুমায়নের সাথে। তিনি বলেন, ১৯৯০ সাল ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এর পর থেকে চামড়া শিল্পে দুরবস্থা তৈরি হয়েছে। আমাদের চামড়ার ৮০ ভাগ ভারত কিনছে, তারা আবার সে চামড়া রপ্তানি করছে, আমরা পারছি না। ওয়েট ব্লু না থাকায় স্পেন, জার্মানি, রাশিয়া, চীন, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, জাপানের মতো দেশের বায়ারদের হাতছাড়া করেছি। দেশে ওয়েট ব্লু  চামড়া ৪০ ভাগ, ক্রাস্ট চামড়া ৪০ ভাগ এবং ২০ ভাগ ফিনিশড চালু করতে পারলে আবারও চামড়ায় সুদিন ফিরবে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছ বকেয়া টাকা রয়েছে প্রায়,২৫০ কোটি টাকা। তারা বেশ কয়েক বছর ধরে বকেয়া পাওনা পরিশোধ করছেন না। গত বছর চামরা বিক্রি বাবদ ট্যানারি মালিকরা চেক প্রদান করলেও আজও তা ক্যাশ হয়নি। পাওনা টাকা আর ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভর করছে চামড়ার বাজার। আমাদের কাছে নগদ অর্থ নেই এখন ব্যাংক ঋণ পেলে চামড়া কিনতে পারবো নাহলে গত বছরের মতো হবে। লাখ টাকা মূল্যের গরুর চামড়ার দাম হবে ২০০ টাকা। কারন টাকা নেই আড়তদারদের কাছে।

অপর আড়তদার সাইফুল বলেন, সার্বিক বিষয় নিয়ে আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে চলতি সপ্তাহে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। প্রকৃত ব্যবসায়ীমহল সুবিধা পায়না, কিছু ব্যক্তি সরকারের সুবিধে নেয়। অথচ বিপদে পাশে থাকে না। তবে আমাদের চামড়া কেনার প্রস্তুতি আছে। এখন অর্থ পেলেই হবে, নাহলে বাজার মন্দা যাবে, চামড়া কেনা হবে না।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আফতাব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছরই আমাদের ট্যানারি ও ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়। গত বছর বকেয়া টাকা পেতে দেরি হওয়ায় একটা বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছিল। এবার আশা করি ট্যানারি ও ব্যাংক ঋণের সুবিধা পাবো।

তিনি বলেন, এক সময় ওয়েট ব্লু রপ্তানির অনুমতি ছিল। তখন এই পোস্তাতে বিশ্বের উন্নত দেশ যেমন স্পেন, ইতালি, রাশিয়াসহ আরও দেশ আসতো চামড়া কিনতে। এখন আর সেটা নেই, তবে ওয়েট ব্লু রপ্তানির অনুমতি পেলে সব সমস্যা দূর হবে। এতে খামারি, আড়তদার, ট্যানারি লাভবান হবে, বাড়বে রপ্তানি আয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘন্টা, জুলাই ১১, ২০২০
ইএআর/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।