ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

‘সামনের মশা দেখে, পেছনে হাতির সর্বনাশ দেখে না এনবিআর’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৩
‘সামনের মশা দেখে, পেছনে হাতির সর্বনাশ দেখে না এনবিআর’ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার: ফাইল ফটো

ঢাকা: আমাদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চোখের সামনে দিয়ে মশা যায় সেটা খুব ভালো করেই দেখে, কিন্তু পেছন দিক দিয়া যে হাতি এসে সর্বনাশ করে দিচ্ছে সেটা দেখে চোখে পড়ে না-দেশে উৎপাদিত মোবাইল হ্যান্ডসেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার বিষয়ে এমন মন্তব্য করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, সেটি না দেখে কেবলমাত্র রাজস্ব আহরণের দিকে তাকানো শেখ হাসিনার সরকারের নীতিতে নেই।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) রমনায় বিটিআরসি মিলনায়তনে জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষে ‘অ্যাফোর্ডেবল স্মার্ট ডিভাইসেস’শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিলি বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। প্রতিপাদ্যের ওপর উপস্থাপনা করেন বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা অ্যাফোর্ডেবল স্মার্ট ডিভাইসের কথা বলছি-আসলে বিষয়টা এরকম যে এখন আমাদের বিষয়টা গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট ডিভাইস চাই। ডিভাইস অ্যাভেইলবলের চেয়ে বড় কথা অ্যাফোর্ডেবল। ডিভাইস যাতে পাওয়া যায়, জনগণ যাতে নিতে পারে সেই জায়গায় গুরুত্ব দেওয়ার জায়গা। আমার কাছে মনে হচ্ছে ডিভাইসের প্রয়োজন তৈরি করা দরকার সবার আগে। আমার একটা বাজার তৈরি করা দরকার এবং তার সঙ্গে ডিভাইসকে অ্যাভেইলেবলের মধ্যে এনে অ্যাফোর্ডেবল করা দরকার।

তিনি বলেন, আজকে আমরা যে স্মার্ট ডিভাইসের কথা বলছি, আমি স্মার্ট ডিভাইস হিসেবে স্মার্টফোন এবং স্মার্ট ডিভাইসের পাশাপাশি কম্পিউটারকেও আমাদের ইগনোর করার কোনো সুযোগ নেই। আমি স্মার্ট ডিভাইসের আওতায় স্মার্টফোনের সঙ্গে স্মার্ট কম্পিউটারকেও বলবো। এটাকে আমি গুরুত্ব দিতে চাই।

দেশে উৎপাদিত মোবাইল হ্যান্ডসেটের বাজার প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ম্যান্যুফ্যাকচারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুহুল আলম আল মাহবুব। ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় সক্ষমতার ৩০ শতাংশের বেশি হ্যান্ডসেট তৈরি করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

দেশে উৎপাদিত মোবাইলে ভ্যাট আরোপের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এখন মোবাইল ফোন বেচতে হলে আমাকে একটা ভ্যাট দিতে হয়। এটা কিন্তু আমাদের সরকারের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। আমি কম্পিউটার বেচলে ভ্যাট দেই না, আমি ফোন বেচলে ভ্যাট দেব-এটার আসলে যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। বরং আমি তুলনামূলকভাবে দেখি তাহলে আমার ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিশন বা স্মার্ট বাংলাদেশের ভিশনের হাতিয়ার হিসেবে যেমনি করে আমি কম্পিউটার ডিভাইসকে দেখছি, তার চাইতে বোধ হয় একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফোন ডিভাইসকে দেখতে হবে। তার কারণ হচ্ছে ফোন আমার কাছে অনেক বেশি অতি আবশ্যকীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে। এটি কোনো অবস্থাতেই এখন আর বিলাস পণ্য না অথবা শখ করে আমি এ পণ্য কিনছি সে জায়গা না।

এনবিআরের সমালোচনা করে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, আমাদের ওপরে একটি প্রবণতা কাজ করে সেটি হচ্ছে- আমাদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চোখের সামনে দিয়া মশা যায় সেটা খুব ভালো করেই দেখে কিন্তু পেছন দিক দিয়া যে হাতি এসে সর্বনাশ করে দিচ্ছে সেটা দেখে চোখে না। যদি দেখা হতো তাহলে ফোন বিক্রির ওপরে ৫ পার্সেন্ট ভ্যাট থেকে ১৫ পার্সেন্ট ভ্যাট পর্যন্ত যাওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ অন্তত আমি দেখি না।

মন্ত্রী বলেন, একটা ফোন একজন মানুষের হাতে যাওয়ার পরে জিডিপিতে যে পরিমাণ প্রভাব বিস্তার করে, আমি সেই প্রভাবের কথা দেখতে পাবো না শুনতে পাবো না, আমি কেবলমাত্র রাজস্ব আহরণের দিকে তাকাবো এটা কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারের নীতি তার সেই ছিয়ান্নবই সরকারের ছিল না, এখনকারও ছিল না। আমি অনুরোধ করবো, বিষয়গুলোকে বহুবার বলেছি আবারও বলবো যে আমার জাতীয় পর্যায়ের যে অগ্রগতির সহায়ক সে সহায়ককে কোনো অবস্থাতেই বাধাগ্রস্ত করাটা আমাদের জন্য ঠিক হবে না।

দেশে স্মার্টফোন ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, তাদের কাছে অনুরোধ করবো আপনারা একই সঙ্গে কম্পিউটার ম্যান্যুফ্যাকচারিয়ংয়ের দিকেও যান। পৃথিবীর কোনো দেশ যন্ত্রপাতি বা আনুষঙ্গিক নিজেরা সব তৈরি করে না। অন্যদের তৈরি করা জিনিস হয়। আমাদের দেশে যদি ১৫টা ফ্যাক্টরি ১৫টা কম্পোনেন্ট তৈরি করতে পারে সেটাও কিন্তু সহায়ক হতে পারে। আমরা আমদানি করে সংযোজন করছি এটাও কিন্তু বড় ধরনের শুরু। ম্যান্যুফ্যাকচারিয়ংয়ের প্রথম সূচনা অ্যাসেম্বিলিংয়ের মাধ্যমেই হয়।

স্মার্টফোন ম্যানুফ্যাকচারিংয়েরকারীদের পক্ষে কালোবাজারীর প্রভাব তুলে ধরা মন্ত্রী বলেন, স্মাগলিং যেকোনো ম্যান্যুফ্যাকচারিয়ং ইন্ডাস্ট্রির জন্য ক্ষতিকর। যারা ভ্যাট আরোপ করেছেন তাদের দায়িত্ব স্মাগলিং বন্ধ করা। যারা ভ্যাট আদায় করতে গেলেন আর স্মাগলিং উৎসাহিত হলো, সেই জায়গায় দুইটা দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেই দায়িত্ব পালন না করার ফলে আমাদের যে ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ জায়গা আসলে আমাদের উদ্ধার করা দরকার।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণে তার ও সচিবের ভূমিকা থাকবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আপনি ডিভাইস দিচ্ছেন কিন্তু ডিভাইস ব্যবহার করার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, সব জায়গায় কনটেন্ট তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে। আমি কেবলমাত্র টেকনোলজি বা ডিভাইস দিলাম কিন্তু তার প্রয়োজন অনুযায়ী কনটেন্ট দিতে পারলাম না তাতে কিন্তু এটা সম্প্রসারিত করতে পারবো না।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৩
এমআইএইচ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।